Dhaka , Wednesday, 12 March 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল এর পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিল ঈদের মার্কেট করতে হবে তাই আসছি- চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য  নোয়াখালীতে ওষুধের কার্টনে মিলল নবজাতকের মরদেহ সাতকানিয়ায় এলডিপি’র কেওঁচিয়া ইউনিয়ন শাখার ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ৯ বছর বয়সী শিশুর মাটিতে পুঁতে রাখা মৃতদেহ উদ্ধার সারাদেশে খুন -ধর্ষণ সহ আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে দুর্গাপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ পাইকগাছায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে উপজেলা প্রশাসন পাইকগাছায় ২৫ হাজার শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা মেহেরপুরে ফলের বাজার গরম, বেড়েছে কয়েকটির দাম  সরাইলে মাদক বিরোধী অভিযানে ২৫কেজি গাজাসহ গ্রেফতার ৩ বিদ্যালয়ের বারান্দায় বৃদ্ধকে ইটের আঘাতে হত্যা, আসামী গ্রেফতার সাতকানিয়ায় মূল্য তালিকা না থাকায় ৫ দোকানিকে জরিমানা ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শাস্তির আইন পাশ করতে হবে- ডা. শাহাদাত হোসেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দীন আহমেদ এর জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক প্রকল্পের বিষয়ে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা ,আড়াই বছরেও মেলেনি ডিএনএ রিপোর্ট নরসিংদীতে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবিতে মানববন্ধন টঙ্গীতে কারখানা গেইটে বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে নরসিংদী সদরে বড় বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এর অভিযান গারো পাহারে আগুনের কারণে দেখা মিলছে না বন্যপ্রাণীর গাজীপুরে ২ মহাসড়কে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকদের তিন ঘন্টা অবরোধ   লালমনিরহাটে মব জাস্টিসের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠিয়ে সংবাদ সম্মেলন সাতকানিয়ায় মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে ইউএনও’র অভিযান ১জনকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা সাতকানিয়ায় ডাকাত ঘোষণা দিয়ে ২জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ৬ দিন পর থানায় মামলা সাংবাদিককে ফাঁসানোর অপচেষ্টা- কক্সবাজারে মাদকের এডির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধন বিএনপি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়- ভিপি ইব্রাহিম বিএনপির কেন্দ্রীয়  নির্বাহী কমিটির স্থায়ী সদস্য   লক্ষ্মীপুর -১ রামগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি নাজিমউদ্দীন আহমেদ আর নাই মির্জাপুর জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত হাটহাজারিতে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

শরীয়তপুরে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 12:25:42 pm, Monday, 10 March 2025
  • 8 বার পড়া হয়েছে

শরীয়তপুরে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি পরিবার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি 

   

শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার  হেনার(১৩) ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে তৈরী হয়েছে চাপা ক্ষোভ।

মামলার নথি সূত্রে যানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন ছোট মুলনা গ্রামের আজগর খানের মেয়ে ও জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা ২০১৫ সালের ১১ মার্চ একই গ্রামের বাসিন্দা বান্ধবী পাখি আক্তারের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বান্ধবী পাখি বাড়িতে ফিরলেও চাঁদনী আর ফিরে আসেনি। পরে তিনদিন পর চাঁদনীর লাশ বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যাক্ত খালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেন। তার তিন মাস পর তিনি শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ০৯ জনকে আসামি করে পুনরায় মামলা করেন। ঐ মামলায় আসামি ছিলেন- মোসা: পাখি আক্তার, মিলন ওরফে দুলাল মাদবর, জুয়েল ঢালী, মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, সোহেল ঢালী, রাজন, রুবেল তালুকদার, তোতা বেপারী। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান আসামী মোসা: পাখি আক্তার ও মিলন ওরফে দুলাল মাদবর সহ ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাসুদ ব্যাপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তখন মামলার বাদী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আজগর খান আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করার কথা জানালেও তিনি ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তা আর করতে পারেননি।

এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন সেখানে সকল আসামীদের বেকসুর খালাস দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চাঁদনীর মা শরীফা বেগম বলেন, “আমার নিস্পাপ মেয়েটাকে কুকুর-শিয়ালের দল চিরে খেয়েছে, ওরা আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আমার ছোট মেয়টাকে ভয়ে ঠিকমত স্কুলে পাঠাতে পারিনি। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আরেক ছেলে ঢাকা থাকে। ঢাকায় থাকা ছেলে ঠিকমত বাড়ীতে এসে থাকতে পারেনি। বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। ওরা এমপির দল করতো তাই এগুলো করার সাহস পেতো। এই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাদীপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, মামলাটির রায়ের পূর্বে সিআইডির যে কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি এবং আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিচারিক পর্যায়ে এসে মামলাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সব আসামিরা খালাস পেয়েছে।

চাঁদনীর বড়ভাই ইকবাল খান মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনে বলেন, “আমার বোনকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমি প্রবাসে থাকার কারনে মামলার বিষয়টি নিয়ে কারো সহযোগীতা পাচ্ছিনা। আমি শিঘ্রই প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আইনি লড়াই শুরু করবো। এ লড়াইয়ে আমি ও আমার পরিবার সকলের সহযোগীতা চাই।”

এদিকে ২০১৫ সালে চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মত নৃশংস ঘটনায় হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবীতে গঠিত সামাজিক সংগঠন “নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ” ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদনীর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

