Dhaka , Sunday, 16 March 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
হাতিয়াতে বিএনপি নেতা শামীমকে প্রত্যাখানের ঘোষণা, কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ প্রভাবশালী কর্তৃক ব্যবসায়ীর বাসা দখলের অভিযোগ কক্সবাজার জেলা সিএনজি, অটোরিক্সা, টেম্পু সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন এর নব-নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান-সম্পন্ন ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত দুর্গাপুর পৌর বিএনপির ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ড শাখার উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত বেতাগী ঢাকাস্থ ফোরামের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় রূপগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে পাইকগাছা উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন  পাইকগাছায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন রামগঞ্জে প্রবাসীর ঘরে চুরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও কম্বল লুট চট্টগ্রাম প্রবাসী ক্লাব লিমিটেডের উদ্যোগে প্রবাসী পরিবারদের মাঝে নগদ অর্থ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ জাতীয়তাবাদীর শক্তি জনগণ এবং জনগণের বন্ধু জাতীয়তাবাদীর শক্তি- অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন নরসিংদীর পলাশে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু গভীর রাতে পুলিশের অভিযানে ৭ জুয়ারি গ্রেফতার  দেশের সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ি- ড. মঈন খান রামগঞ্জ দেড়শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে চাল বিতরণ  পদ্মা নদীতে নৌ পুলিশের অভিযানে তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার কক্সবাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গু*লি করে সমন্বয়কের পিতাকে খু*ন  নোয়াখালীতে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী গ্রেপ্তার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দীয়াডাংগা সীমান্তে অস্ত্র ও মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক স্কুল ছাত্রী নিহত ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গাজীপুরে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ৩ কোস্টগার্ডের অভিযানে হরিণের মাংসসহ শিকারী আটক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, স্কুলে পাওয়া গেলো গোপন কক্ষ আছিয়ার ধর্ষকের সর্বচ্চো শাস্তি প্রকাশ্যে ফাসির দাবিতে ভূরুঙ্গামারীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এর মানব বন্ধন রামগঞ্জে তথ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানায় খেজুর বিতরণ রূপগঞ্জে সাত বছরের শিশু ধর্ষণের চেষ্টা ৫ হাজার টাকায় ধামাচাপার রফাদফা ফরিদপুরে সদর উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডে তিনটি গরুর মৃত্যু কক্সবাজারে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই যুবক আটক করেছে ডিএনসি

গ্রীন রেলওয়ে- আগামীর প্রতিশ্রুতি

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 02:40:00 pm, Wednesday, 5 March 2025
  • 18 বার পড়া হয়েছে

গ্রীন রেলওয়ে- আগামীর প্রতিশ্রুতি

রেজাউল করিম সিদ্দিকী

  

দেশের গণপরিবহন মাধ্যমসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের রেলওয়ে সরকারের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় পরিবহন খাত। এ দেশে প্রথম রেলওয়ের সূচনা হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা- জগতি রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৮৭৭ কিঃমিঃ রেল লাইন নেটওয়ার্ক দেশের ৪৪টি জেলায় সংযুক্ত। ১৯৪৭ সালের পূর্বে অবিভক্ত ভারতবর্ষে রেলওয়ে বোর্ডের মাধ্যমে তৎকালীন রেলওয়ে পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ সালে বোর্ডের কার্যক্রম বিলুপ্ত করে একে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে রেলপথ বিভাগ গঠন করা হয়। রেলপথ বিভাগের সচিব, ডিজি কাম সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি -বিআরএ- গঠন করা হয়। তবে গঠিত বিআরএ এর কার্যক্রম পরবর্তীতে অব্যাহত থাকেনি। ১৯৯৬-২০০৩ সময়কালে এডিবি এর অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও রেলপথ বিভাগ হতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গণমানুষের চাহিদা ও সময়ের দাবীতে ২৮ এপ্রিল ২০১১ তারিখ সরকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রেলপথ বিভাগ নামে নতুন বিভাগ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ০৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। Allocation of Business অনুসারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যাবলী : রেলওয়ে এবং রেল পরিবহন ও নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণ ও কৌশল প্রণয়ন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ রেল সংক্রান্ত পরিবহন মাধ্যমসমূহের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন, রেল পরিবহন সংক্রান্ত জরিপ ও পরিবীক্ষণ, রেল পরিবহনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক রেলপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাড়া ও টোল নির্ধারণ এবং পুননির্ধারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রোগ্রামসমূহ এবং বাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনা ইত্যাদি।

