
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সিলেট।।
সিলেট মহানগরের মিরের ময়দান এলাকার দুটি অভিজাত আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে মালমাল চুরি ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর এলাকার আলী নুর মোহাম্মদ সামওয়েন। তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও একটি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা -সি.ই.ও-। মঙ্গলবার -১৫ অক্টোবর দুপুরে মহানগরের পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া প্রবাসী সামওয়েন আরও অভিযোগ করেন- হয়রানির শিকার হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও তাকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি- বরং এই দুই আবাসিক হোটেলের মালিকের সঙ্গে আঁতাত হয়ে তাকে আরও হয়রানি করা হয়েছে। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের হস্তক্ষেপে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের -এসএমপি- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই প্রবাসীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাল উদ্ধার করে দেন। তবে এখনো কিছু মাল উদ্ধার হয়নি বলে জানান তিনি।
মিরের ময়দানের অভিযুক্ত আবাসিক হোটেল দুটি হলো- ফার্মিস গার্ডেন ও জিরান গেস্ট হাউস।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী আলী নুর মোহাম্মদ সামওয়েন বলেন- নির্ঝঞ্জাটভাবে তাঁর সফটওয়্যার কোম্পানির কাজ করার জন্য গত আগস্টে দেশে এসে তিনি মিরের ময়দান এলাকার জিরান গেস্ট হাউসে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে উঠেন। কিন্তু সেখানে নির্জনতা না পাওয়ায় ২০ আগস্ট পাশর্^বর্তী হোটেল ফার্মিস হোটেলে ৭ দিনের জন্য রুম ভাড়া নেন। এখানেও তিনি ৭ দিনের ভাড়ার টাকার অগ্রিম পরিশোধ করেন। ৫ দিনের মাথায় তিনি একটি কাজে বেরিয়ে ২৭ আগস্ট হোটেলে ফিরে মালামাল নিয়ে রুম ছাড়তে চান। কিন্তু হোটেল স্টাফরা এসময় তার মালামাল দিতে রাজি হননি। এসময় প্রবাসী সামওয়েন ফোনে হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু অগ্রিম বিল পরিশোদের পরও কেন তাকে টাকা দিতে হবে- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাকে ম্যানেজার দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে সামওয়েন লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি। পরে আরেক দফা তিনি পুলিশের সহযোগিতা চাইলে কোতোয়ালি থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা -ওসি- মো. নুনু মিয়া কোনো সহযোগিতা না করে সামওয়েনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমনকি তার সামনে বসেই অভিযুক্ত ফার্মিস গার্ডেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোশালাপে লিপ্ত হন ওসি নুনু মিয়া।
পরে বাধ্য হয়ে সামওয়েন বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চান। হাইকমিশনের পরামর্শে পরে প্রবাসী সামওয়েন আইনজীবী নিযুক্ত করে আদালতে একটি চুরি একটি এবং আরেকটি হয়রানি অভিযোগ করেন। অভিযোগ দুটি আদালত আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মালামাল উদ্ধারের দায়িত্ব দেন। পরে ১ অক্টোবর এসএমপি’র দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামওয়েনকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মিস গার্ডেন থেকে তার ল্যাপটপ ও পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল উদ্ধার করেন। তবে জামাকাপড় ও প্রসাধনীসামগ্রীসহ কিছু ব্যক্তিগত মাল এখনো সেখানে রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন প্রবাসী সামওয়েন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- জিরান গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার আমার কাছে বড় অংকের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছিলো। কিন্তু আমি তাৎক্ষণিক দিতে সম্মত হইনি বলে সেই মূলতঃ এসব ঘটনার কলকাটি নেড়েছে। কারণ- আমার কাছে ফার্মিস গার্ডেনের ম্যানেজারের টাকা দাবির কোনো কারণ নেই, কারণ আমি সেখানে ৭ দিনের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে রুম বুক করেছিলাম। ফার্মিস গার্ডেন ও জিরান গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের গোপন আতাঁত রয়েছে বলেই আমাকে এমন হয়রানি করা হয়েছে।
সামওয়েন বলেন- ব্রিটিশ হাইকমিশন পদক্ষেপ না নিলে ও এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম -পিপিএম-সেবা- উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের ও উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলম সহযোগিতা না করে আমার পাসপোর্ট ও ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র হারিয়ে আমি দিশেহারা হলে যেতাম। আমি আশা করছি- এই সংবাদ সম্মেলনের পর অভিযুক্ত দুটি আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো প্রবাসী বা কোনো বোর্ডারের সঙ্গেই এমন অন্যায় আচরণ করার সাহস পাবে না। প্রবাসীরা নাড়ির টানে দেশে ফিরে বার বার হয়রানির শিকার হন। আমাদের যাতে আর হয়রানির শিকার না হতে হয়- সে বিষয়ে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আশা করি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।