
শওকত আলম, কক্সবাজার
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘হালিম গ্রুপ’। ক্যাম্প-২, ক্যাম্প-৭ এবং বালুখালীর ক্যাম্প-৮ (ইস্ট)-এ একের পর এক অপহরণ, চাঁদাবাজি, ইয়াবা কারবার ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে বাহিনী প্রধান আব্দুল হালিম ও তার অনুসারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘আরসা’ থেকে বেরিয়ে আব্দুল হালিম তার নিজের নামে ‘হালিম গ্রুপ’ গঠন করেন। ক্যাম্পের একাধিক মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, এ গ্রুপটি ক্যাম্পজুড়ে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।
আব্দুল হালিমের প্রকৃত নাম কেফাউত উল্লাহ। তিনি মিয়ানমারের মংডুর নাফ্ফুরা পাড়ার বাসিন্দা এবং আরসার সাবেক ক্যাম্প কমান্ডার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর তিনি আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর আরসা ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করেন হালিম।
ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, হালিম গ্রুপের সদস্যরা প্রকাশ্যে লুটপাট, ধর্ষণ, নির্যাতন চালাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে অপহরণ করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। ভয়ে কেউ এপিবিএন কিংবা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতেও সাহস পায় না।
সম্প্রতি ক্যাম্পে কয়েকটি পরিবারে হামলা চালিয়ে নারী সদস্যদের শ্লীলতাহানি ও বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় রোহিঙ্গারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হালিমের ডানহাত হিসেবে কাজ করছে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আইয়ুব নুর ওরফে টুপি নুর। তার নেতৃত্বে ইয়াবা ও অস্ত্র পাচারসহ চাঁদাবাজি ও রেশন ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে।
ক্যাম্পজুড়ে মাদক ব্যবসার জন্য হালিম গ্রুপ গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। প্রতিটি ক্যাম্পেই আলাদা বাহিনী নিয়োগ দিয়ে ইয়াবা বহন ও বিক্রি করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে জানা গেছে, ক্যাম্প-৭ ছাড়াও আশপাশের এলাকাগুলোতে হালিম গ্রুপ সক্রিয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিছুটা কমে এসেছিল, তবে সম্প্রতি তা আবার বেড়ে গেছে।
আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে মাস্টার মুহিব উল্লাহ, মুফতি হাসিম, হাফেজ শফিকসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডের মামলা রয়েছে।
বর্তমানে যেসব নেতার নেতৃত্বে ক্যাম্পে হালিম বাহিনী তৎপর, তারা হলেন—আমির রফিক, আবু আনাস, মৌলভী শোহাব, নুরুল বশর, হাফেজ সাইফুল ও রাহামত উল্লাহ।
স্থানীয় অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল হোসাইন বলেন, “কিছুদিন ক্যাম্পে সন্ত্রাস কমলেও এখন আবার হালিম বাহিনী তৎপর হচ্ছে, যা স্থানীয়রাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।”
এ বিষয়ে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিরাজ আমিন জানান, “যে কোনো গ্রুপ যদি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন করার চেষ্টা করে, তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।”