বিশেষ প্রতিবেদক।।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা যখন জেলা উপজেলায় ঘুরে ঘুরে আন্দোলনের সময় আহত ও নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে ঠিক তখন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গ্রামেগঞ্জে ঘুরছেন তাদের শক্তি ও সমর্থন বৃদ্ধির জন্য। একইসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের একাটা অংশ আওয়ামী লীগ নেতাদের ফেলে যাওয়া কর্মীদের সাথে নিয়ে চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কেউ কেউ আবার বৈষম্য বিরোধী সমন্বয়কদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ব্যস্ত। আবার ভদ্র সুশীল শ্রেনীর কিছু বিএনপি নেতারা পদপদবির লোভে স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা- ভিত্তিহীন বা অনেক পুরাতন কোনো অভিযোগ খুঁজে বের করে তা দিয়ে দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এরকম ঘটনায় জলাশয় ভরাট ও বাড়ি দখলের অভিযোগে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এর দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। আরো কয়েকজন রয়েছেন তোপের মুখে। এই মুহূর্তে তারা মুখে কুলুপ এঁটে গৃহবন্দী জীবন যাপন করছেন। তারউপর রয়েছে ভারাক্রান্ত যুবদল। গত প্রায় ১০ বছর ধরেই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে বরিশাল মহানগর যুবদল। আর ছাত্রদলের আপাদমস্তক নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার দাবী মহিলাদলসহ অংগসংগঠনের। সবমিলিয়ে বরিশালের রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে কোথাও সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ভাবনা খুঁজে পাওয়া যায়নি এতটুকু। গত পনের বছর আওয়ামী দুঃশাসনে মুখ বুঝে ছিলেন এরা। ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের পর এই চিত্র এতটুকুও বদলায়নি। নিত্য পন্যের দাম- বাজার দর- গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ কোনো বিষয়েই সাধারণ মানুষ পাশে পায়নি রাজনৈতিক কাউকে।
বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধীক মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়, তাদের পরিস্থিতি নিয়ে কিছুই জানেনা বরিশাল জেলা বা মহানগর বিএনপি। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বরিশালে নিহত ও আহতদের কোনো পরিসংখ্যানই নেই জেলা বা মহানগর বিএনপির কাছে। তবে নিজেদের ভিতর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্বীকার করেন একাধিক নেতা। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বললেন, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের সাথে যারাই জড়িত তাদের পিছনে ও পাশে আওয়ামী লীগের ভুত রয়েছে এখনো। দলীয় চেয়ারম্যানের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও যারা এসব কাজ করছেন তাদের আর সতর্ক করা হবেনা। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। মহানগর কমিটির রিপোর্টই এজন্য যথেষ্ট বলে জানান মনিরুজ্জামান ফারুক।
যদিও সাধারণ কর্মীদের কাছে মনিরুজ্জামান ফারুক জাতীয় পার্টি থেকে আসা একজন নেতা। তাকে সৎ ও তবে কর্মঠ দাবী করলেও তিনি নির্ঝঞ্ঝাট টাইপের মানুষ এবং নেতৃত্বের জন্য পারফেক্ট নয় বলে জানালেন অনেকেই।
বেশ কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীদের বিশ্লেষণ হচ্ছে- জেলা বা মহানগরের শীর্ষ নেতাদের সাথে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ব্যাপক দূরত্ব। কাউকে একটু মহানগর আওতাধীন এলাকা সদর উপজেলার গ্রামে যেতে বলেন- তাহলেই স্পষ্ট হবে তাদের জনপ্রিয়তা। আবার বরিশাল
মহানগর সদস্য সচিব জিয়া সিকদারকে নিয়ে রয়েছে নানাবিধ বিতর্ক। কেউ কেউ বলেন, তার মূল লক্ষ্য বাস টার্মিনাল দখল। ছাত্রদলের সভাপতি রনিকে দিয়ে কাজ করায় সে- সম্ভব হলে ছাত্রলীগের সবাইকে তার দলে নিয়ে নেবে যেকোনো সুযোগে। আর তার পিছনে বরিশালের রাজনৈতিক মাঠ দখল করতে সচেতন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। পাশাপাশি বাস টার্মিনাল দখলে নিজ ভাইদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ বিএনপির বরিশালের শীর্ষ নেতা কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। বরিশাল জেলা বিএনপির মেসবাহউদ্দিন ও আবুল হোসেনকে অবজ্ঞা করেই চলে এখানের মহানগর বিএনপি। যে কারণে জেলার সাথে কখনোই যৌথ কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন আজপর্যন্ত চাক্ষুষ নয় বরিশালে। তাছাড়া বয়সের ভাড়ে ভারাক্রান্ত এ দুজন নেতাও এখন ২৪ এর নব বাংলাদেশের জন্য অযোগ্য বলে দাবী অনেকেরই। বরিশাল যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ভারে ভারাক্রান্ত। তবে এখানের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত কোনো সংকট বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদিও ১২ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদলের কার্যক্রমে হতাশ হয়েছে বরিশালবাসী।
উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর বাজার দখলের চেষ্টায় ইজারাদার বাচ্চু ও তার পরিবারের তিন সদস্যকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে উজিরপুর যুবদলের মিজান ও আনিচ ফকির। বাচ্চু ইজারাদার হলেও সে একজন সংবাদ কর্মী এবং জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি। এদিকে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ভূমিকা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ বরিশালে। ছাত্রদলের আপাদমস্তক নেতৃত্বের পরিবর্তন জরুরী বলে দাবী করেছেন বরিশাল বিএনপির মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা বেগম।
সাধারণ কর্মী ও সমর্থকসহ গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে তারপরও বিএনপি ও দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর স্থান অনেক উঁচুতে। তারেক রহমান এর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করেন বরিশালের সাধারণ মানুষ। তাদের বেশিরভাগ অংশের দাবী- বরিশালের মাঠ পর্যায়ের বিএনপি সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলুক তারেক রহমান। মহানগর ও জেলা বিএনপি তাকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন অনেকে। তারা বলেন- বরিশালে এই মুহূর্তে একজনও বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য লোক নেই। নেতৃত্বে যারা আছেন- তারা নিজেরাই নিজেদের কথা শোনেন না বলে জানান সাধারণ মানুষ ও গ্রাম পর্যায়ের বিএনপি সমর্থকরা।