Dhaka , Friday, 5 September 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
শরীয়তপুরে বিএনপির দুই নেতার কারাবরণের দিন আজ, আজও দিতে হয় হাজিরা বাংলাদেশে গণমূখী ইসলামী রাজনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দ ফজলুল করীম রহঃ হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে শ্রমিক আন্দোলনের সৌজন্যে সাক্ষাৎ।  মোটরসাইকেল আটকানোয় দুই ভাইয়ের ঝগড়া, বড় ভাইয়ের মৃত্যু রামগঞ্জে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার কক্সবাজারে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ভুয়া পরীক্ষার্থী আটক সুন্দরগঞ্জে ১৪৪ ধারার সীমানার বাইরে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা পুলিশ নিয়োগে শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৯ জন মেধাবী চূরান্ত রাজাপুরে পৃথক আয়োজনে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত নোয়াখালীতে ডাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র, নারী হেনস্তা, চবি ও বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও ছাত্রশিবিরের উপর অব্যাহত মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত। রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ১৬ জন শিক্ষকের ৩৮ জন শিক্ষার্থী মিটিং এর কথা বলে প্রধান শিক্ষক চম্পট রূপগঞ্জে ম্যাগজিনসহ বিদেশি পিস্তল উদ্ধার  রূপগঞ্জে ডিবি পরিচয়ে অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যান উদ্ধার ॥ যুবক গ্রেফতার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নেত্রী রহিমা রেজাকে বহিষ্কার হাতিয়ার ঘাটে শ্রমিকদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ চেক ডিজ-অনার মামলায় সাবেক ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার মির্জাপুরে বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান মাহমুদুর রহমানের পটিয়ার কোলাগাঁও এলাকায় গরম পানি ঢেলে এক নারীকে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ড রূপগঞ্জে বিক্রেতাহীন ‘সততা স্টোর’ চালু করলো দুদক রূপগঞ্জে অপহরণের ৭ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার, এক অপহরণকারী গ্রেপ্তার। মধুপুরে এ্যাড. জুবাইর আল মাহমুদ রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতার লোভে দিনের ভোট রাতে দিয়েছে : ড. মঈন খান। রুপগঞ্জে ডিবি পরিচয়ে চেয়ারম্যান অপহরণ মহেশখালী ২টি বন্দুকসহ তিনজন আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আ’লীগ, চরমোনাই ও জামাত সবাইকে যোগদানের আহবান  উপজেলা বিএনপি সভাপতির নেত্রকোণার মদনে ৬০০ পিস ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক কারবারি গ্রেফতার মোংলায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি

‘সবুজ জ্বালানির হাত ধরে টেকসই ভবিষ্যতের পথে যাত্রা’

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 11:44:14 am, Tuesday, 2 September 2025
  • 64 বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ শফিউল্লাহ,

একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিকালে যখন বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার মতো দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে এই খাতে এক নতুন সবুজ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত মজুদ এবং পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব-এই দ্বিমুখী সংকট থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। জনবহুল একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এই পরিবর্তন কেবল অপরিহার্যই নয়, এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকেও সুদৃঢ় করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগই গ্যাসভিত্তিক। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সীমিত মজুদ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, যা কেবল জ্বালানি নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবে না, বরং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে পরিবেশ সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, এই খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তরেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

