Dhaka , Thursday, 21 November 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
দেবহাটায় জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ আসিফ ও আহতদের স্মরনে স্মরন সভা।। সীমিত সামর্থ্য ও নানা সংকট নিয়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।। দেবহাটা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত।। সিদ্ধিরগঞ্জে ঝোপের ভেতর থেকে ইজিবাইক চালকের জবাই করা লাশ উদ্ধার।। খাদ্যের সরবরাহে কোন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে দেওয়া হবেনা- বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।। আগামীকাল হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল শুরু।। কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকের চাপায় শিশুর মৃত্যু।। শেরপুরে গ্রাম পর্যায়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত।। মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে জামালপুরে নূরানী স্কলারশীপ বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত।। নারায়ণগঞ্জে অজ্ঞাত ব্যক্তির জবাইকৃত লাশ উদ্ধার।। লক্ষ্মীপুরে আহতদের সুচিকিৎসা দাবিতে সড়ক অবরোধ।। রূপগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টায় হামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন।। নিখোঁজের ১০ দিন পর খালে মিলল বেদের মরদেহ।। রামগঞ্জে বিনা লাভের সবজি বাজারে ব্যাপক সাড়া।। পাবনায় ইজিবাইক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ আহত ২।। কক্সবাজার’র রামুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে প্রতারণা- দুইযুবক আটক।। মোবাইলে ভিডিও চালু রেখে পাবনার এক কিশোরীর ঢাকায় আত্মহত্যা।। কাজের গুনগত মান ঠিক না থাকলে বিল দেয়া হবে না- চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত।। বেতন বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে ওরিয়ন ফার্মায় শ্রমিক অসন্তোষ।। সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার লাশ  চার মাস পর কবর থেকে উত্তোলন।। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ।। দুর্গাপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ৩ জনের কারাদণ্ড।। ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় -ধর্ম উপদেষ্টা।। বিদেশ যাওয়া হলোনা কলেজছাত্র জাকিরের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যু।। খাবার ও কম্বল বিতরণ করলো ক্লীন সিলেট।। ঠাকুরগাঁওয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ান নারী ফুটবলারদের ফুলেল শুভেচ্ছা।। কথিত ইয়াবাসহ ওমরা হজ যাত্রী জেদ্দা এয়ারপোর্টে আটক পরে মুক্তি।। সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল শাখার ট্রাক টার্মিনালের সংস্কারকাজ চলছে।। শেরপুরে মানুষিক ভারসাম্যহীন নাতনিকে নিয়ে কষ্ট করে দিন পারি দিচ্ছেন নানি।। পাবনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক নিহত।।

শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যময় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 01:33:30 pm, Monday, 12 July 2021
  • 350 বার পড়া হয়েছে

শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যময় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়

 

মিজানুর রহমান অপু
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।।

সময়ের গতিময়তা পটুয়াখালী শহরের ক্ষুদ্র পরিসরকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে নতুন রূপদান করেছে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ এর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এর গৌরবান্বিত জেলা পটুয়াখালী।জেলার বক্ষস্থলে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্য মণ্ডিত সুবৃহৎ পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়টি।শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যময় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়।

এই বিদ্যালয়টি পটুয়াখালী শহরের প্রথম হাই স্কুল এবং দালান।

১৮৭১ সালে পটুয়াখালী মহাকুমার কাজ শুরু হয়। পটুয়াখালী প্রথম ম্যজিস্ট্রিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মূন্সেফ ছিলেন স্বর্গীয় ব্রজমোহন দত্ত।তখন শুরু হল নবজাগরণ। এ জাগরণের জোয়ারে জল সিঞ্চন করেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত, কংগ্রেস নেতা সতীন সেনের পিতা নবীন চন্দ্র সেন, নেতা হরিলাল দাস গুপ্তের পিতা উমেশচন্দ্র দাস গুপ্ত, ঢাকা ও বরিশাল থেকে আগত এবং স্থানীয় উকিল বৃন্দ ও সুধি বৃন্দ।
বর্তমান পুরান বাজার সোনালী ব্যাংক বিল্ডিং এর তৎকালীন মালিক অক্ষয়কুমার দে এর নিজস্ব জায়গায় (বর্তমান জেলা ডাকঘরের কাছে) গোলপাতা নির্মিত ঘর স্থাপনের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।শুরুতে রস রঞ্জন পাল নামের অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রধান শিক্ষকতায় “পটুয়াখালী এন্ট্রাস স্কুল” নামে বিদ্যালয়টির পথ চলা শুরু হয়।

