
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরীর স্মরণ সভা আজ বৃহস্পতিবার সকালে রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈদ মোহাম্মদ রবিন শীষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার।
উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার শরীফুল্লাহ আস শামস এর সঞ্চালনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ড. কুদরত-ই-হুদা, দৈনিক যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি গাজী গিয়াস উদ্দিন ও লেখকপূত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহীদ হোসাইন প্রমূখ।
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের সৈয়দ বাড়ীর সৈয়দ আবদুল মজিদ ও মাতা ফতেমা খাতুনের সন্তান লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯০৩ইং সনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ইং সনের ১৮ সেপ্টেম্বরের এইদিনে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও মুক্তচিন্তার অগ্রদূত মোতাহের হোসেন চৌধুরীর স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে লেখকপূত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহীদ হোসাইনের হাতে মরণোত্তর সম্মাননা সারক তুলে দেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার।
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর স্মরণসভা উপলক্ষ্যে রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রতিযোগিতায় বই পর্যালোচনা বিষয়ে ফরিদ আহমেদ ভূইয়া একাডেমির দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান প্রথম স্থান, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সংস্কৃতি কথা প্রবন্ধের রিভিউতে জিয়াউল হক হাই স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার মিতু ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ক্লাইভ ভেলের সভ্যতা অনুবাদে রামগঞ্জ মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা জাহান মারিয়া প্রথম স্থান অর্জন করে।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী কুমিল্লার ইউসুফ হাই স্কুল থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ সম্পন্ন করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও দেশভাগের পর চট্টগ্রাম কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন।
শৈশব থেকেই সাহিত্যে আগ্রহী মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন, “বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন” এর সক্রিয় কর্মী এবং মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তার লেখনীতে মুক্তবুদ্ধি, মানবতা ও মননশীলতার ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। প্রবন্ধগ্রন্থ “সংস্কৃতি কথা” (১৯৫৮), অনুবাদগ্রন্থ “সভ্যতা” (১৯৬৫) এবং “সুখ” (১৯৬৫) বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছে।
প্রমথ চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথের প্রভাবিত গদ্যে তিনি লিখেছেন সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও মানবতার গভীর বিশ্লেষণ। তার কালজয়ী উক্তি “ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম” আজও আলোচনায় সমান প্রাসঙ্গিক।
তার সাহিত্যকীর্তি ও মুক্তচিন্তার বার্তা আজও বাঙালি সমাজকে পথ দেখায়।