মোট ২৫০৮৩ জন নিয়মিত কর্মচারী ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২৯৫৫.৫৩ কি:মি: রুট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন রুটে বর্তমানে ১২২ টি আন্তনগর এবং মেইল ও কমিঊটার মিলে প্রতিদিন মোট ৩৯১টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের বেশীর ভাগের অকুপেন্সী ১০০% এর বেশি। আন্তনগর ট্রেনে প্রতিদিন মোট প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার ও অন্যান্য মিলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখেরও বেশী যাত্রী যলাচল করে যা থেকে রেলের প্রতি দিনের গড় আয় আট কোটি টাকারও বেশী। এছারা পণ্য পরিবহনের মাধ্যমেও রেল বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকে।

গত ১৫ বছরে রেলের অবকাঠামো খাতে ব্যয় হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৮৯টি প্রকল্পে ব্যায় হয় ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং চলমান ৩২টি প্রকল্পে বছর এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত খরচ ৬৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এসময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। গত দশ বছরে রেলের উন্নয়নে ২০ হাজার কোট টাকা বিনিয়োগ করা হলেও রেলের কোচ -বগি- যাত্রী অনুযায়ী বাড়েনি। এজন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমান যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এ সমস্যা স্মাধানে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে সংশ্লষ্টদের অভিমত। আশার কথা হলো রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে রেলের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যারেজ -বগি- ও লোকোমোটিভ -রেল ইঞ্জিন- সংগ্রহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকোমোটিভ ও ক্যারেজ বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত করা যায় তবে রেল তথা সরকারের আয় যেমন বাড়বে, সাধারণ যাত্রীরাও তেমনি অধিক হারে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ ও সাশ্রয়ী ভ্রমনের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে সড়কে যাত্রী পরিবহন হ্রাস পাবে। যেহেতু সড়কপথের চেয়ে রেলপথে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ও হার কম, তাই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীও কমবে উল্লেখযোগ্য হারে।

সম্প্রতি পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা-যশোর-বেনাপোল রুটে ত্রেন চলাচল চালু হওয়ায় এ রুটে যাত্রার খরচ ও সময় প্রায় অত্তধেকে নেমে এসেছে। পূর্বে ঢাকা থেকে রেলযোগে খুলনা যেতে হলে যমুনা সেতু –ইশ্বরদী হইয়ে যেতে হতো। ফলে দীর্গ ৬৫৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে যাত্রীদের আট ঘন্টারও বেশী সময় লেগে যেতো। এতে প্রত্যেক যাত্রীকে ভাড়া বাবদ টাকাও দিতে হতো অনেক বেশি। বর্তমানে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে খুলনা যেতে সময় লাগছে মাত্র পৌনে চার ঘন্টা। যাত্রী প্রতি সকল শ্রেণির আসনে ভাড়াও কমেছে প্রায় পঞ্চাশ সতাংশের কাছাকাছি। এছারা যনুনা রেলসেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের সকল ট্রেনের যাত্রার সময় কমেছে ১৫ মিনিটেরও বেশি। অন্যান্য রূটেও বিভিন্ন সংস্কার, মেরামত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের ফলে রেলযাত্রা হয়েছে পুর্বের চেয়ে অনেক আরামদায়ক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দ্রুত। ফলে রেল যাত্রায় যাত্র*ঈ চাহিদা অনেক বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এ চাহিদা আরো কয়েকগুন বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

নিরাপদ, বিশ্বস্ত, আরামদায়ক এবং তুলনামূলক কম খরচে দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় রেলওয়েকে Green Transport হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মাধ্যমে কম জ্বালানী ব্যবহার করে অধিক সংখ্যক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা যায়। টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্যই হলো পরিবেশকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাকে বিনষ্ট না করে উন্নয়ন সাধন করা। রেল পরিবহন প্রকল্প গ্রহণকালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহনশীলতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসেবে কতিপয় বিষয় যেমন প্রকল্পটি Wild Air. Salinity, Erosion, Land/Mud slide, Flood, Earth Quake, Lightning জনিত ক্ষতি সহনীয় কিনা তা বিবেচনা করা। তাছাড়া Electrical Equipment Tele-communication কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ/বাধাগ্রস্থ হবে কিনা অথবা Thermal Expansion এর কারণে Bridge Join ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা তাও বর্তমানে লক্ষ্য করা হচ্ছে। রেল লাইনের দুই ধারে বনায়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া Solar Energy উৎপাদনের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সকল অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশগত বিষয়সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হাতি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার জন্য Elephant Pass স্থাপন করা হয়েছে। কার্বন নি:সরণ কমানোর লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণ, পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ ও নতুন Rolling Stock সংগ্রহ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে লোকোমোটিভ সংগ্রহের ক্ষেত্রে Tier-II এবং তদূর্ধ্ব specification সম্পন্ন লোকোমোটিভ এবং বায়োটয়লেট সুবিধাবিশিষ্ট কোচ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে Technical Assistance for Green Transport Project Preparation Facility শীর্ষক একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলদেশ রেলওয়ে ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকশন প্রণয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তিত হলে যাত্রা সময় ও খরচ যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালুকরণের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোও সম্ভব হবে। পূর্বাঞ্চলে Meter Gauge এবং পশ্চিমাঞ্চলে Broad Gauge রেল ট্র্যাক ইতোমধ্যে Dual Gauge এ Conversion করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকারি অর্থায়নে বিশদ নক্সাসহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর লাইনে ইলেট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনসহ Electric Multiple Unit -EMU- ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে টংগী থেকে চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসাম -Chord line- লাইনে ইলেট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া, অন্যান্য লাইনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষাকালে ইলেট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে রেল ইঞ্জিনের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে, মানুষ কম খরচে স্বল্পতম সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌছাতে পারবে। 

