Dhaka , Saturday, 13 September 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
চোখের আলো ফিরে পাওয়া রোগীদের মাঝে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিনামুল্যে চশমা বিতরণ জুলাই চেতনা বাস্তব জীবনে প্রতিফলনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে — জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি রামগঞ্জে আলোচিত জামায়াত নেতা হত্যার মূল আসামি কামাল গ্রেফতার নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণের মৃত্যু,আহত-১ বেতাগী জামায়াতে সেক্রেটারির বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি-যৌথ বাহিনী তদন্ত  তিতাসে দুই শত পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার চৌমুহনীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা এক যুবকের মৃত্যু  হাতিয়ায় নদী ভাঙন রোধকল্পে ফেলা বালিভর্তি জিও ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ, স্থানীয়দের বিক্ষোভ পাবনায় চাঁদা না দেয়ায় মালয়েশিয়া প্রবাসীর বাড়িতে যুবদল নেতার হামলা, গুলিবিদ্ধ দুই  বিএনপি নেতা  দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা এলাকায় মিজান-রায়হান আতঙ্কে,দল ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা  ঝালকাঠিতে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ মেধায় চাকরি পেল ৯ জন, অপেক্ষমান ২ জন ঝালকাঠি আদালতে যুবককে চাকুর কোপ, গুরুতর আহত রূপগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি   ৮ বিঘা জমি দখলে এসিআই সল্ট, নীরব প্রশাসন ৮ লাখ মানুষের চারজন চিকিৎসক, বেহাল স্বাস্থ্যসেবা মধুপুরে ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ মধুপুরে গণপিটুনিতে অটোরিকশা চোর নিহত আগামীর চ্যালেঞ্জিং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষা শিক্ষিত করতে হবে ; মাহবুব আলমগীর আলো ‘আপ বাংলাদেশ’ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ) সিলেট জেলা শাখার ৫০ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্ছেদ আতঙ্কে উত্তপ্ত কক্সবাজার: হাজারো মানুষের বিক্ষোভ টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ৩০ হাজার ইয়াবা ও মোটরসাইকেলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কক্সবাজারে মাদকাসক্ত চাচার দার কোপে ভাতিজি নিহত শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে নবীর আদর্শই রোল মডেল: শায়খ আহমাদুল্লাহ হালদা থেকে ১৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার। নগরীর কোচিং সেন্টারগুলো নীতিমালার আওতায় আনতে হবে :- মেয়র ডা. শাহাদাত দুর্গাপুরে শিশুদের টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সংবাদ সম্মেলন   হেল্থ অ্যান্ড ফুড সেফটি অ্যাসোসিয়েশন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ফ্রি হেলথ ক্যাম্প- ২০২৫ এর আয়োজন করেছে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরত এলেন সন্দীপ ঘোষ; যশোরের মনিরামপুরে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে অপহরণ, মুক্তিপণ ৫ লাখ টাকা নোয়াখালীতে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের নামে খাল ভরাটের অভিযোগ লালমনিরহাট ব্যাটালিয়নের অভিযানে সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল ও মোটরসাইকেল উদ্ধার চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে চমেক শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে:- ডা. শাহাদাত হোসেন

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরত এলেন সন্দীপ ঘোষ; যশোরের মনিরামপুরে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে অপহরণ, মুক্তিপণ ৫ লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 05:36:38 pm, Wednesday, 10 September 2025
  • 32 বার পড়া হয়েছে
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর:
