Dhaka , Tuesday, 8 October 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক নান্দাইল চৌরাস্তায় মরণফাঁদ -জানজটে নাকাল চালক ও যাত্রি।। পাবনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ একজনকে ছুরিকাঘাত আহত ১২।। পাবনায় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ।। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামে কটুক্তি করার প্রতিবাদে রাজাপুরে বিক্ষোভ মিছিল।। দেবহাটা উপজেলা ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশ।। পাইকগাছায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে লতায় বিএনপির মতবিনিময়।। শারদীয়া দুর্গা পূজার ষষ্ঠী পূজার দিন উৎসবমুখর পরিবেশে বিরাজ করছে।। দুর্গাপুর থানার নতুন ওসি দূরুল হুদা।। নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব পালনে বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে- মাহবুবের রহমান শামীম।। ঠাকুরগাঁও হরিপুরে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে শিশু নিহত এবং দুই জন আহত।। ঠাকুরগাঁওয়ে বদলি হওয়ার পরেও ছাড়ছেন না কোয়ার্টার দিচ্ছেন না ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল।। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী অসুস্থ এম. এ মান্নান সিলেট ওসমানী হাসপাতালে।। ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন সড়ক অবরোধ নাটোরের লালপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাইয়ের বাড়িতে ভাইয়ের হামলা।।  বন্যার্তদের পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবক।। উখিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দু’এনজিও কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।। বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মামলা।। মা ইলিশ রক্ষায় পিরোজপুর সদর টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত।। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত পরিবারের মাঝে অর্থ বিতরণ ভোলা জেলা প্রশাসন।। আমতলীর ব্রীজ ভেঙ্গে মর্মান্তিক নিহত হওয়া সেই ব্রীজের পাশেই নির্মিত হচ্ছে কাঠেরপুল।। রূপগঞ্জে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর অবমাননাকারীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ।। শহীদ আব্রার ফাহাদ স্মরণে চিলমারী ছাত্রদলের মৌন মিছিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত।। পিরোজপুর অপহরণ মামলার আসামি গ্রেফতার।। লক্ষ্মীপুরে বন্যায় সর্বশান্ত হয়েছে ৩ লাখ কৃষক।। মোংলায় সহযোগী জেলে উদ্ধারে কুমিরের সঙ্গে লড়াই।। মধুপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ তিন দপ্তরের প্রধান দায়িত্বে জুবায়ের হোসেন।। পাবনার যুবক ঢাকায় ছিনতাইকারীর হাতে খুন।। পর্যটকবাহী বোটে বিদেশি মদ বিয়ার বিক্রেতা সীমান্তের পেশাদার মাদক কারবারি শাহজাহন গ্রেফতার।। লালপুরের চংধুপইল শোভ ঠাকুরপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি।। রামুর জোয়ারিয়ানালা হতে চোরাই গাছসহ গাড়ি জব্দ- আটক ২ 

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 10:31:41 am, Sunday, 7 July 2024
  • 44 বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

অরবিন্দ রায়

স্টাফ রিপোর্টার।।

   

   

গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি  গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত ৬  জুন শিশুটির জন্ম হয়।

শনিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জনরা শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করে একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন দীর্ঘ দুই ঘন্টা চেষ্টা করে শিশু দুইটিকে আলাদা করেছেন। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মত এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু  শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি ৫ লক্ষ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এরকম ঘটনা ঘটেছে দুই শতেরও কম।