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

হাতিয়াতে বিএনপি নেতা শামীমকে প্রত্যাখানের ঘোষণা, কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

গ্রীন রেলওয়ে- আগামীর প্রতিশ্রুতি

আপডেট সময় : 02:40:00 pm, Wednesday, 5 March 2025

রেজাউল করিম সিদ্দিকী

  

দেশের গণপরিবহন মাধ্যমসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের রেলওয়ে সরকারের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় পরিবহন খাত। এ দেশে প্রথম রেলওয়ের সূচনা হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা- জগতি রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৮৭৭ কিঃমিঃ রেল লাইন নেটওয়ার্ক দেশের ৪৪টি জেলায় সংযুক্ত। ১৯৪৭ সালের পূর্বে অবিভক্ত ভারতবর্ষে রেলওয়ে বোর্ডের মাধ্যমে তৎকালীন রেলওয়ে পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ সালে বোর্ডের কার্যক্রম বিলুপ্ত করে একে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে রেলপথ বিভাগ গঠন করা হয়। রেলপথ বিভাগের সচিব, ডিজি কাম সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি -বিআরএ- গঠন করা হয়। তবে গঠিত বিআরএ এর কার্যক্রম পরবর্তীতে অব্যাহত থাকেনি। ১৯৯৬-২০০৩ সময়কালে এডিবি এর অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও রেলপথ বিভাগ হতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গণমানুষের চাহিদা ও সময়ের দাবীতে ২৮ এপ্রিল ২০১১ তারিখ সরকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রেলপথ বিভাগ নামে নতুন বিভাগ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ০৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। Allocation of Business অনুসারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যাবলী : রেলওয়ে এবং রেল পরিবহন ও নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণ ও কৌশল প্রণয়ন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ রেল সংক্রান্ত পরিবহন মাধ্যমসমূহের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন, রেল পরিবহন সংক্রান্ত জরিপ ও পরিবীক্ষণ, রেল পরিবহনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক রেলপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাড়া ও টোল নির্ধারণ এবং পুননির্ধারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রোগ্রামসমূহ এবং বাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনা ইত্যাদি।

মোট ২৫০৮৩ জন নিয়মিত কর্মচারী ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২৯৫৫.৫৩ কি:মি: রুট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন রুটে বর্তমানে ১২২ টি আন্তনগর এবং মেইল ও কমিঊটার মিলে প্রতিদিন মোট ৩৯১টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের বেশীর ভাগের অকুপেন্সী ১০০% এর বেশি। আন্তনগর ট্রেনে প্রতিদিন মোট প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার ও অন্যান্য মিলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখেরও বেশী যাত্রী যলাচল করে যা থেকে রেলের প্রতি দিনের গড় আয় আট কোটি টাকারও বেশী। এছারা পণ্য পরিবহনের মাধ্যমেও রেল বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকে।

