ইবি প্রতিনিধি।।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরী বিভাগে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাত ১১টায় এম্বুলেন্স দিতে দেরি হওয়ায় মাদকাসক্ত অবস্থায় এ ভাংচুর করেন পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ১০ টার দিকে মাদকাসক্ত অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে মেডিকেলে আসেন তিনি। এসময় দেয়ালে লাথি দেয়া সহ বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। বুকে ব্যাথার কথা বলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে চাইলে কর্ত্যবরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন তাকে ইনজেকশন দেন৷ ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি সেখানেই বসে থাকেন এবং তাকে এম্বুলেন্সে করে কুষ্টিয়া পাঠানোর জন্য ডাক্তারের সাথে জোরজুরি করতে থাকেন। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডি অনুমতি না দেওয়ায় এম্বুলেন্স দিতে না চাইলে ডাক্তারের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করেন তিনি। এছাড়া এম্বুলেন্স ড্রাইভারের শার্টের কলার ধরে মারধরও করেন। এরপরও এম্বুলেন্স না দিলে তার সাথে থাকা আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আতিক আরমান ও সালমান আজিজসহ মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ভাংচুর শুরু করেন। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাক্তার তাকে ডাক্তার তাকে কুষ্টিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্যাথলজি চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তিনি মেডিকেলে এসেই দেয়ালে লাথি দেয়া ও অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। অসুস্থতার জন্য তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়। পরে তিনি কর্তব্যরত ডাক্তারকে কুষ্টিয়া পাঠাতে জোর করেন। এতে একটু সময় লাগায় তিনি ভাংচুর করতে থাকেন।’
এম্বুলেন্স ড্রাইভার মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে সে (কাব্য) ফোন দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে এবং পরিচয় জানতে চাইলে হুমকি দিতে থাকে। পরে খোঁজাখুঁজি করে তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে বিএম ছাত্রাবাসের পাশে ঘাসের উপর পড়ে থাকা অবস্থায় পাই। সেখান মেডিকেলে নিয়ে আসার পর ডাক্তার তাকে ইঞ্জেকশন দেন। এর একটু পরই তিনি এম্বুলেন্সে নিয়ে কুষ্টিয়া যেতে চান। কিন্ত প্রক্টরিয়াল বডি অনুমতি না দেয়ায় আমি গাড়ি দিতে রাজি না হলে আমাকে শার্টের কলার ধরে মারধর করে।’
চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে এসে জরুরি বিভাগের চেয়ার টেবিলগুলো ভাংচুর অবস্থায় পেয়েছি। পরে যোগাযোগ করে দ্রুত প্রশাসনকে জানিয়েছি। গতকাল রাতের ঘটনায় কর্তব্যরত ডাক্তারসহ যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বক্তব্য নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিবো। তাছাড়া এখন পুলিশ তদন্ত করছে এবং এর একটি সুষ্ঠু বিচার আমি দাবি করছি।’
এদিকে প্রশাসনকে অবহিত করার পর উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন আজাদ এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, ভাংচুরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছিনতাই, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া ও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ায় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি৷ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় তার নামে একটি মামলাও রয়েছে। সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুস সালাম সেলিমের সাথে খারাপ আচরণ ও গলায় ছুরি ধরার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনি ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহের সাথেও জড়িত বলে জানা গেছে।