
শেখ জাবেদ আহমদ, সিলেট মহানগর প্রতিনিধি:
শাহপরান থানার ওসিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বাড়ী ছাড়া ভুক্তভোগী নারী ও দুই ছেলে।
এসএমপির শাহপরান থানার ওসি মনির হোসেন, সবেক পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, এসআই অঞ্জন কুমার দেবনাথ, এসআই মিজানুর রহমান ও এসআই ইমরান বিন রাজ্জাকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন এসএমপির শাহপরান থানার আওতাধীন বটেশ্বর এলাকার মলাইটিলা গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বুলু মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার রুবি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড. রাগীব আলী মিলনায়তনে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা মামলা রুজু করে পোল্যান্ড প্রবাসী আমার মেয়ের জামাই নাজমুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আমি এবং আমার মেয়ে ডাঃ ফাতেমা আক্তার রিয়ার কাছে থেকে নগরীর শাহপরান থানা পুলিশ ও স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীরা ২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। চাঁদাবাজি ও চুরির
মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করায় ক্ষুব্ধ হইয়া পোল্যান্ড প্রবাসী নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে উল্টে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে সিলেট শাহপরান থানা পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মী এই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন নগরীর শাহপরান থানার ওসি মনির হোসেন (বিপি নং ৬৯৮৯০১০৩৩০), পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্ৰনীল ভট্টাচার্য (বিপি নং ৮৪১১১৪১৭৬৭) এসআই অঞ্জন কুমার দেবনাথ (বিপি নং ৯০১৭১৯৮২৯০), এসআই মিজানুর রহমান (বিপি নং ৭৯৯৯০১৬৯৯৯) ও এএসআই ইমরান বিন রাজ্জাক। অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- বায়জিদ আরমান রিফাত ও স্থানীয় বিএনপি নেতা মনজুরুল ইসলাম মনজুল, সামসুদ্দিন কাপ্তান ওরফে কাপ্তান এবং ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন অভিযুক্তদের বোন জামাই বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কাতার প্রবাসী বড়লেখা উপজেলা বিএনপি
নেতা লোকমান আহমেদ। পোল্যান্ড প্রবাসী নাজমুল ইসলাম পুলিশ কমিশনার এমনকি পুলিশ সদরদপ্তর বরাবর অভিযোগ দিয়েও সুরাহা না পেয়ে আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন মামলা নং শাহপরান সিআর- ৪১২/২০২৫ ইংরেজী, ধারা The penal code ১৮৬০ এর ৩৮৫/৩৮৬/৫০৬/৩৪ ধারা। আদালত মামলাটি
আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সিলেটের শাহপরান থানাধীন জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা আমি রুবিনা আক্তার রুবি ডাঃ ফাতেমা আক্তার রিয়ার মা, এবং পোল্যান্ড প্রবাসী নাজমুল ইসলাম (Managing Director at SHAHID GROUP OF INDUSTRY POLAND) এর শাশুড়ি হই। নাজমুল ইসলামের নিজের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় আমার বড় ছেলে অর্থাৎ নাজমুল ইসলামের শ্যালক বায়জিদ আরমান রিফাতের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বিগত “১৬ আগষ্ট ২০২৩ ” ইংরেজী নগরীর AYESHA LAIS MOTORS শিবগঞ্জ থেকে একটি FZS.V3 Drak matt Blue MFG MDPBM1 মডেলের একটি YAMAHA মোটরসাইকেল
ক্রয় করে ব্যবহার করতে থাকেন। এরই মধ্যে আমার অবাধ্য ছেলে বায়জিদ আরমান রিফাত ও তার চাচা স্থানীয় বিএনপি নেতা মনজুরুল ইসলাম মনজুল, সামসুদ্দিন কাপ্তান, আশরাফ উদ্দিন মাসুম গং ও তাদের আপন বোন জামাই বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা লোকমান আহমেদ আমার ছেলে এবং তার স্ত্রীর সাথে ষড়যন্ত্র করে ৫ আগষ্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে আমার মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া কয়েকটি ফ্ল্যাট বাড়ি ও সম্পত্তি দখল করে নেয় এবং বিনিময়ে আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করিলে আমি উল্লেখিত বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করিলে, আদালত