বর্তমান বিশ্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকেছে এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এই খাতে চীন এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যার পেছনে রয়েছে সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যাপক ব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (IRENA)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে রেকর্ড পরিমাণ ৫৯৫ গিগাওয়াট নতুন সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড়ো অংশ এখন এই উৎস থেকে আসছে। তবে, নতুন সংযোজিত সক্ষমতার প্রায় ৮৩.৬শতাংশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা বৈশ্বিক বৈষম্যকে প্রকট করে তোলে। এই বৈশ্বিক চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারত এই অঞ্চলে এক বৃহৎ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ২৪ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাচ্ছে এবং ভুটান জলবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে নিজেদের কার্বন-নেগেটিভ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও যথাক্রমে ২১.১৮ শতাংশ ও ৩৪.৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরশীল হলেও সরকার সৌর ও বায়ুশক্তির মতো উৎসগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই খাতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থাকে মোট ১৬২৫.৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই উৎপাদনের সিংহভাগই আসে সৌরশক্তি থেকে, যার পরিমাণ ১৩৩১.৯২ মেগাওয়াট। এছাড়া জলবিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস থেকেও যথাক্রমে ২৩০, ৬২.৯, ০.৬৯ ও ০.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৬৭৯৪ মেগাওয়াট, যেখানে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোর অবদান ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এই প্রেক্ষাপটে, সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায়, ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’র মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি ভবনগুলোতে ২০০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও  উন্মুক্ত দর পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ৫৫টি স্থানে ৫২৩৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। এই পদক্ষেপগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ৭ অর্জনে এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসগুলোর মধ্যে সৌরশক্তি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ একটি সৌর বিকিরণ সমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় এখানে সোলার হোম সিস্টেম এক সফল উদ্যোগ হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু পরিবারকে আলোকিত করেছে। এর পাশাপাশি, কৃষিক্ষেত্রে সৌর সেচ পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে এবং সরকার বৃহৎ আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনে বিশেষ জোর দিচ্ছে। বায়ু শক্তির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং কিছু সমতল ভূমিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে অফশোর বায়ু শক্তি (Offshore Wind Energy) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ অনেক। সরকার এই খাতে গবেষণা ও পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ সীমিত হলেও পাহাড়ি অঞ্চল ও চা বাগানে ছোটো আকারের প্রকল্প স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে নেপাল থেকে স্বল্প পরিমাণে জল বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, তাই এখানে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কৃষি ও পশুর বর্জ্যকে বায়োমাস শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। শহরাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বর্জ্যকে ব্যবহার করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ (Waste-to-Energy) উৎপাদনের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার নানামুখী নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ এই খাতের উন্নয়নে একটি সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি, নেট মিটারিং নীতি গ্রাহকদের নিজেদের উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করার সুযোগ দেয়, যা ব্যক্তি পর্যায়ে সৌরশক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় রুফটপ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যার ফলে সরকারি অফিসগুলোতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে। এই খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (SREDA) এবং অর্থায়নে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IDCOL) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও সরকার দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ট্যাক্স সুবিধা, ডিউটি ছাড় এবং কম সুদের ঋণের মতো বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। তবে, এই সমন্বিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে জমির সীমাবদ্ধতা একটি বড়ো বাধা, কারণ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রচুর জায়গা প্রয়োজন হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির প্রাথমিক বিনিয়োগ ব্যয় বেশি হওয়ায় এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। এছাড়া, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সরবরাহ স্থিতিশীল না হওয়ায় এটিকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সফলভাবে যুক্ত করা একটি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এই উন্নত প্রযুক্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাবও এই খাতের অগ্রগতির পথে একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। তবে এ সকল বাধা দূর করতে সরকার সময়োপযোগী বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সবুজ ও টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা জরুরি। এর জন্য, সরকার বৃহৎ আকারের সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। একই সাথে, সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। একইভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে জাতীয় গ্রিডে কার্যকরভাবে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, এই খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি করতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কম সুদের ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একযোগে কাজ চলছে। আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে কূটনীতির সম্পর্ক কাজে লাগানো হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে এই সবুজ বিপ্লবের অংশীদার করার মাধ্যমে এই খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়া সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সুদূরপ্রসারী নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ জ্বালানি-নির্ভর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে। এই পথে এগিয়ে যাওয়া কেবল একটি পরিবেশগত প্রয়োজন নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকে সুদৃঢ় করারও এক অনন্য সুযোগ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে এগিয়ে যাওয়া মানে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সবুজ বাংলাদেশের দিকে যাত্রা।

লেখক: বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সদস্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুরে বিএনপির দুই নেতার কারাবরণের দিন আজ, আজও দিতে হয় হাজিরা

‘সবুজ জ্বালানির হাত ধরে টেকসই ভবিষ্যতের পথে যাত্রা’

আপডেট সময় : 11:44:14 am, Tuesday, 2 September 2025

মোহাম্মদ শফিউল্লাহ,

একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিকালে যখন বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার মতো দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে এই খাতে এক নতুন সবুজ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত মজুদ এবং পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব-এই দ্বিমুখী সংকট থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। জনবহুল একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এই পরিবর্তন কেবল অপরিহার্যই নয়, এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকেও সুদৃঢ় করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগই গ্যাসভিত্তিক। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সীমিত মজুদ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, যা কেবল জ্বালানি নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবে না, বরং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে পরিবেশ সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, এই খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তরেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