ব্রিটিশ রাজত্বকালে ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার ৫০ বছর পূর্তিতে গোল্ডেন জুবিলী (সুবর্ণজয়ন্তী) উৎসব পালন হওয়ার বছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই জুবিলী উৎসবের স্মারক হিসেবে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় ‘পটুয়াখালী জুবিলী হাই ইংলিশ স্কুল’।১৮৮৭ সালে বিদ্যালয়টি গোলপাতার ঘর থেকে নবনির্মিত দালানে স্থানান্তরিত হয়।

বিদ্যালয়টির বর্তমান ছাত্রাবাস ও পূর্ব খেলার মাঠটি ছিল চাষাবাদের জমি। ১৮৮৪ সালে তদানীন্তন এস.ডি ও ফয়েজ উদ্দিন হোসেন জায়গাটি মালিকের কাছ থেকে পত্তনি নেন এবং সরকারি অনুদান ও স্থানীয়ভাবে আদায়কৃত চাঁদার সাহায্যে আট কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা দালান নির্মাণ করেন।

১৯১২ সালে তদানীন্তন সরকার সরকারিকরণের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয় সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি হুকুমদখল করে শিক্ষা বিভাগের হাতে দেয়। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় কার্যনির্বাহী কমিটি বিদ্যালয়টি সরকারি পরিচালনায় দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পক্ষান্তরে বার্ষিক এক টাকা খাজনায় ওই জমি বিদ্যালয়ের নামে স্থায়ী লিজ নিয়ে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়। অল্পদিনে বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯১৭ সালে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অনুমোদন পায়।

ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বরদাকান্ত সেন। ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালুর জন্য স্কুলটি ঢাকা বোর্ডের অনুমোদন পায়। ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুলটিকে ‘মালটি ল্যাটার‍্যাল স্কীম’ এর অধীনে নিয়ে বহুমুখী উন্নতি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টি। নামকরণ করা হয় ‘পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়’।

২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে বিদ্যালয়টির অগণিত সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ,শিক্ষকবৃন্দ ও দেশবরেণ্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়।

ফলফলের দিক দিয়ে পটুয়াখালী সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় শুরু থেকেই সুনাম অর্জন করে আসছে।১৯৩১ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৩৩ জন। ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ স্কুল থেকে শতকরা ৭১ দশমিক ৪ ও ৬৬ দশমিক ছয়জন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৪ সালে শতকরা ৮৮ দশমিক দুইজন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৯৯ ভাগ। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা দুই শাখায় মোট ছাত্র সংখ্যা এক হাজার ছয়শত ষাট জন। এখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৫৩টি পদের বিপরীতে মাত্র ৩৯ জন।

প্রায় দেড়শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত বিদ্যাপিট পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়।এই বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্য সচিব আরএন সেনগুপ্ত (আই.এ.এস), বাংলাদেশের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান পটুয়াখালী ০১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া,সাবেক সচিব ড. মশিউর রহমান, সাবেক এমপি মজিবর রহমান তালুকদার, সাবেক এমপি মো. হাবিবুর রহমান মিয়া, বিচারপতি এ কে বদরুল হক, বিচারপতি মো. নিজামুল হক (নাসিম), সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি আনোয়ারুল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