গত ১৫ বছরে রেলের অবকাঠামো খাতে ব্যয় হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৮৯টি প্রকল্পে ব্যায় হয় ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং চলমান ৩২টি প্রকল্পে বছর এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত খরচ ৬৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এসময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। গত দশ বছরে রেলের উন্নয়নে ২০ হাজার কোট টাকা বিনিয়োগ করা হলেও রেলের কোচ -বগি- যাত্রী অনুযায়ী বাড়েনি। এজন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমান যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এ সমস্যা স্মাধানে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে সংশ্লষ্টদের অভিমত। আশার কথা হলো রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে রেলের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যারেজ -বগি- ও লোকোমোটিভ -রেল ইঞ্জিন- সংগ্রহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকোমোটিভ ও ক্যারেজ বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত করা যায় তবে রেল তথা সরকারের আয় যেমন বাড়বে, সাধারণ যাত্রীরাও তেমনি অধিক হারে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ ও সাশ্রয়ী ভ্রমনের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে সড়কে যাত্রী পরিবহন হ্রাস পাবে। যেহেতু সড়কপথের চেয়ে রেলপথে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ও হার কম, তাই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীও কমবে উল্লেখযোগ্য হারে।

সম্প্রতি পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা-যশোর-বেনাপোল রুটে ত্রেন চলাচল চালু হওয়ায় এ রুটে যাত্রার খরচ ও সময় প্রায় অত্তধেকে নেমে এসেছে। পূর্বে ঢাকা থেকে রেলযোগে খুলনা যেতে হলে যমুনা সেতু –ইশ্বরদী হইয়ে যেতে হতো। ফলে দীর্গ ৬৫৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে যাত্রীদের আট ঘন্টারও বেশী সময় লেগে যেতো। এতে প্রত্যেক যাত্রীকে ভাড়া বাবদ টাকাও দিতে হতো অনেক বেশি। বর্তমানে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে খুলনা যেতে সময় লাগছে মাত্র পৌনে চার ঘন্টা। যাত্রী প্রতি সকল শ্রেণির আসনে ভাড়াও কমেছে প্রায় পঞ্চাশ সতাংশের কাছাকাছি। এছারা যনুনা রেলসেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের সকল ট্রেনের যাত্রার সময় কমেছে ১৫ মিনিটেরও বেশি। অন্যান্য রূটেও বিভিন্ন সংস্কার, মেরামত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের ফলে রেলযাত্রা হয়েছে পুর্বের চেয়ে অনেক আরামদায়ক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দ্রুত। ফলে রেল যাত্রায় যাত্র*ঈ চাহিদা অনেক বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এ চাহিদা আরো কয়েকগুন বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

নিরাপদ, বিশ্বস্ত, আরামদায়ক এবং তুলনামূলক কম খরচে দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় রেলওয়েকে Green Transport হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মাধ্যমে কম জ্বালানী ব্যবহার করে অধিক সংখ্যক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা যায়। টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্যই হলো পরিবেশকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাকে বিনষ্ট না করে উন্নয়ন সাধন করা। রেল পরিবহন প্রকল্প গ্রহণকালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহনশীলতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসেবে কতিপয় বিষয় যেমন প্রকল্পটি Wild Air. Salinity, Erosion, Land/Mud slide, Flood, Earth Quake, Lightning জনিত ক্ষতি সহনীয় কিনা তা বিবেচনা করা। তাছাড়া Electrical Equipment Tele-communication কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ/বাধাগ্রস্থ হবে কিনা অথবা Thermal Expansion এর কারণে Bridge Join ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা তাও বর্তমানে লক্ষ্য করা হচ্ছে। রেল লাইনের দুই ধারে বনায়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া Solar Energy উৎপাদনের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সকল অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশগত বিষয়সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হাতি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার জন্য Elephant Pass স্থাপন করা হয়েছে। কার্বন নি:সরণ কমানোর লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণ, পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ ও নতুন Rolling Stock সংগ্রহ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে লোকোমোটিভ সংগ্রহের ক্ষেত্রে Tier-II এবং তদূর্ধ্ব specification সম্পন্ন লোকোমোটিভ এবং বায়োটয়লেট সুবিধাবিশিষ্ট কোচ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে Technical Assistance for Green Transport Project Preparation Facility শীর্ষক একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলদেশ রেলওয়ে ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকশন প্রণয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তিত হলে যাত্রা সময় ও খরচ যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালুকরণের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোও সম্ভব হবে। পূর্বাঞ্চলে Meter Gauge এবং পশ্চিমাঞ্চলে Broad Gauge রেল ট্র্যাক ইতোমধ্যে Dual Gauge এ Conversion করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকারি অর্থায়নে বিশদ নক্সাসহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর লাইনে ইলেট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনসহ Electric Multiple Unit -EMU- ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে টংগী থেকে চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসাম -Chord line- লাইনে ইলেট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া, অন্যান্য লাইনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষাকালে ইলেট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে রেল ইঞ্জিনের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে, মানুষ কম খরচে স্বল্পতম সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌছাতে পারবে।