
শেখ সুমন আহম্মেদ :
মিয়ানমারের রাখাইনের যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তবে রাখাইনের যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনই করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়েছিলাম তাদের মুখ থেকে কথা আসুক। জান্তা সরকার আড়াই লাখের মধ্যে তারা এক লাখ ৮০ হাজার তারা ক্লিয়ার করেছে এবং বাকি ৭০ হাজারকে তারা রিভিউ করছে।
আমরা সেই সঙ্গে তাদের কাছে আরও দাবি জানিয়েছি, আরও ৭-৮ লাখ যেটা আছে সেটা যেন তারা ত্বরান্বিত করে। এই তালিকা অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে মানে এই নয় যে, কালকেই তারা চলে যেতে পারবে।
প্রত্যাবাসন নির্ভর করবে গ্রাউন্ড রিয়ালিটির ওপর। রাখাইনে বাস্তব যে অবস্থা প্রেক্ষাপট আমরা জানি। এমন অবস্থায় তাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে যেন তারা সেই দেশে পারি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিবে বলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছিল । চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল। এরপর প্রত্যাবাসন কবে শুরু হবে, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি । পরে প্রত্যাবাসনও শুরু করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি । সে সময় রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজ জমিতে ফেরার নিশ্চয়তাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছিল।
ওই সময় কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমারবিষয়ক দূত ইয়াংহি লি জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি স্বেচ্ছায় হতে হবে।
তারপর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চীনের মধ্যস্থতায় ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেসময় তার অংশ হিসেবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল।
কেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করে ডিসেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ আছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে। তার মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। তথ্য বলছে গত প্রায় আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।