প্রায় দেড়শত বছরের প্রাচীন এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন সহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৫টি। স্কুলে ১টি মিলনায়তন, ১টি মসজিদ, ১টি হোস্টেল, ১টি গ্যারেজ, ১টি শিক্ষক হোস্টেল, ১টি অভিভাবক শেড, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, সম্মুখে সমাবেশ(এসেম্বলির) এর জন্য ১টি মাঠ, পাশে একটি বড় খেলার মাঠ, ১টি ভলিবল কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, পশ্চাৎ পার্শ্বে ১টি পুকুর, গাছে ঘেরা প্রাঙ্গণ রয়েছে।

এই বিদ্যালয়ে ৩ টি বিজ্ঞানাগার, ১ টি গ্রন্থাগার ও ২টি কম্পিউটার ল্যাবরেটরি রয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষাসফরে।

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে বিভিন্ন ক্লাব। যেমন বক্তৃতা এবং আবৃতি সংসদ,বাংলাদেশ স্কাউটস,বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি),বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট,বিতর্ক ক্লাব (ডিবেটিং ক্লাব),কুইজ ক্লাব,সঙ্গীত ক্লাব,ক্রিকেট দল,ফুটবল দল।
তবে বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণে শিক্ষার্থীদের এসব সৃজনশীল কর্যক্রমের দিকে একেবারেই মনোযোগ নেই বললেই চলে।তবে বিভিন্ন শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় এখনো একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কর্যক্রম।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

দেবহাটায় জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ আসিফ ও আহতদের স্মরনে স্মরন সভা।।

শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যময় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়

আপডেট সময় : 01:33:30 pm, Monday, 12 July 2021

 

মিজানুর রহমান অপু
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।।

সময়ের গতিময়তা পটুয়াখালী শহরের ক্ষুদ্র পরিসরকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে নতুন রূপদান করেছে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ এর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এর গৌরবান্বিত জেলা পটুয়াখালী।জেলার বক্ষস্থলে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্য মণ্ডিত সুবৃহৎ পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়টি।শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যময় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়।

এই বিদ্যালয়টি পটুয়াখালী শহরের প্রথম হাই স্কুল এবং দালান।

১৮৭১ সালে পটুয়াখালী মহাকুমার কাজ শুরু হয়। পটুয়াখালী প্রথম ম্যজিস্ট্রিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মূন্সেফ ছিলেন স্বর্গীয় ব্রজমোহন দত্ত।তখন শুরু হল নবজাগরণ। এ জাগরণের জোয়ারে জল সিঞ্চন করেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত, কংগ্রেস নেতা সতীন সেনের পিতা নবীন চন্দ্র সেন, নেতা হরিলাল দাস গুপ্তের পিতা উমেশচন্দ্র দাস গুপ্ত, ঢাকা ও বরিশাল থেকে আগত এবং স্থানীয় উকিল বৃন্দ ও সুধি বৃন্দ।
বর্তমান পুরান বাজার সোনালী ব্যাংক বিল্ডিং এর তৎকালীন মালিক অক্ষয়কুমার দে এর নিজস্ব জায়গায় (বর্তমান জেলা ডাকঘরের কাছে) গোলপাতা নির্মিত ঘর স্থাপনের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।শুরুতে রস রঞ্জন পাল নামের অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রধান শিক্ষকতায় “পটুয়াখালী এন্ট্রাস স্কুল” নামে বিদ্যালয়টির পথ চলা শুরু হয়।

ব্রিটিশ রাজত্বকালে ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার ৫০ বছর পূর্তিতে গোল্ডেন জুবিলী (সুবর্ণজয়ন্তী) উৎসব পালন হওয়ার বছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই জুবিলী উৎসবের স্মারক হিসেবে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় ‘পটুয়াখালী জুবিলী হাই ইংলিশ স্কুল’।১৮৮৭ সালে বিদ্যালয়টি গোলপাতার ঘর থেকে নবনির্মিত দালানে স্থানান্তরিত হয়।