বাংলাদেশের মফস্বল জনপদের মানুষ এখনও প্রতিদিন নানান ধরনের ভয়, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছে। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে গ্রামগঞ্জের মানুষ নিরাপদ জীবনের আশায় ঘর বাঁধলেও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপহরণের অমানবিক ছোবল এসে বারবার তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা। এই প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরছি সন্দীপ ঘোষ, মনিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান—যিনি ৭ই সেপ্টেম্বর অপহরণের শিকার হয়েছিলেন এবং অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।
সেদিনের দুপুরটা ছিল একেবারে স্বাভাবিক। যশোরের আকাশে তখনো নীলিমা ঝলমল করছিল। দুপুর আড়াইটার সময় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ তার ভাড়া বাড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরিবার তখন বাড়িতে ছিল না। স্ত্রী শুক্লা কোথাও কাজে ব্যস্ত, আর চার বছরের ছোট্ট কন্যা শ্রেয়া তার নানীর কাছে।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই দেখা গেল কয়েকজন অপরিচিত লোক, আর তাদের সাথে বাড়িওয়ালার ছেলে। তাদের মধ্যে একজন ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠলো, “আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।” প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। কেন, কোথায়, কী কারণে—এসব জানতে চাইলেও কোনো উত্তর মিললো না। আর বাড়িওয়ালার ছেলে নিজেই বললো—“যান, সমস্যা হবে না।” কিন্তু যে যাচ্ছে, সে জানে—এখানেই শুরু হতে যাচ্ছে এক অজানা যন্ত্রণা।
অপরিচিতদের সঙ্গে পা মেলাতেই সন্দীপ ঘোষের বুকের ভেতর হাজারো স্মৃতি ভিড় জমালো। চার বছরের শ্রেয়া, যে বাবাকে ছাড়া ঘুমাতে জানে না। স্ত্রী শুক্লা, যার কান্নাভেজা মুখ সবসময় চোখে ভেসে ওঠে। এক অদ্ভুত আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠলো। মনে হলো—“আমি যদি আর না ফিরি, তবে কি ওরা বাঁচবে?”
অপহরণকারীরা তাকে নিয়ে গেল এক অজানা আড্ডাখানায়। সেখানে শুরু হলো নির্যাতন। মুঠোফোনে কিছু খুঁজতে খুঁজতে তাকে একের পর এক আঘাত করা হলো। অন্যদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো পরিবারে। স্ত্রী শুক্লা আর আত্মীয়স্বজন মুহূর্তেই দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
এর মধ্যেই সন্দীপ ঘোষের মোবাইল ফোনে আসে ভয়াল বার্তা। ফোন ধরে এক অপহরণকারী জানালো—“সন্দীপকে বাঁচাতে চাইলে ৫ লাখ টাকা পাঠিয়ে দে।” ফোনের অপর প্রান্তে বাসিত, যিনি সন্দীপ ঘোষের নিকটজন। মুহূর্তেই শরীর কেঁপে উঠলো তার। মাথা ঘুরে গেল। কীভাবে সম্ভব? কিন্তু বাঁচাতে তো হবেই।
সব চেষ্টা ব্যর্থ হতে বসেছিল। ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক এক শীর্ষ নেতা। তিনি কথা দিলেন—“কোনো ক্ষতি হতে দেব না।” প্রকৃতপক্ষে সেই কথার কারণেই সন্দীপ ঘোষের জীবন বেঁচে যায়। তবে অপহরণকারীদের দাবি মতো টাকা দিয়ে তবেই মুক্তি মিললো। আর তখনই হুমকি দেওয়া হলো—“এই ঘটনা যেন বাইরে না যায়, ওই নেতার কানে যেন না পৌঁছায়।”
মুহূর্তের মধ্যে স্বাভাবিক এক পরিবারে নেমে এসেছিল অন্ধকার। স্ত্রী শুক্লা বারবার ভেঙে পড়ছিলেন। চার বছরের শ্রেয়া কিছুই বুঝতে না পারলেও সবার উদ্বিগ্ন মুখ দেখে কেঁদে উঠছিল। অবশেষে স্বামীকে ফিরে পেয়ে শুক্লার চোখ ভিজে গেল কৃতজ্ঞতায়। ছোট্ট শ্রেয়া বাবাকে আঁকড়ে ধরে বললো—“বাবা, তুমি কোথায় ছিলে?” এক মুহূর্তে যেন মৃত্যু থেকে ফিরে এলো একটি পরিবার।
সন্দীপ ঘোষের জীবন বেঁচে গেল। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—যদি সেই সাবেক ছাত্রনেতা এগিয়ে না আসতেন? যদি টাকা জোগাড় না হতো? যদি অপহরণকারীরা হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যেত? তাহলেই কি শুক্লা আজ বিধবা হতেন না? শ্রেয়া কি পিতৃহীন হয়ে যেত না?
