
মোঃ আবু তৈয়ব, হাটহাজারী প্রতিনিধি
মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই বীর শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে হাটহাজারী পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুল। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও একুশের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলা মায়ের সেই বীর সন্তানদের স্মৃতিচিহ্ন ও বাংলা বর্ণমালা দিয়ে স্কুল প্রাঙ্গন রং তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তুলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২০ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনা সভার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, চিত্রঅংকন প্রতিযোগীতা, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের জন্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বই প্রদর্শনী, এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক সাময়িকী ডালিয়া পত্রিকা উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দীন রেজা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহ আলম ও মোঃ রায়হানের যৌথ সঞ্চালনায় এবং প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম উদ্দিন রেজার সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল হাসেম, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহ আলম হাটহাজারী ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বশীল এডভোকেট মোঃ আবু সোহেল।
প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম উদ্দিন রেজা বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের অস্তিত্বের স্মারক । ২১শে ফেব্রুয়ারী আমাদের এনে দিয়েছে মাতৃভাষা। আমাদের যে আবেগ, অনুভূতি।
মনের কথা, আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন সবকিছুই আমরা বাংলা ভাষায় লিখি,বাংলায় বলে প্রকাশ করি।এই ভাষা যাঁদের রক্তের বিনিময়ে, জীবনের বিনিময়ে এসেছে তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা,সুগভীর ভালোবাসা। তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে এ ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। এই ভাষায় স্বপ্ন দেখার অধিকার পেয়েছি। মহান ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক, এবং আরো নাম না জানা শহীদদের ঋণ অপরিশোধ্য।
মহান একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।পাকিস্তানিরা যখন আমাদের মায়ের ভাষা, আমাদের মুখ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল তখন এই ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সালাম,বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো নাম না জানা অনেকেই ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিল জীবনবাজি রেখে। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে,সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার। মায়ের ভাষাকে আমরা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলাম পাকিস্তানের সংবিধানে।সেই অর্জন আমাদের সাহসী করে তুলেছিল।সেই অর্জনের পথ ধরে আমরা ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছি,১৯৭১ সালে লালসবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনতে পেরছি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি এবং সর্বশেষ চব্বিশের ছত্রিশ জুলাইয়ে ছাত্র জনতার দূর্বার গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারকে লেজ গুটিয়ে লক্ষণ সেনের মতো পালাতে বাধ্য করেছি।
তিনি আরো বলেন, আলোকিত মানুষ আর সুশীল সমাজ বিনির্মানের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। স্কুল কলেজের লাইব্রেরির আলমিরায় বইকে কয়েদির মতো বন্দী রাখার কোন অর্থ নেই, নেই কোন সুফল। নিয়মিত লাইব্রেরি ওয়ার্কের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের। সাগরের তলদেশে যেমন মণি মুক্তা পাওয়া যায়, এর চেয়েও দামী মণি মুক্তার সন্ধান মিলে সৃজনশীল, মননশীল ও উদ্ভাবনী মূলক বইয়ের পাতার বাঁকে বাঁকে। বই অনন্য উচ্চতায় ওঠার মই।
মহান একুশ উপলক্ষে মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ব্যবস্থাপনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় সম্পন্ন করা হয় হাটহাজারী ব্লাড ব্যাংকের সহযোগিতায়।
অনুষ্ঠানে,স্কাই টিভির ব্যবস্থাপনায় আলিফ হসপিটালের পৃষ্ঠপোষকতায় টিফিনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা।। প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাইস্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিক জেসমিন আক্তার, সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা নাহিদা আক্তার,
সিনিয়র শিক্ষক নুসরাতুল হক, মোঃ আবু রায়হান, একরামুল হক, মোঃ মাহমুদুল করিম, মোঃ সিরাজুদ্দৌলা, মোঃ আমিনুল, হক, মোঃ রাকিব উদ্দিন,
মোঃ আবু তৈয়ব, অর্পিতা সেন, মোঃ নাজিম উদ্দীন প্রমূখ।