মামলাটি আমলে নিয়ে নগরীর শাহপরান থানা পুলিশকে FIR হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেয়। উক্ত মামলায় প্রবাসী নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ডা: ফাতেমা আক্তার রিয়া সাক্ষ্য প্রদান করায় আসামীগণ তাদের উপরে ক্ষুব্ধ হইয়া প্রতিশোধ নেওয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে। উল্লেখ্য অভিযুক্ত ওসি মনির হোসেনের সাথে নাজমুল ইসলামের পূর্ব বিরোধ ছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমার ছেলে বায়জিদ আরমান রিফাতের চাচারা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী হওয়ার সুবাদে সিলেটের শাহপরান থানার ওসির সাথে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র করে নাজমুল ইসলামের কাছে থাকা মোটরসাইকেলের অরজিনাল কাগজপত্র ও চুক্তিপত্র মিথ্যে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে “১৬ মার্চ ২০২৩ তারিখের AYESHA LAIS MOTORS এর নামে ভিন্ন আরেকটি মোটরসাইকেল ক্রয়ের একটি মিথ্যে বানোয়াট SALES INVOICE
সৃজন করিয়া আমার ছেলে বায়জিদ আরমান রিফাতকে থানায় নিয়ে ভয়-বৃতি ও হুমকি দিয়ে ১৭/১০/২৪ ইংরেজী প্রবাসী নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যে বানোয়াট সাঁজানো মোটরসাইকেল চুরির মামলা রুজু করিয়া বিভিন্ন ধরনের ভয়-বৃতি দেখিয়ে প্রবাসী নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ডাঃ রিয়া এবং আমার কাছে থেকে প্রথমধাপে অভিযুক্ত এসআই
অঞ্জন ২০,০০০/=(বিশ হাজার টাকা), দ্বিতীয় ধাপে অভিযুক্ত এসআই মিজানের মাধ্যমে ৭,০০০ (সাত হাজার টাকা) চাঁদা আদায় করে। পরবর্তীতে ৪/১১/২৪ ইংরেজী প্রবাসী নাজমুল ইসলামকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে থানা হাজতে নিয়ে রিমান্ডে এনে হাত পা ভেঙ্গে দিবে এবং পেপার পত্রিকায় ছবি ছড়িয়ে দিবে এই রকমের হুমকি ধামকি দিয়ে শাহপরান থানা পুলিশ আমাদের কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করিলে এই রাতেই আনুমানিক রাত ১:৩০ ঘটিকায় মামলায় উল্লেখিত সাক্ষীদের সম্মুখে ডা: ফাতেমা আক্তার রিয়া ও আমি ২০০,০০০/= (দুই লক্ষ টাকা) অভিযুক্ত এসআই অঞ্জন এবং এএসআই ইমরান বিন রাজ্জাকের হাতে তুলে দেই এবং বাকি ৩ লক্ষ টাকা পরের দিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেই। পরের দিন বাকি ৩ লক্ষ টাকা না দেওয়ায় অভিযুক্তরা প্রবাসী নাজমুল ইসলামের ছবি পেপার পত্রিকায় ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ১০/১১/২৪ ইংরেজী অর্থাৎ নাজমুল ইসলাম কারাগারে থাকা অবস্থায় নাজমুল ইসলামের ব্যবহৃত নাম্বারে অভিযুক্ত এসআই অঞ্জন ফোন দিয়ে ডাঃ ফাতেমা আক্তার রিয়াকে বাকী ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে অন্যতায় রিমান্ড আবেদনের করে রিমান্ডে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে, আমরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাইলে ১১/১১/২৪ ইংরেজী অভিযুক্ত এসআই অঞ্জন বিজ্ঞ আদালতে নাজমুল ইসলামের রিমান্ড আবেদন করিলে, বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব উম্মে হাবিবা উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রিমান্ড নামঞ্জুর করেন এবং তিনি তার আদেশে উল্লেখ করেন ” উক্ত মামলাটি একটি পারিবারিক শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ”।
তিনি আরো বলেন, ” AYESHA LAIS MOTORS ” এ খুঁজ নিয়ে জানা যায় শাহপরান থানার ওসি ও রিফাতের চাচাদের জালকৃত ” ১৬ মার্চ ২০২৩ ” ইংরেজী তারিখের SALES INVOICE এ তারা কোনো মোটরসাইকেল বিক্রি করে নাই। এমনকি এই