আজ সন্দীপ ঘোষ ফিরে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু দেশের হাজারো মানুষ প্রতিদিন এভাবেই অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের কবলে পড়ে। কারো জীবন বাঁচে, কারো আর ফেরার সুযোগ থাকে না। মফস্বল শহরে প্রভাবশালী মব মারানিদের এই তাণ্ডব প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীরব আতঙ্কে ডুবে থাকে সাধারণ মানুষ।
কেন বাড়ছে এই অপরাধ? অর্থনৈতিক বৈষম্য – যুব সমাজের অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অর্থ উপার্জনের সহজ পথ ভেবে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রশ্রয় – অনেক সন্ত্রাসী রাজনৈতিক ছায়াতলে লালিত-পালিত হয়। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা – সময়মতো মামলা না হওয়া বা প্রভাবশালীদের চাপের কারণে অপরাধীরা অনেক সময় ছাড় পেয়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয় – নৈতিকতার অভাব, পরিবারে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব তরুণদের অপরাধপথে ঠেলে দিচ্ছে।
এখন কী করণীয়? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রশ্রয়হীন অপরাধ দমন করতে হবে। সচেতন নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি ঘটনার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ ভাগ্যবান। তিনি ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। কিন্তু প্রতিটি ভুক্তভোগীর ভাগ্য কি এমন হয়? আমরা যদি নীরব থাকি, তবে আগামীকাল এই ভয়াল ছোবল কার ঘরে আসবে তা কেউ জানে না। তাই আজই সময়—প্রতিবাদ জানানোর, অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। কারণ, প্রতিটি জীবনের মূল্য আছে। প্রতিটি পরিবার বাঁচার অধিকার রাখে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চোখের আলো ফিরে পাওয়া রোগীদের মাঝে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিনামুল্যে চশমা বিতরণ

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরত এলেন সন্দীপ ঘোষ; যশোরের মনিরামপুরে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে অপহরণ, মুক্তিপণ ৫ লাখ টাকা

আপডেট সময় : 05:36:38 pm, Wednesday, 10 September 2025
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর:
বাংলাদেশের মফস্বল জনপদের মানুষ এখনও প্রতিদিন নানান ধরনের ভয়, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছে। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে গ্রামগঞ্জের মানুষ নিরাপদ জীবনের আশায় ঘর বাঁধলেও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপহরণের অমানবিক ছোবল এসে বারবার তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা। এই প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরছি সন্দীপ ঘোষ, মনিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান—যিনি ৭ই সেপ্টেম্বর অপহরণের শিকার হয়েছিলেন এবং অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।
সেদিনের দুপুরটা ছিল একেবারে স্বাভাবিক। যশোরের আকাশে তখনো নীলিমা ঝলমল করছিল। দুপুর আড়াইটার সময় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ তার ভাড়া বাড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরিবার তখন বাড়িতে ছিল না। স্ত্রী শুক্লা কোথাও কাজে ব্যস্ত, আর চার বছরের ছোট্ট কন্যা শ্রেয়া তার নানীর কাছে।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই দেখা গেল কয়েকজন অপরিচিত লোক, আর তাদের সাথে বাড়িওয়ালার ছেলে। তাদের মধ্যে একজন ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠলো, “আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।” প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। কেন, কোথায়, কী কারণে—এসব জানতে চাইলেও কোনো উত্তর মিললো না। আর বাড়িওয়ালার ছেলে নিজেই বললো—“যান, সমস্যা হবে না।” কিন্তু যে যাচ্ছে, সে জানে—এখানেই শুরু হতে যাচ্ছে এক অজানা যন্ত্রণা।
অপরিচিতদের সঙ্গে পা মেলাতেই সন্দীপ ঘোষের বুকের ভেতর হাজারো স্মৃতি ভিড় জমালো। চার বছরের শ্রেয়া, যে বাবাকে ছাড়া ঘুমাতে জানে না। স্ত্রী শুক্লা, যার কান্নাভেজা মুখ সবসময় চোখে ভেসে ওঠে। এক অদ্ভুত আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠলো। মনে হলো—“আমি যদি আর না ফিরি, তবে কি ওরা বাঁচবে?”