একটি শিশুর শরীরের ভেতর আরেকটি শিশুর অবস্থান এটা কিভাবে সম্ভব – এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশু কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিদ্ধ হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোন এক পর্যায়ে যদি কোষগুলি সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তবে দুইটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলি অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষ যুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়।   কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।
চিকিৎসকরা   জানান- এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের হাড় তৈরি হয়, ক্ষুদ্র আকারে হাত পা তৈরি হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো জানান- শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভিতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভিতর- তলপেটে- মাথার ভিতর- মুখের ভিতর- অন্ডকোষের ঝুলির ভিতর অথবা পায়ুপথের পিছনে।
একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন  বলা হয়। এদের মধ্যে  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে।
শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত
শিশুটির  পিতা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়- গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে  পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয়  ক্লিনিকে গিয়ে  আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু  স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা  হাসপাতালে  সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা  এ  ঘটনাটি দেখতে পান । দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ওই ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  কিন্তু গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও  তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান।  ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস  শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্যান্য সার্জনদের  সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি হাসপাতালে  অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান ও অবজারভেশন রাখা হয়।  শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে। সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ অন্যান্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল  সাড়ে ৯ টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়।  সাড়ে ১১টায় অস্ত্রোপচার  সফলভাবে শেষ হয়। অস্ত্রোপচারে ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা- সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরী সহ ১০- ১২ জন ডাক্তার- নার্স এবং ওটি বয়  অংশ নেন।

   

অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন- এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিলনা এবং মেরুদন্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস জানান- আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি  একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সিলেট মেডিকেল কলেজে হয়েছিল।  তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে  আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।
শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ টাকা পয়সা তেমন নেই। তাই আমার দ্বারা এ ধরনের অপারেশন ঢাকায় কোন হসপিটালে করানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তার শংকর স্যার যদি নিজে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা হতো। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক নান্দাইল চৌরাস্তায় মরণফাঁদ -জানজটে নাকাল চালক ও যাত্রি।।

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

আপডেট সময় : 10:31:41 am, Sunday, 7 July 2024

অরবিন্দ রায়

স্টাফ রিপোর্টার।।

   

   

গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি  গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত ৬  জুন শিশুটির জন্ম হয়।

শনিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জনরা শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করে একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন দীর্ঘ দুই ঘন্টা চেষ্টা করে শিশু দুইটিকে আলাদা করেছেন। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মত এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু  শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি ৫ লক্ষ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এরকম ঘটনা ঘটেছে দুই শতেরও কম।

একটি শিশুর শরীরের ভেতর আরেকটি শিশুর অবস্থান এটা কিভাবে সম্ভব – এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশু কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিদ্ধ হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোন এক পর্যায়ে যদি কোষগুলি সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তবে দুইটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলি অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষ যুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়।   কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।
চিকিৎসকরা   জানান- এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের হাড় তৈরি হয়, ক্ষুদ্র আকারে হাত পা তৈরি হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো জানান- শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভিতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভিতর- তলপেটে- মাথার ভিতর- মুখের ভিতর- অন্ডকোষের ঝুলির ভিতর অথবা পায়ুপথের পিছনে।
একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন  বলা হয়। এদের মধ্যে  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে।
শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত
শিশুটির  পিতা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়- গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে  পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয়  ক্লিনিকে গিয়ে  আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু  স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা  হাসপাতালে  সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা  এ  ঘটনাটি দেখতে পান । দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ওই ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  কিন্তু গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও  তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান।  ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস  শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্যান্য সার্জনদের  সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি হাসপাতালে  অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান ও অবজারভেশন রাখা হয়।  শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে। সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ অন্যান্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল  সাড়ে ৯ টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়।  সাড়ে ১১টায় অস্ত্রোপচার  সফলভাবে শেষ হয়। অস্ত্রোপচারে ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা- সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরী সহ ১০- ১২ জন ডাক্তার- নার্স এবং ওটি বয়  অংশ নেন।

   

অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন- এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিলনা এবং মেরুদন্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস জানান- আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি  একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সিলেট মেডিকেল কলেজে হয়েছিল।  তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে  আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।
শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ টাকা পয়সা তেমন নেই। তাই আমার দ্বারা এ ধরনের অপারেশন ঢাকায় কোন হসপিটালে করানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তার শংকর স্যার যদি নিজে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা হতো। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।