![](https://dainikajkerbangla.net/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মোঃ মাসুদ রানা মনি
রামগঞ্জ লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
রামগঞ্জে পৌর টোলের নামে পরিবহন খাতে অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। এতে অতিষ্ট পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ড্রাইভারকে মারধর ও গাড়ী ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ চাঁদা আদায়ের সাথে জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলীয় নেতারা জড়িত থাকায় মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না কেউ। পৌরসভা মেয়র কয়েকজন ইজারাদারকে কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করেন। থানায় মামলা হয়েছে,পুলিশ ১জনকে গ্রেফতার করেন। তবুও চাঁদা আদায় বন্ধ হচ্ছে না। রমজান উপলক্ষে চাঁদাবাজরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজরা চাঁদা নেওয়ার পর পৌরসভার নামে একটি রশিদ ধরিয়ে দিচ্ছে যেখানে দিন,তারিখ,মাস কিছুই নাই আবার কারও দস্তখত নেই, এ সব ভূয়া রশিদ দিয়ে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
পৌরসভা অফিস, স্থানীয় মালিক ও শ্রমিকের দেওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ১ হাজার ৫শত, যাত্রীবাহী বাস ১৫০টি, মালবাহী ট্রাক,পি-আপ ও কভারভ্যান সংখ্যা ২শতাধিক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার সংখ্যা ২শতটি রয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পৌর টোল সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে ১০, মালবাহী ট্রাক, পিক-আপ ভ্যান ও কভারভ্যান থেকে ৩০ ও বাস থেকে ২০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০ টাকা। অথচ এসব পরিবহন থেকে ইজাদারদের পোষ্য একদল সক্রিয় চাঁদাবাজ পৌরসভার লোগো সম্বলিত রশিদ,টোকেন ব্যবহার করে দৈনিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে দৈনিক ৩০টাকা, যাত্রীবাহী বাস থেকে দৈনিক ১১০ থেকে ২১০ টাকা, মালবাহী ট্রাক, পিক-আপ ভ্যান ও কভারভ্যান থেকে পৌর সভার টোল ২শত থেকে ৩শত টাকা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার থেকে মাসিক ৫শত টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছে। এভাবে বছরে অতিরিক্ত ৩ কোটি টাকার বেশী চাঁদা আদায় করছেন তারা। চলতি বছরে ২৬ ফেব্রুয়ারি রামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সামনের সড়কে চাঁদা আদায়কালে একজন ড্রাইভার অতিরিক্তি চাঁদা দিতে না চাইলে রামগঞ্জ বাজার ইজারাদার সাবেক উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ইরান পাটোয়ারীর পোষ্য চাঁদা আদায়কারিরা । এর আগে মেয়র রামগঞ্জ বাজার ইজারাদার ইরান পাটোয়ারি, সোনাপুর বাজার ইজারাদার ও সোনার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি সাধারন সম্পাদক জুয়েল রানা ও সোনাপুর ওয়াপদা মোড় ইজারাদার কামরুল হাসান রিপনকে অতিরিক্তি চাঁদা আদায় বিষয় কারন দর্শানো নোটিশ করেন। একই তারিখে বাজার ও পরিবহন ষ্ট্যান্ড এলাকায় মাইকিং করে কোন ইজারাদার নিয়ম বর্হিভুত অতিরিক্তি চাঁদা নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে সর্তক করে ।
চলতি ১৪৩০ বাংলা সনের ইজারাদাররা হল, রামগঞ্জ বাজার(মালবাহী,ট্রাক,পিকআপ,কভারভ্যান,কন্টেইনার-সাবেক উপজেলা যুবলীগের সাধান সম্পাদক ইরান পাটোয়ারী, বালুয়া চৌহমনী বাজার সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূইয়া, সোনাপুর বাজার জুয়েল রানা, বাসষ্ট্যান্ড -জননী,আল বারাকা, হিমালয় ও স্বাধীন বাংলা পরিবহন-রাশেদ হোসেন, আল-আরাফা পরিবহন জিসান আহম্মদ, লক্ষ্মীপুর সিএনজি ষ্ট্যান্ড মিল্লাদ হোসেন, খাদ্য গুদাম ও হাজীগঞ্জ সিএনজি ষ্ট্যান্ড জহির আলম, রেজিষ্টার অফিস সংলগ্ন সিএনজি ষ্ট্যান্ড জসিম উদ্দিন, পানিয়ালা সড়ক সিএনজি ষ্ট্যান্ড মেহেদী হাসান, মোরগ বাজার কামরুল হাসান।
শনিবার বাবুল, ফারুকসহ কয়েকজন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ড্রাইভার জানান, এখনো প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৩০টাকা করে পৌরসভার টোল নেওয়া হয়।
বাস ষ্ট্যান্ডের জননী পরিবহন সার্ভিস অফিসের হেড ক্লার্ক পলক মোবাইলে জানান, তারা প্রতি গাড়ী থেকে দৈনিক ১১০টাকা নেন। এ টাকা থেকে পৌরসভার টোল ২৫ ও মসজিদে ১০টাকা দিয়ে,বাকী টাকা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও পৌর যুবলীগের আহবায়ক মামুনুর রশিদ আখন্দ এবং উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সৈকত মাহমুদ শামছুর সাথে সমন্বয় করে অফিস কর্মচারির বেতন দেন।
রামগঞ্জ বাজার ইজারাদার ইরান পাটোয়ারী মোবাইলে জানান, পৌরসভার মেয়রের সাথে আমাদের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। এ সব লেখালেখির দরকার নেই।
রামগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসি-মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, পৌরসভার বাজার পরিদর্শক আবদুর রহিম বাদী হয়ে থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করে। মামলার একজন আসামীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রের করা হয়েছে। অন্য আসামীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রামগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী জানান, অতিরিক্ত টোল আদায়ে অভিযোগ পেয়ে, ইজারাদারদেরকে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করিয়ে সর্তক করে দিয়েছি। একজন ইজারাদারের তিনজন চাঁদা আদায়ীকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আইনানুগভাবে তার ইজারা বাতিল করা হয়েছে। তারপরও কোন ইজারাদার নিয়মের বাহিরে অতিরিক্তি চাঁদা নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।