
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঝালকাঠির রাজাপুরে পৃথক দুটি র্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
একটি সমাবেশ ও র্যালীর নেতৃত্ব দেন আমেরিকার নিউইয়র্ক দক্ষিণ মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সংবিধান কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ও সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আযম সৈকত, জাকারিয়া লিংকন ও বিএনপি নেতা কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান। তারা সবাই ঝালকাঠি-০১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। সমাবেশ শেষে বাইপাস মোড় থেকে শুরু হয়ে র্যালীটি মেডিক্যাল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ঝালকাঠি-০১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম জামালের নেতৃত্বে বাঘরী বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি র্যালী বের হয়। পরে তা রাজাপুর পাইলট স্কুল মাঠে আলোচনা সভায় পরিণত হয়।
নিউইয়র্ক দক্ষিণ মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা তার বক্তব্যে বলেন,“গত ১৭ বছর ধরে এক স্বৈরাচার বাংলাদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে। সেই কারণে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠান বা সমাবেশ আমরা দেশের মাটিতে সুষ্ঠুভাবে করতে পারিনি। আমরা এমন বাংলাদেশ আর দেখতে চাই না। বিএনপির নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত একটি রাষ্ট্র। বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ কিংবা দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নেই। তাই সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে চিনবেন, পাশে রাখবেন এবং তাদের সাথেই থাকবেন।”
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সংবিধান কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী তার বক্তব্যে বলেন, “রাজাপুরের মানুষ সবসময় যোগ্য ব্যক্তিকে চিনতে জানে এবং যোগ্য ব্যক্তিকেই ভোট দিতে পারে কিন্তু গত ১৭ বছর আমরা ভোট কেন্দ্রে যাইনি এবং ভোট দেইনি। তাই স্বৈরাচার তার ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্ষমতায় ছিলেন। আমরা যারা এখানে উপস্থিত, আমরা সবাই যোগ্যতার প্রতীক। বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী বা অসৎ ব্যক্তি টিকে থাকতে পারে না। আমরা সবাই সু-শিক্ষিত এবং সৎ রাজনীতির উদাহরণ। বাংলার মাটিতে অতীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। বিএনপির নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ বিশ্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেবে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। রাজাপুরের মানুষ সাহসী ও শিক্ষিত। বিগত স্বৈরাচারের আমলে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী গুম ও খুন হয়েছেন। ঝালকাঠিতে দুজন সিনিয়র নেতা ছিলেন তাদের মধ্যে একজন শাহজাহান ওমর, যিনি আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেছেন এবং তিনি একজন প্রতারক। তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। আগামীর বাংলাদেশ বিএনপির নেতৃত্বে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বিএনপি থেকে যাকে নমিনেশন দেওয়া হবে আমরা সবাই তার সঙ্গেই থাকব।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ও সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আযম সৈকত তার বক্তব্যে বলেন, “বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজের স্থান নেই। রাজাপুর থেকে একজনকে চাঁদাবাজির কারণে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরেকজন ২০১৮ সালে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই, বিএনপি তাদের জন্য নয়। আগামীতে রাজাপুর-কাঠালিয়ায় আমরা নতুন যোগ্য নেতৃত্ব চাই, কোনো অযোগ্য নেতৃত্ব চাই না। আগামীর নির্বাচনে রাজাপুরের জনগণ বিএনপি থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করবেন।”
দুটি কর্মসূচিকে ঘিরে প্রচারণা ও আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের বিভিন্ন সড়ক, মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়। কর্মসূচিগুলোতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।