
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুর
রোগবালাই কম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় ভেড়া বা গাড়ল পালনে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের খামারিরা।
ওয়েব ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন দরবেশপুরে অবস্থিত দেশি উন্নত জাতের ভেড়া প্রজনন খামার সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফাউন্ডেশনের আওতায় ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২’শ খামার এবং ৬’শ খামারি। যিনারা এখান থেকে উন্নত জাতের ভেড়া বা গাড়ল পালন করে সফল হয়েছেন। তবে দু’একজন এমন খামারি রয়েছেন, যিনারা নিজে দেখভাল না করে অন্যের উপর নির্ভরশীল কিংবা ওয়েব ফাউন্ডেশনের পরামর্শ ব্যতিরেকে মাচা বিহীন ভেড়া পালনে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন।
নতুন দরবেশপুর দেশি উন্নত জাতের ভেড়া প্রজনন খামারে প্যারাভেট হিসেবে দায়িত্বরত চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উজ্জল হোসেন জানান, খামারে বর্তমানে ২ টি জাতের ১২৫ টি ভেড়া রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে আফ্রিকান দামারা ও ইন্ডিয়ান ছোট নাগপুরী যেটি জামশেদপুর এলাকার উন্নত জাতের গাড়ল। তিনি জানান, প্রতি ৩ মাস পরপর কৃমিনাশক ও বছরে ২ বার পিপিআর ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ভেড়ার রোগশোক নেই বললেই চলে। তবে সামান্য কিছু জ্বর বা পায়খানা হলে তা স্বল্প ঔষধ খাওয়ালেই নিরাময় হয়ে যায়। তাছাড়া ভেড়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তেমন একটা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়না এবং অন্যান্য প্রাণির মতো মৃত্যুহার নেই বলা যায়। অপরদিকে মাচা পদ্ধতিতে ভেড়া বা গাড়ল পালনে ৮০℅ রোগবালাই মুক্ত থাকে। ভেড়ার হজম প্রক্রিয়াও ভালো। আর অন্য প্রাণি যেমন ছাগলের তুলনায় ভেড়া ঘাস, লতাপাতা ও গুল্ম জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। অন্যান্য খামারে এসব খাবারের পাশাপাশি ভেড়া মাঠে চরানো হলেও এ খামারে ট্রে-তে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর বাইরে রয়েছে খাবার মিশ্রণের জন্য পৃথক যায়গা। অবশ্য সকাল ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য খামারের মধ্যে খোলা জায়গাতেও এদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব ভেড়ার খাবার মিশ্রণ ও পরিবেশনের জন্যও নিয়োজিত রয়েছে ১ জন।
উজ্জল হোসেন জানান, অন্যান্য প্রাণির মাংসের চেয়ে ভেড়ার মাংসের চাহিদা বেশি। এর কিছু উপকারিতাও রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিরাও ভেড়ার মাংস খেতে পারে। এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণও কম।
তিনি আরো জানান, ভেড়া পালন লাভজনক। মৃত্যুহার কম থাকায় বাচ্চা উৎপাদন সঠিকভাবে হয়ে থাকে। বড় সুবিধা ছাগলের মতো পাল দিতে হয়না। ভেড়া ২০/৩০ টা একত্রে থাকায় সাইলেন্স হিটে সময় মতো দলে থাকা পাঠাতেই প্রাকৃতিকভাবে পাল দিয়ে দেয় এবং প্রসবের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক নিয়মে হয়ে থাকে। একটি ভেড়া ভালো পরিবেশে প্রতি বছরে এবং কিছু সময় ১৩/১৪ মাসে ২ বার বাচ্চা প্রসব করে। প্রতিটা ভেড়া ১/২ টি বাচ্চা, কোনো কোনো সময়ে ৪ টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। যা ৬ মাস পর প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় প্রায় ২০ কেজি। যেখানে ১ টি ছাগলের ওজন হয়ে থাকে ১৫/১৬ কেজি।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে মাত্র ৫০ টি মা ভেড়া দিয়ে এ খামারের কাজ শুরু করা হয়। পরে আরো ২০ টি ভেড়া কেনা হয়। শুধু মেহেরপুরেই নয় দেশের কয়েকটি জেলায় এমনকি নোয়াখালীতেও ওয়েব ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত খামার রয়েছে। ছাগলের পাশাপাশি ভেড়ার মাংসেরও ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে ভেড়া। খামার পর্যায়েই এর বেচাকেনা বেশি। কুরবানি ঈদেও ভেড়ার ব্যাপক চাহিদা। চলতি বছরে ৪০/৪৫ টি ভেড়া বিক্রি করা হলেও এখনো প্রায় ৬০ টির মতো ভেড়া কুরবানিতে বিক্রির উপযোগী রয়েছে। তাছাড়া ভেড়া পালনে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেও রয়েছে বেশ কিছু ভেড়া। একত্রে ২০/৩০ ভেড়া কিনলেও এখান থেকে সরবরাহ করা সম্ভব। নতুন উদ্যোক্তারা এখান থেকে ৩ মাস বয়সী ভেড়া সাড়ে ৬/৭ হাজার টাকায় এমনকি ৬/৭ মাসের গাড়ল ৭’শ ৮০ থেকে ৮’শ টাকা কেজি দর হিসেবেও কিনতে পারেন। ভেড়া পালনের জন্য মাচা পদ্ধতিতে একত্রে ২০/৩০ ভেড়া পালন উওম। যিনারা ওয়েব ফাউন্ডেশন হতে ভেড়া কিনেছেন তিনাদের ভেড়া পালনে অনাবাসিক প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ এবং মাচা সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।
নতুন দরবেশপুর দেশি উন্নত জাতের ভেড়া খামারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব খামারিরা এখান থেকে ডেভেলপ হয়েছে কিংবা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পেয়েছেন, তিনারা যেন এখান থেকে উন্নত জাতের ছোট নাগপুরী গাড়ল সংগ্রহ করে এটির প্রসার ঘটাতে পারে।
উজ্জল হোসেন নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে জানান, তিনার মাধ্যমে প্রায় ২’শ খামারি গাড়ল পালনে সফল হয়েছে। যিনারা এখন অবধি নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।
তিনি জানান, অন্যান্য প্রাণি অপেক্ষা গাড়ল পালনে ঝুঁকি কম, মৃত্যু হারও কম। অল্প সময়ে গাড়ল পালনে সফল হওয়া যায়। ২০/৩০ টি গাড়ল পালনে ১ থেকে দেড় বছরে ধীরে ধীরে সাফল্যের শিখরে পোঁছানো সম্ভব।