ঐ সংগঠনের আহবায়ক জামাল মাদবর বলেন, “২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনীকে কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর চাঁদনীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ চার বছর চলে তদন্তের নামে প্রহসন। প্রকৃত আসামীদের আড়াল করে মামলাটি মিটিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও চলে। আজ ১০ বছর পার হলেও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। দেয়া হয়েছে নামকাওয়াস্তা একটি চার্যশীট যাতে বাদ দেয়া হয়েছে প্রধান আসামীদের নাম। এরপরই ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। যে রায়ে ওই চার্জশিটের আসামিদেরও বেকসুর খালাস দেওয়া হয় আর রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে প্রশাসন কি বলতে চায়? চাঁদনীকে ভুতে মেরেছে? আমরা জানতে চাই এমন নৃশংস হত্যাকারীদের বিচার কেন আজও কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। আর কোন চাঁদনীর এমন ভয়ংকর পরিণতি আমরা দেখতে চাই না। অনতিবিলম্বে এই শিশু শিক্ষার্থী চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই। নয়তো নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

তিনি আরো বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মামলার বাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে অকালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কতটা লজ্জার বিষয়। স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পূনরায় তদন্ত করে মুল হোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক।”

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল এর পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

শরীয়তপুরে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি পরিবার

আপডেট সময় : 12:25:42 pm, Monday, 10 March 2025

শরীয়তপুর প্রতিনিধি 

   

শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার  হেনার(১৩) ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে তৈরী হয়েছে চাপা ক্ষোভ।

মামলার নথি সূত্রে যানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন ছোট মুলনা গ্রামের আজগর খানের মেয়ে ও জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা ২০১৫ সালের ১১ মার্চ একই গ্রামের বাসিন্দা বান্ধবী পাখি আক্তারের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বান্ধবী পাখি বাড়িতে ফিরলেও চাঁদনী আর ফিরে আসেনি। পরে তিনদিন পর চাঁদনীর লাশ বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যাক্ত খালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেন। তার তিন মাস পর তিনি শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ০৯ জনকে আসামি করে পুনরায় মামলা করেন। ঐ মামলায় আসামি ছিলেন- মোসা: পাখি আক্তার, মিলন ওরফে দুলাল মাদবর, জুয়েল ঢালী, মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, সোহেল ঢালী, রাজন, রুবেল তালুকদার, তোতা বেপারী। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান আসামী মোসা: পাখি আক্তার ও মিলন ওরফে দুলাল মাদবর সহ ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাসুদ ব্যাপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তখন মামলার বাদী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আজগর খান আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করার কথা জানালেও তিনি ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তা আর করতে পারেননি।

এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন সেখানে সকল আসামীদের বেকসুর খালাস দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চাঁদনীর মা শরীফা বেগম বলেন, “আমার নিস্পাপ মেয়েটাকে কুকুর-শিয়ালের দল চিরে খেয়েছে, ওরা আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আমার ছোট মেয়টাকে ভয়ে ঠিকমত স্কুলে পাঠাতে পারিনি। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আরেক ছেলে ঢাকা থাকে। ঢাকায় থাকা ছেলে ঠিকমত বাড়ীতে এসে থাকতে পারেনি। বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। ওরা এমপির দল করতো তাই এগুলো করার সাহস পেতো। এই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাদীপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, মামলাটির রায়ের পূর্বে সিআইডির যে কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি এবং আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিচারিক পর্যায়ে এসে মামলাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সব আসামিরা খালাস পেয়েছে।

চাঁদনীর বড়ভাই ইকবাল খান মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনে বলেন, “আমার বোনকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমি প্রবাসে থাকার কারনে মামলার বিষয়টি নিয়ে কারো সহযোগীতা পাচ্ছিনা। আমি শিঘ্রই প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আইনি লড়াই শুরু করবো। এ লড়াইয়ে আমি ও আমার পরিবার সকলের সহযোগীতা চাই।”

এদিকে ২০১৫ সালে চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মত নৃশংস ঘটনায় হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবীতে গঠিত সামাজিক সংগঠন “নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ” ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদনীর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

ঐ সংগঠনের আহবায়ক জামাল মাদবর বলেন, “২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনীকে কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর চাঁদনীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ চার বছর চলে তদন্তের নামে প্রহসন। প্রকৃত আসামীদের আড়াল করে মামলাটি মিটিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও চলে। আজ ১০ বছর পার হলেও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। দেয়া হয়েছে নামকাওয়াস্তা একটি চার্যশীট যাতে বাদ দেয়া হয়েছে প্রধান আসামীদের নাম। এরপরই ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। যে রায়ে ওই চার্জশিটের আসামিদেরও বেকসুর খালাস দেওয়া হয় আর রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে প্রশাসন কি বলতে চায়? চাঁদনীকে ভুতে মেরেছে? আমরা জানতে চাই এমন নৃশংস হত্যাকারীদের বিচার কেন আজও কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। আর কোন চাঁদনীর এমন ভয়ংকর পরিণতি আমরা দেখতে চাই না। অনতিবিলম্বে এই শিশু শিক্ষার্থী চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই। নয়তো নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

তিনি আরো বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মামলার বাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে অকালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কতটা লজ্জার বিষয়। স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পূনরায় তদন্ত করে মুল হোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক।”