রকিবুজ্জামান
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি।।
অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর দেশ পুনরায় স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাদারীপুরের কালকিনির সড়কে ধীরে ধীরে বাড়ছে যানবাহন চলাচল। কিছুক্ষণ পরপর উপজেলার ব্যস্ততম মোড় গুলোতে দেখা যাচ্ছে স্বল্প আকারের যানজট। আর এই যানজট নিপুণ দক্ষতায় নিরসন করে যাচ্ছেন স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের সাথে যুক্ত হয়ে সড়কে শৃংখলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।আনসারের পাশাপাশি এই দায়িত্ব পালন করছে স্কাউট,বিএনসিসি,সেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। দেশে যত দিন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসবে তত দিন শিক্ষার্থীরা তাদের এই সেবা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কালকিনি থানার মোড়,মাছ বাজার মোড়,ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকা সহ বিভিন্ন মোড়ে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন।এসময় ট্রাফিক আইন অমান্য করায় শাস্তি হিসেবে চালকদের ৫ থেকে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখছেন এবং পরবর্তীতে আইন মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছেন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়- আমরা দেশ থেকে অন্যায়, অপরাধ ও জুলুমবাজদের বিদায় করেছি। সেই সঙ্গে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছি। ঘটে যাওয়া সহিংসতায় সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন এগুলোকে আমাদেরই বিনির্মাণ করতে হবে।দেশ যত দিন ঠিক না হচ্ছে আমরা আমাদের এই সেবা চালিয়ে যাব।
ট্রাকচালক আঃ আলীম বলেন- ছাত্ররা যেভাবে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা সত্যিই অসাধারণ।কোথাও কোনো রকমের চাঁদা দিতে হয় নাই। এই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক শহিদুল ইসলাম জানান,”আগে যখন গাড়ি চালাতাম- তখন কালকিনি ও ভুরঘাটা স্ট্যান্ডে চাঁদা দিতে হতো।এখন সড়কে যানজট যেমন নেই তেমনি কোনো ধরনের চাঁদাও দিতে হয়না। এতে করে আমরা অনেক খুশি।
সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা নাজিম জানান, তারা সেচ্ছায় ট্রাফিক পুলিশিংয়ের কাজ করছেন। যানজট নিরসনের পাশাপাশি সড়কে যেন আর কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয় তারা সেটাও নিশ্চিত করতে চান।
তিনি আরো বলেন- দেশের জন্য যদি আরও কিছু করা লাগে আমরা সেটাও করতে প্রস্তুত রয়েছি। এখন সময় পরিবর্তন নিয়ে আসার- ভালো কিছু করার এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ দেওয়ার। আমরা আমাদের এই কাজগুলোকে নিদর্শন হিসেবে রেখে যেতে চাই। পরবর্তীকালে যাঁরা দেশ শাসন করবেন- তাঁরা যেন আমাদের এই কাজগুলোকে মাথায় রেখে সততার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেন।
সাংবাদিক রকিবুজ্জামান জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।নিঃসন্দেহে এটা একটা মহতি উদ্দ্যোগ।তিনি স্থানীয়দের কাছে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার এবং তাদের সহযোগিতা করার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- উত্তম কুমার দাশ বলেন- এমন সেবামূলক উদ্যোগের জন্য আমি ছাত্রদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা সততার সঙ্গে যে পরিশ্রম করে যাচ্ছে এটা দেশবাসীর কাছে অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে।