
আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
আবারও অনিশ্চিত বরিশালবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবার পথ। যুগের পর যুগ জলাবদ্ধতায় সাঁতার কাটা ঘরসংসার যেন নিয়তির খোঁড়াক এখন বরিশালবাসীর। বিগত পনের বছরের শাসনামলে যাও একটু আশার আলো তৈরি হয়েছিল ২০২৩ সালের শেষে, তাও এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি না থাকায় এসব বিষয়ে বলার ও করার আর কোনো অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছেনা বরিশালের সাধারণ মানুষ। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার বলেছেন- আগের সব উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণের একসপ্তাহ পার হলেও আগের কোনো কাজই চলমান পাওয়া যায়নি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫৮ বর্গকিলোমিটারের কোথাও। দুদিনের বৃষ্টিতেই হাঁটু জলে হাটাহাটি নগরবাসীর। থমকে গেছে জীবনযাত্রার প্রায় সবটাই। আর নগরীর নবগ্রাম রোডতো এই মুহূর্তে পুরোপুরি কীর্তনখোলা নদীর রূপ ধারণ করেছে। তলিয়ে গেছে কাউনিয়া ও রূপাতলী হাউজিংসহ আশেপাশের এলাকা পুরোটাই। আর নগরী ও জেলার অন্যসব নিম্নাঞ্চলের কথাতো বলাবাহুল্য।
গত শুক্রবার থেকে রোববার সকাল ৯ টা পর্যন্ত থেমে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। শনিবার সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেকেই ঘর থেকে বের হলেও দুপুরের মধ্যে ফিরে গেছেন ঘরে। বিকেল থেকে টানা বৃষ্টি চলেছে ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত। আবহাওয়া অফিস থেকে কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বরিশালে।
সরজমিনে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলের ২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বেশকিছু সড়কে হাটুপানি দেখা গেছে। তলিয়ে গেছে বগুড়া রোড -কলেজ রোড- আগরপুর, অক্সফোর্ড মিশন রোড। আর বটতলা মোড় থেকে নবগ্রাম রোড এই মুহূর্তে কীর্তনখোলার রূপ ধারণ করেছে। ইজিবাইক ও সিএনজি চলাচল বন্ধ। পায়ে চলা রিকশা ও পিকাপ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
একই অবস্থা বরিশাল জেলাধীন ৫-৬টি উপজেলার। জলাশয় ডোবা ভরাট হয়ে উপচে পরা পানিতে চলাচল সমস্যা নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরের বাসিন্দাদের । ধান খেতে পানি জমেছে অনেক স্থানে৷ সদর উপজেলার কয়েকটি খাল পুনঃখনন করার কারণে তার সুফল পাচ্ছে চাঁদপুরা ও টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের মানুষ। কিন্তু কড়াপুড় রায়পাশায় জলাবদ্ধতায় আটকে গেছেন অনেক গ্রামবাসী। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাতটি খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হবার আগেই ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ঘটছে। যে কারণে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দুজনেই এলাকা ছাড়া। তবে তারা দুজনেই এলাকার জন্য উন্নয়নমুলক বেশকিছু প্রকল্প শুরু করেছিলেন শেষমুহুর্তে এসে। তাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে করে এলজিআরডি এর অধীনে কিছু কাজ শুরু হতে দেখা গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজগুলো বন্ধ। বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানালেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শওগত আলী।