উৎপল রক্ষিত
গাজীপুর প্রতিনিধি।।
মালটা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কালমেঘা গ্রামের আব্দুল করিম আজাদ। তিনি ১০ বছর ধরে মালটা চাষ করে আসছেন। ১৫ বিঘা জমিতে ২ হাজার ৪ শত মালটা বপন করেছেন। মালটা বাগানে নিয়মিত ১১- ১২ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আব্দুল করিম আজাদ জানান- কিছু সংখ্যক মালটা চাষী অপরিপক্ক মালটা বাজারে বিক্রি করে মালটার সুনাম নষ্ট করছেন।মালটা চাষে
তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন গ্রীন বাংলা। এ ছাড়াও কৃষি উপ সহকারী সাইদুর রহমান পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশে দিনে দিনে মালটা চাষ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। মালটা প্রায় সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। মালটাতে রয়েছে ভিটামিন সি- ভিটামিন বি- ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এবং চর্বি মুক্ত ক্যালরি- ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে মালটার বিকল্প নেই । বাংলাদেশের বারি-১ জাতের মালটা চাষ বেশি হয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে- মালটা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। নিয়মিত যারা মালটা খায় তাদের দাঁতের রোগ অনেক কম হয়। ঠোঁটে ঘা- জ্বরের সময় জিব্বা অনেক রোগ ভালো করে। মালটা সর্দি- নাক বন্ধ থাকা ট্রান্সফারের সমস্যা গলা ব্যথা- জ্বর জ্বর ভাব হাসি কাঁশি- মাথা ব্যথা- ঠান্ডা সহ বিভিন্ন রোগের মালটা উপকার করে। এছাড়াও মালটাতে উপস্থিত- লিমিনয়েড,মূখ- ত্বক- ফুসফুস ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। মালটায় হেসপেরিডিন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারনে এটি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্রনে সাহায্য করে।এ্যান্টি-একসিডেন্ট থাকার কারনে ওজন কমাতে সাহায্য করে।মালটা শরীরের ক্ষতিকর কোলেষটেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
গ্রীষ্ম ও শীতকালের জলবায়ু মালটা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মালটা গাছ আলো পছন্দ করে। মালটা গাছ ছায়ায় বৃদ্ধি ও গুণগত মান কমে যায়। সারাদিন রোদ পড়ে বৃষ্টির পানি জমে না, এ রকম জায়গায় মালটা চাষ ভালো হয়। মালটা চাষ করতে জমিতে আগাছা পরিষ্কার ও আশে পাশের উঁচু গাছ থাকলে ডালপোড়া ছেঁটে দিতে হবে।
কলমের মাধ্যমে মালটা বংশবিস্তার করা যায়। তবে বীজ ছাড়া আমাদের দেশে মাটি আবহাওয়া সাথে সমন্বয় করে মালটা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। তাই মালটা কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করাই ভালো । জাম্বুরার বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে যদি তার মালটার কলম স্হাপন করা হলে গাছ বেশিদিন স্থায়ী হয়।
শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত মালটার কাছে জল দেওয়া প্রয়োজন হয়। মালটা গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেজন্য দ্রুত নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ লাগানোর পর মালটা ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে গাছকে নির্দিষ্ট আকারে দিতে হবে। যাতে কাজ উচু না হয়ে চারিদিকে সরাতে পারে। মালটা ফলের পরিপক্ষতা সাথে সাথে ফলের গারো সবুজ বর্ণ হালকা সবুজ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের মালটা চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ রেড়েছে। রোগ বলাই কম থাকায় উৎপাদন লাভ বেশি হয়। এ কারণে দিনে দিনে মালটা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আব্দুল করিম আজাদ আরো জানান- তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সৌরভ বর্তমানে অনার্সে পড়ছে। ছেলেকে চাকরি পিছনে না ঘুরে নিজে তাকে মালটা চাষ করা শিখাবেন।
তিনি আশে পাশের এলাকার মানুষকে মালটা চাষের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ড. চিওরঞ্জন রায় মনে করেন-, দেশের মালটা চাষীদের প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ করতে হবে। মালটা চাষীদের উন্নত মানের চারা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। মানব দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে মালটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা থাকে।