বর্তমান বিশ্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকেছে এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এই খাতে চীন এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যার পেছনে রয়েছে সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যাপক ব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (IRENA)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে রেকর্ড পরিমাণ ৫৯৫ গিগাওয়াট নতুন সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড়ো অংশ এখন এই উৎস থেকে আসছে। তবে, নতুন সংযোজিত সক্ষমতার প্রায় ৮৩.৬শতাংশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা বৈশ্বিক বৈষম্যকে প্রকট করে তোলে। এই বৈশ্বিক চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারত এই অঞ্চলে এক বৃহৎ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ২৪ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাচ্ছে এবং ভুটান জলবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে নিজেদের কার্বন-নেগেটিভ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও যথাক্রমে ২১.১৮ শতাংশ ও ৩৪.৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরশীল হলেও সরকার সৌর ও বায়ুশক্তির মতো উৎসগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই খাতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থাকে মোট ১৬২৫.৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই উৎপাদনের সিংহভাগই আসে সৌরশক্তি থেকে, যার পরিমাণ ১৩৩১.৯২ মেগাওয়াট। এছাড়া জলবিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস থেকেও যথাক্রমে ২৩০, ৬২.৯, ০.৬৯ ও ০.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৬৭৯৪ মেগাওয়াট, যেখানে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোর অবদান ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এই প্রেক্ষাপটে, সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায়, ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’র মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি ভবনগুলোতে ২০০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও  উন্মুক্ত দর পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ৫৫টি স্থানে ৫২৩৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। এই পদক্ষেপগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ৭ অর্জনে এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসগুলোর মধ্যে সৌরশক্তি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ একটি সৌর বিকিরণ সমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় এখানে সোলার হোম সিস্টেম এক সফল উদ্যোগ হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু পরিবারকে আলোকিত করেছে। এর পাশাপাশি, কৃষিক্ষেত্রে সৌর সেচ পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে এবং সরকার বৃহৎ আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনে বিশেষ জোর দিচ্ছে। বায়ু শক্তির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং কিছু সমতল ভূমিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে অফশোর বায়ু শক্তি (Offshore Wind Energy) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ অনেক। সরকার এই খাতে গবেষণা ও পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ সীমিত হলেও পাহাড়ি অঞ্চল ও চা বাগানে ছোটো আকারের প্রকল্প স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে নেপাল থেকে স্বল্প পরিমাণে জল বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, তাই এখানে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কৃষি ও পশুর বর্জ্যকে বায়োমাস শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। শহরাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বর্জ্যকে ব্যবহার করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ (Waste-to-Energy) উৎপাদনের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার নানামুখী নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ এই খাতের উন্নয়নে একটি সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি, নেট মিটারিং নীতি গ্রাহকদের নিজেদের উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করার সুযোগ দেয়, যা ব্যক্তি পর্যায়ে সৌরশক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় রুফটপ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যার ফলে সরকারি অফিসগুলোতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে। এই খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (SREDA) এবং অর্থায়নে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IDCOL) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও সরকার দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ট্যাক্স সুবিধা, ডিউটি ছাড় এবং কম সুদের ঋণের মতো বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। তবে, এই সমন্বিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে জমির সীমাবদ্ধতা একটি বড়ো বাধা, কারণ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রচুর জায়গা প্রয়োজন হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির প্রাথমিক বিনিয়োগ ব্যয় বেশি হওয়ায় এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। এছাড়া, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সরবরাহ স্থিতিশীল না হওয়ায় এটিকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সফলভাবে যুক্ত করা একটি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এই উন্নত প্রযুক্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাবও এই খাতের অগ্রগতির পথে একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। তবে এ সকল বাধা দূর করতে সরকার সময়োপযোগী বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সবুজ ও টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা জরুরি। এর জন্য, সরকার বৃহৎ আকারের সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। একই সাথে, সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। একইভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে জাতীয় গ্রিডে কার্যকরভাবে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, এই খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি করতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কম সুদের ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একযোগে কাজ চলছে। আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে কূটনীতির সম্পর্ক কাজে লাগানো হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে এই সবুজ বিপ্লবের অংশীদার করার মাধ্যমে এই খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়া সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সুদূরপ্রসারী নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ জ্বালানি-নির্ভর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে। এই পথে এগিয়ে যাওয়া কেবল একটি পরিবেশগত প্রয়োজন নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকে সুদৃঢ় করারও এক অনন্য সুযোগ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে এগিয়ে যাওয়া মানে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সবুজ বাংলাদেশের দিকে যাত্রা।

লেখক: বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সদস্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ।