এস চাঙমা সত্যজিৎ
বিশেষ প্রতিনিধি।।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবেশ একদিকে যেমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভরপুর আর অন্যদিকে তেমনি দুর্গম এলাকার কারণে সীমাহীন দুঃখ কষ্টের দিন যাপনের জীবন প্রবাহের সংগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেদিকে তাকানো যায় চিরসবুজের পাহাড় পর্বত, বনভূমি, বনাঞ্চল এবং ছড়া-ছড়িতে ভরপুর। তাই সেখানে নেই কোন বিশুদ্ধ পানির পান করার রিংওয়েল, ডিপ টিউবওয়েল। এই দুর্গম পাহাড় এলাকায় বিশুদ্ধ পানি বলতে বুঝায় কুয়ার পানি। এই কুয়ার পানিই একমাত্র পাহাড়িদের ভরসা। বিশুদ্ধ পানির অভাবের কারণে বাধ্যতামূলক হয়ে ছড়ার পানি অথবা কুয়ার পানি পান করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এখন পাহাড়ের ছরা-ছরি বা ঝিরি থেকে যদি পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে না পারি তা হলে একসময় এই ঝিরির পানিও থাকবে না। কারণ পাথর থাকলে পানি থাকবে। আর পানি থাকলে বাঁচবে বন ও পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষের জীবন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার দুর্গম অঞ্চলের বর্মাছড়ি ইউনিয়ন । এই বর্মাছড়ি ইউনিয়নের এলাকায় “”আর্যকল্যান বন বিহার”‘ নামে একটি বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০০ সালে। বর্মাছড়ি ইউনিয়নের এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী, গাছ-বাঁশের উপর নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে থেকে নেই কোন চাকরিজীবী, ব্যবসাজীবি ও ধনাঢ্য মানুষ। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতার কারণে রিংওয়েল করতে পারছে না তারা। তাই সেই কারণে বাধ্য হয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে না। এমন কি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর্য বন বিহারেও বিশুদ্ধ পানির অভাবের কারণে বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু-শ্রামণেরা কুয়ার পানি পান করতে হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সর্ব-দক্ষিণে বর্মাছড়ি ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের উত্তরে, লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন, দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন ও কাঞ্চন নগর ইউনিয়ন অবস্থিত।
প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যার সময়ে বিহারের অবস্থানরত ভিক্ষু-শ্রামণদের জন্য কুয়া থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এই পানি সংগ্রহ করতেও সময় লাগে প্রায় আধ ঘন্টা।
আজ কয়েকজন কিশোর-কিশোরী বাকছড়ি গ্রামের কুয়া থেকে বিহারের জন্য খাওয়ার পানি এইভাবে সংগ্রহ করে নিয়ে আনছেন।