মোটরসাইকেল যারা বাংলাদেশে আমদানি করেছে অর্থাৎ ( ACI MOTORS LIMITED) এর একটি GATE PASS পর্যালোচনা করে দেখা যায় উক্ত মডেলের মোটরসাইকেলটি তারা বিক্রির জন্য সিলেট শোরুমে পাঠিয়েছে “২৩ জুন ২০২৩” ইংরেজী অপরদিকে ওসি ও রিফাতের চাচাদের জালকৃত SALES INVOICE এ ক্রয়ের তারিখ “১৬ মার্চ ২০২৩” তার মানে দাঁড়ালো মোটরসাইকেলটি শোরুমে আসার ৩ মাস আগেই তারা ক্রয় করে ফেলেছে। এখানেই শেষ নয়
আমদানিকারক ACI MOTORS LIMITED এর তথ্য অনুযায়ী তারা উক্ত মডেলের মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশে launched করেছে ” APRIL 2023 ” তার মানে দাঁড়ালো মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশে আসারও ১ মাস আগে ক্রয় করে ফেলেছে। আদালতে তাদের দাখিলকৃত কাগজেই প্রমাণ হয় মামলাটি মিথ্যে বানোয়াট। এছাড়াও বিগত ৭/১/২৫ ইংরেজী বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক
জনাব ছগীর আহমেদ একটি আদেশে বলেছেন “”উক্ত মোটরসাইকেল চুরির মামলায় জাল জালিয়াতি করে কাগজ দাখিল করা হয়েছে সেটি স্বীকৃত”। এমনকি প্রবাসী নাজমুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় পুলিশ কমিশনার উক্ত মামলায় আলাদা আরেকটি তদন্ত করিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব সাহাদত হোসেন তার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন “” মোটরসাইকেলটি
বায়জিদ আরমান রিফাতের NID দিয়ে ক্রয় করা হলেও প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা দিয়েছেন তার ভগ্নিপতি নাজমুল ইসলাম এবং ক্রয়ের দিন তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন মর্মে আমার সার্বিক গোপন তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে”। পরবর্তীতে আমার ছেলে বায়জিদ আরমান রিফাত যখন বুঝতে পারে প্রবাসী নাজমুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মামলা করবে তখন সে ভয় পেয়ে তার ব্যবহৃত ও রেজিস্ট্রেশন কৃত ( 01752-671553 ) নাম্বার দিয়ে পরিচালিত Bayzed arman rifat নামের ফেসবুক আইডি থেকে আমার মেয়ে ডাঃ ফাতেমা আক্তার রিয়াকে ৫ জানুয়ারি
২০২৫ ইংরেজী কয়েকটি মেসেজ পাঠায় যেখানে সে উল্লেখ করে অভিযুক্ত ওসি, ওসি তদন্ত এবং তার চাচারা তাকে থানায় নিয়ে ভয় বৃতি দেখিয়ে এই মিথ্যে মামলা করিয়েছে এবং নাজমুল ইসলামকে গ্রেফতারের দিন থানা পুলিশ যে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে সেটা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছে এবং তার চাচা মনজুলকে কিছু টাকা দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবাসী নাজমুল ইসলাম অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করিবেন মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়ে সিলেট বারের কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করিলে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করিলে নাজমুল ইসলাম নিজে মামলা ড্রাফট করে নিজেই শুনানি করেন এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত CrPC 197 ধারার
রেফারেন্স দিয়ে মামলাটি খারিজ করে দিলে নাজমুল ইসলাম এই আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করিলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৭/৮/২৫ ইংরেজী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত রিভিশন মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতকে মামলা আমলে নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। চাঁদাবাজির ঘটনার অনেকগুলো কল রেকর্ডিং এবং প্রমাণপত্র আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই এবং তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের
সাময়িক বরখাস্ত চাই।
সংবাদ সম্মেলনে রুবি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তার দুই ছেলে সহ তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন অভিযুক্তরা।১ বছরের অধিককাল থেকে ভিটেমাটি ছাড়া রুবি ও তার সন্তানাদি।