অপহরণকারীরা তাকে নিয়ে গেল এক অজানা আড্ডাখানায়। সেখানে শুরু হলো নির্যাতন। মুঠোফোনে কিছু খুঁজতে খুঁজতে তাকে একের পর এক আঘাত করা হলো। অন্যদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো পরিবারে। স্ত্রী শুক্লা আর আত্মীয়স্বজন মুহূর্তেই দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
এর মধ্যেই সন্দীপ ঘোষের মোবাইল ফোনে আসে ভয়াল বার্তা। ফোন ধরে এক অপহরণকারী জানালো—“সন্দীপকে বাঁচাতে চাইলে ৫ লাখ টাকা পাঠিয়ে দে।” ফোনের অপর প্রান্তে বাসিত, যিনি সন্দীপ ঘোষের নিকটজন। মুহূর্তেই শরীর কেঁপে উঠলো তার। মাথা ঘুরে গেল। কীভাবে সম্ভব? কিন্তু বাঁচাতে তো হবেই।
সব চেষ্টা ব্যর্থ হতে বসেছিল। ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক এক শীর্ষ নেতা। তিনি কথা দিলেন—“কোনো ক্ষতি হতে দেব না।” প্রকৃতপক্ষে সেই কথার কারণেই সন্দীপ ঘোষের জীবন বেঁচে যায়। তবে অপহরণকারীদের দাবি মতো টাকা দিয়ে তবেই মুক্তি মিললো। আর তখনই হুমকি দেওয়া হলো—“এই ঘটনা যেন বাইরে না যায়, ওই নেতার কানে যেন না পৌঁছায়।”
মুহূর্তের মধ্যে স্বাভাবিক এক পরিবারে নেমে এসেছিল অন্ধকার। স্ত্রী শুক্লা বারবার ভেঙে পড়ছিলেন। চার বছরের শ্রেয়া কিছুই বুঝতে না পারলেও সবার উদ্বিগ্ন মুখ দেখে কেঁদে উঠছিল। অবশেষে স্বামীকে ফিরে পেয়ে শুক্লার চোখ ভিজে গেল কৃতজ্ঞতায়। ছোট্ট শ্রেয়া বাবাকে আঁকড়ে ধরে বললো—“বাবা, তুমি কোথায় ছিলে?” এক মুহূর্তে যেন মৃত্যু থেকে ফিরে এলো একটি পরিবার।
সন্দীপ ঘোষের জীবন বেঁচে গেল। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—যদি সেই সাবেক ছাত্রনেতা এগিয়ে না আসতেন? যদি টাকা জোগাড় না হতো? যদি অপহরণকারীরা হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যেত? তাহলেই কি শুক্লা আজ বিধবা হতেন না? শ্রেয়া কি পিতৃহীন হয়ে যেত না?
আজ সন্দীপ ঘোষ ফিরে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু দেশের হাজারো মানুষ প্রতিদিন এভাবেই অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের কবলে পড়ে। কারো জীবন বাঁচে, কারো আর ফেরার সুযোগ থাকে না। মফস্বল শহরে প্রভাবশালী মব মারানিদের এই তাণ্ডব প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীরব আতঙ্কে ডুবে থাকে সাধারণ মানুষ।
কেন বাড়ছে এই অপরাধ? অর্থনৈতিক বৈষম্য – যুব সমাজের অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অর্থ উপার্জনের সহজ পথ ভেবে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রশ্রয় – অনেক সন্ত্রাসী রাজনৈতিক ছায়াতলে লালিত-পালিত হয়। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা – সময়মতো মামলা না হওয়া বা প্রভাবশালীদের চাপের কারণে অপরাধীরা অনেক সময় ছাড় পেয়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয় – নৈতিকতার অভাব, পরিবারে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব তরুণদের অপরাধপথে ঠেলে দিচ্ছে।
এখন কী করণীয়? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রশ্রয়হীন অপরাধ দমন করতে হবে। সচেতন নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি ঘটনার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ ভাগ্যবান। তিনি ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। কিন্তু প্রতিটি ভুক্তভোগীর ভাগ্য কি এমন হয়? আমরা যদি নীরব থাকি, তবে আগামীকাল এই ভয়াল ছোবল কার ঘরে আসবে তা কেউ জানে না। তাই আজই সময়—প্রতিবাদ জানানোর, অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। কারণ, প্রতিটি জীবনের মূল্য আছে। প্রতিটি পরিবার বাঁচার অধিকার রাখে।