বিদ্যালয়টির বর্তমান ছাত্রাবাস ও পূর্ব খেলার মাঠটি ছিল চাষাবাদের জমি। ১৮৮৪ সালে তদানীন্তন এস.ডি ও ফয়েজ উদ্দিন হোসেন জায়গাটি মালিকের কাছ থেকে পত্তনি নেন এবং সরকারি অনুদান ও স্থানীয়ভাবে আদায়কৃত চাঁদার সাহায্যে আট কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা দালান নির্মাণ করেন।

১৯১২ সালে তদানীন্তন সরকার সরকারিকরণের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয় সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি হুকুমদখল করে শিক্ষা বিভাগের হাতে দেয়। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় কার্যনির্বাহী কমিটি বিদ্যালয়টি সরকারি পরিচালনায় দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পক্ষান্তরে বার্ষিক এক টাকা খাজনায় ওই জমি বিদ্যালয়ের নামে স্থায়ী লিজ নিয়ে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়। অল্পদিনে বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯১৭ সালে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অনুমোদন পায়।

ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বরদাকান্ত সেন। ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালুর জন্য স্কুলটি ঢাকা বোর্ডের অনুমোদন পায়। ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুলটিকে ‘মালটি ল্যাটার‍্যাল স্কীম’ এর অধীনে নিয়ে বহুমুখী উন্নতি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টি। নামকরণ করা হয় ‘পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়’।

২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে বিদ্যালয়টির অগণিত সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ,শিক্ষকবৃন্দ ও দেশবরেণ্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়।

ফলফলের দিক দিয়ে পটুয়াখালী সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় শুরু থেকেই সুনাম অর্জন করে আসছে।১৯৩১ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৩৩ জন। ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ স্কুল থেকে শতকরা ৭১ দশমিক ৪ ও ৬৬ দশমিক ছয়জন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৪ সালে শতকরা ৮৮ দশমিক দুইজন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৯৯ ভাগ। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা দুই শাখায় মোট ছাত্র সংখ্যা এক হাজার ছয়শত ষাট জন। এখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৫৩টি পদের বিপরীতে মাত্র ৩৯ জন।

প্রায় দেড়শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত বিদ্যাপিট পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়।এই বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্য সচিব আরএন সেনগুপ্ত (আই.এ.এস), বাংলাদেশের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান পটুয়াখালী ০১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া,সাবেক সচিব ড. মশিউর রহমান, সাবেক এমপি মজিবর রহমান তালুকদার, সাবেক এমপি মো. হাবিবুর রহমান মিয়া, বিচারপতি এ কে বদরুল হক, বিচারপতি মো. নিজামুল হক (নাসিম), সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি আনোয়ারুল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

প্রায় দেড়শত বছরের প্রাচীন এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন সহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৫টি। স্কুলে ১টি মিলনায়তন, ১টি মসজিদ, ১টি হোস্টেল, ১টি গ্যারেজ, ১টি শিক্ষক হোস্টেল, ১টি অভিভাবক শেড, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, সম্মুখে সমাবেশ(এসেম্বলির) এর জন্য ১টি মাঠ, পাশে একটি বড় খেলার মাঠ, ১টি ভলিবল কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, পশ্চাৎ পার্শ্বে ১টি পুকুর, গাছে ঘেরা প্রাঙ্গণ রয়েছে।

এই বিদ্যালয়ে ৩ টি বিজ্ঞানাগার, ১ টি গ্রন্থাগার ও ২টি কম্পিউটার ল্যাবরেটরি রয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষাসফরে।

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে বিভিন্ন ক্লাব। যেমন বক্তৃতা এবং আবৃতি সংসদ,বাংলাদেশ স্কাউটস,বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি),বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট,বিতর্ক ক্লাব (ডিবেটিং ক্লাব),কুইজ ক্লাব,সঙ্গীত ক্লাব,ক্রিকেট দল,ফুটবল দল।
তবে বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণে শিক্ষার্থীদের এসব সৃজনশীল কর্যক্রমের দিকে একেবারেই মনোযোগ নেই বললেই চলে।তবে বিভিন্ন শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় এখনো একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কর্যক্রম।