
মোঃ আবু কাওছার মিঠু, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মঙ্গলখালী এলাকায় এসিআই সল্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এসিআই সল্ট রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে পাউবোর ২২১ শতাংশ জমি দখল করে কারখানা পরিচালনা করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসিআই সল্ট লবন কোম্পানিটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৮ বিঘা জমি দখল করেছে। অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটি স্থানীয় প্রভাবশালী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আলমাসের মাধ্যমে ও নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এই জমি দখল করেছে। এছাড়াও, তারা লবণ উৎপাদনের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে বলেও অভিযোগ আছে। স্থানীয়দের দাবি,লবণের কণা বাতাসে মিশে আশপাশের ঘরবাড়ির টিনে মরিচা ধরে যাচ্ছে এবং কৃষিজমিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এত গুরুতর পরিবেশ দূষণের পরও রহস্যজনকভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার এসিআই সল্টের কারখানার লাইসেন্স নবায়ন করে যাচ্ছে। অধিদপ্তর দাবি করছে, সব শর্ত পূরণ হলে তবেই লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস্তবে কারখানার কার্যক্রম কোনো শর্তই মানছে না।
কারখানার কারণে স্থানীয়দের ভোগান্তি আগের মতোই আছে। লবণাক্ততার কারণে টিনের চালা নষ্ট হওয়া, ফসলি জমির ক্ষতি এবং নদীর পানি দূষণের ফলে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা এখনও ঘটছে।
স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষ করে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এই ঘটনায় নতুন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। বরং, স্থানীয় মানুষ, পরিবেশ এবং সরকারি সম্পত্তি—সবই এসিআই সল্টের কারখানার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে।পরিবেশ দূষণ এবং জনজীবনের ওপর প্রভাব এসিআই সল্টের কারখানার কারণে স্থানীয় পরিবেশ ও জনগণের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানিটি লবণ উৎপাদনের বর্জ্য সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিচ্ছে। এতে নদীর মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে, যা নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেছেন যে, লবণাক্ততার কারণে নদীর মাছ মারা যাচ্ছে এবং তাদের জীবিকা হুমকিতে পড়ছে। কারখানার বর্জ্য এবং লবণাক্ত পানি আশপাশের ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, আগে যে পরিমাণ ফসল হতো, এখন তা হচ্ছে না। কারখানার লবণ গুঁড়ো বাতাসে মিশে আশেপাশের বাড়িঘরের টিনের চালায় জমছে, যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই টিনে মরিচা ধরে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার ঘর সংস্কার করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আইন অনুযায়ী
২০০০ সালে পাউবোর মালিকানাধীন যদি কোনো জমি বা সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা বা তাতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই ধরনের অপরাধের জন্য দখলদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারি সম্পত্তি (দখল পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ, ১৯৭০ এই অধ্যাদেশ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে, তবে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। পাউবোর সম্পত্তিও এই আইনের আওতাভুক্ত।
এসিআই সল্ট লবন কোম্পানির ব্যবস্থাপক নিয়ামুল বাড়ি বলেন,এসিআই সল্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বৈধভাবে জমি লিজ নিয়েছে। তবে এই দাবির সাপেক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি তারা।
রূপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জয় বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যদি আমাদেরকে চিঠি ইস্যু করে থাকে তাহলে আমরা সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল আলম রাজিব বলেন, এসিআই সল্ট লবন কোম্পানিটি
পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিজ নবায়ন করার জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কিছু পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কোন ধরনের লিজ নবায়ন করা হয়নি। যদি লিজ কৃত সম্পত্তির মধ্যে স্থায়ী কোন ভবন নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।