
ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম বরাদ্দের ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট মানুষসহ অনেকেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রথমে ১০ বছর পরবর্তীতে ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিকট ইজারা দেয়া হয়েছে। এমন অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের সকল ক্লাব ও ক্রীড়ামোদী জনগণ হতবাক ও মর্মাহত।
৩ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে জুলাই স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ক্লাব প্রতিনিধিদের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্লাব সমূহের পক্ষে এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী এসব কথা জানান।
তিনি জানান, ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে বাফুফে’র নিকট ইজারা/লীজ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে ক্রীড়ামোদী জনগণের পক্ষে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার নিকট চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক একটি সংশোধনী পত্র প্রেরণ করেছে, যাতে চট্টগ্রামে সকল ক্রীড়া কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বাফুফের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। যা কোন ভাবেই চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোদী জনগণের কাম্য নহে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণের নিজস্ব অর্থায়নে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের মাঠ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনেই থাকবে। অন্য কারো তত্ত্বাবধানে থাকা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।
হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার সকল পর্যায়ের ক্রীড়ানুরাগী, ক্রীড়াসংগঠক, ক্রীড়াবিদ, পেশাজীবি সংগঠকবৃন্দ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অবগত হয়েছে যে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চট্টগ্রামের ক্রীড়াংগনের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় না করে শুধুমাত্র একটি খেলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে আগামী ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে থাকা এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ প্রদানের অনাকাংখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা বৃহত্তর চাট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম মাতৃকায় ক্রীড়াবিদদের চারণভূমি খ্যাত এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামটিতে ফুটবল, ক্রিকেট সহ অন্যান্য প্রায় ৩০ টি খেলা অনেক বছর যাবত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া প্রেমিকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাকিস্তান আমলে এই মাঠটিতে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়।
এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামটি বহুমাত্রিক ক্রীড়া কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ মাঠ থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার সুনীল কৃষ্ণ দে, দিলীপ বড়ুয়া, ইউসুফ বলি, জসিম উদ্দীন আহমদ, কিংবদন্তি আশীষ ভদ্র, এজহারুল হক টিপু, এফ, আই, কামাল, মমিনুল ইসলাম খসরু, পান্না লাল নন্দী, মামুনুল ইসলাম মামুন, মো: আসাদ, মো: কায়সার, মো: ফরহাদ, মো: আনোয়ার এর মত ফুটবলার যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ক্রিকেটে শফিকুল হক হীরা, নুরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, শহিদুল ইসলাম, ফজলে বারী খান রুবেল, আজম ইকবাল, নাফিস ইকবাল, তামিম ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিমউদ্দীন, হকিতে আজিজুর রহমান সেলিম, মো: হারুন, মো: মহসিন, অ্যাথলেটিকসে আবদুল আওয়াল, মিলজার হোসেন, মিসেস আজিজা খানম, মিসেস শর্মিষ্ঠ্য রায়, সোহেল সরওয়ার, হ্যান্ডবলে এনামুল হাসান, অভিজিৎ বড়ুয়া, রনি দত্ত ভলিবলে ইসমাইল কুতুবী, মো: রফিক সহ অন্যান্য খেলার অনেক জাতীয় খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে এবং ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লীগে অংশগ্রহণ করে আসছে।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুইটি স্টেডিয়াম যথাক্রমে এম. এ. আজিজ স্টেডিয়াম ও জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়াম রয়েছে। জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন খেলার জন্য গঠিত উপ-কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, কাবাডি, রাগবি, খো খো, আর্চারী সহ প্রায় ৩০টি ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, এছাড়াও এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত খেলা ব্যতিরেকে চট্টগ্রাম জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সকল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল লীগ টুর্নামেন্ট সহ অন্যান্য খেলার সাথে সমন্বয় করে সফলতার সাথে আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও এ মাঠটিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লীগ টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে আরো জানান, জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে ক্রিকেট, টি-২০ ক্রিকেট এবং জাতীয় ক্রিকেটের দল সমূহের অনুশীলনও এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে। ফুটবল খেলা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে মাঠটি বরাদ্দ প্রদান করা হলে ফুটবল ছাড়া অন্যান্য ৩০টি খেলার স্থানীয় লীপ/ টুর্নামেন্ট এবং এইসব ইভেন্টের অনুশীলন কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে।