মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ
সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার।।
সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টাকার অভাবে চিকিৎসার অবহেলায় রাকিব হোসেন -২০- নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কসহ শতাধিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও নয় দফা দাবি করেন।
শনিবার -১৭ আগস্ট- বিকেলে সাভার থানা রোডে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে- শুক্রবার রাত ১টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি ইউটার্নে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় রাকিব। পরে শনিবার সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
নিহত রাকিব আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার হারুন অর রশীদের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার বোরাক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন।
নিহত রাকিবের বন্ধু আশুলিয়া এআরআই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আলিফ বলেন, শুক্রবার তিনটি মোটরসাইকেলে করে আমরা ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। পরে রাতে দেড়টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে রেড়িও কলোনিতে এসে দেখি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাকিবের মোটরসাইকেলে আরেক বন্ধু মারুফ ছিল। ওরা দুইজন রাস্তায় পড়ে আছে।
তিনি বলেন- এরপরে রাত ২টার দিকে ওদের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। কিন্তু ওদের টাকার জন্য ভর্তি নিচ্ছিল না। ওষুধ কেনার টাকা ছিল না আমাদের কাছে। তখন আমরা মোটরসাইকেলের চাবি ও মোবাইল ফোন দিতে চেয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতেও রাজি হয়নি। পরে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ওদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। রাকিবকে আইসিউতে নিলেও চিকিৎসকরা অবহেলা করেছে। পরে রাকিব সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে মারা যায়।
নিহতের বড় ভাই হাবিবুর রহমান বলেন- চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেছে। শুরু থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকার জন্য অবহেলা করছিল। পরে আইসিইউতে ভর্তির পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একজন চিকিৎসকও আমার ভাইকে দেখতে যায়নি।
এদিকে- রাকিবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন। যাদের অনেকেই রাকিবের বন্ধু ছিলেন। তারা হাসপাতালে মরদেহ রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রাকিব হত্যার বিচার- হত্যার সঙ্গে জড়িত সব চিকিৎসক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া- চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা বন্ধ করা- আগে টাকা পরে সেবা এই নিয়ম বাতিল করা- রোগী ভর্তি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা এবং অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করার দাবি ছিল উল্লেখযোগ্য।
এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক রওশন আক্তার চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন- রাকিবের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা হয়ে থাকলে তদন্ত করে আমরা দায়ী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিও পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে।