সাকিব ফারহান।।
কুষ্টিয়া জেলায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। আগে শুধু শহরে এ সংক্রমণের হার বেশি থাকলেও বর্তমানে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী গ্রাম গুলোতে সংক্রমণের হার বাড়ছে প্রতিদিনই। কুমারখালী সদর সহ গ্রামের ফার্মেসিগুলোতে মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এর পরও সরকারি কোন বিধি-নিষেধ মানছেন না তারা।
অপরদিকে সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাতে চান না। গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রবণতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি লোকজনকে সচেতন করতে ব্যাপকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে ফার্মেসিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের নাপা (প্যারাসিটামল) ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধের। দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন ঔষধ বিক্রি বেড়েছে। ঔষধ নাপেয়ে ভোগান্তি শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের অধিকাংশ ফার্মেসি সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
রবিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যার পর কুমারখালী হসপিটাল রোড মার্কেট ফার্মেসীতে ওষুধ কিনতে আসেন নন্দলালপুর গ্রামের মনিরুল হোসেন আম ব্যবসায়ী। তিনি জানান, এক পাতা নাপা (প্যারাসিটামল) ঔষধ কিনতে এসেছেন। অনেকগুলো ফার্মেসি ঘোরাঘুরি পরেও তিনি পাননি। তার কাছ থেকে ফার্মেসী মালিক বলেন সাপ্লাই নাই।
খয়েরচারা মাঠ পাড়ার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ও রিপন জানান, গত শুক্রবার তিনি কুমারখালী বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরেও ১ পাতা নাপা কিনতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে স্কয়ারের এইচ কেনেন।
বাজারের খন্দকার ফার্মেসির আলহাজ্ব রেজাউল করিম ভাসানী বলেন, গত একসপ্তাহ যাবত বেক্সিমকো গ্রুপের নাপার সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ক্রেতাদের যদি এক পাতা নাপার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ছাড়া ২-৩ পাতা কিনে রাখছে।
উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, বেক্সিমকো কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওষুধ না দেওয়ার কারণে নাপা (প্যারাসিটামল) ফার্মেসিতে নেই। তবে অন্য কম্পানির ওষুধ রয়েছে। কোনো ফার্মেসিতে কেউ ঔষধ মজুদ করছে না বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো কম্পানির কুমারখালী প্রতিনিধি বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মার্কেটে নাপা (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধসংকট রয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে সাপ্লাই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডঃ আকুল উদ্দিন বলেন, বেক্সিমকো কম্পানির নাপাজাতীয় ওষুধ ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার উপদেশ দেওয়ার পরও জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত লোকজন করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা পরীক্ষা না করে বিভিন্ন ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ কুমারখালী উপজেলার ছড়িয়ে যাচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল ইসলাম খান, করোনা মহামারিতে কোন ফার্মেসী ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেতে পারবেন না। এজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসী মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।