
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের দেহলা গ্রামের মনির হোসেন সহ পরিবারের ৩ জন ঢাকায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে ৩ জনেরই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ১লা জুলাই তাদের মরদেহ দেহলা গ্রামে এসে পৌঁছেছে। সকাল ৯টায় ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের আথাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ সময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এর আগেএলাকা বাসি এ রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করার জন্য ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধন করেছে । উল্লেখ্য যে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা বেপারী বাড়ির সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৩৮) ও ১৮ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমকে নিয়ে চিকিৎসারজন্য ঢাকা যান। চিকিৎসা জন্য মনির হোসেন ও তার স্ত্রী ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসা শেষে রাতে পার্শ্ববর্তী একটি আবাসিক হোটেল ‘সুইট স্লিপ’-এ অবস্থান করেন তাঁরা। রাত ১১টার দিকে একসঙ্গে রাতের খাবার খান তারা তিনজনই।
রবিবার সকালে তিনজনকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আদ-দ্বীন মেডিকেলে নেয়া হলে সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে একে একে তিনজনই মৃত্যুবরণ করেন।
এই আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু এলাকায় চরম শোক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। এলাকাবাসীর অনেকেই ধারণা করছেন, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুতে দেহলা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার সাধারণ মানুষ এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মূত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহত মনির হোসেন এর তত্ত্বাবধায়ক চাচা রফিককে আটক করেছে পুলিশ।
মনির হোসেন এর সাথে চাচার ব্যবসায়িক বিরোধ কিংবা পারিবারিক কোন বিরোধ আছে কি না পুলিশের তদন্ত চলমান।
রাজধানীর মগবাজারের হোটেল সুইট স্লিপের সি,সি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ২৮ জুন বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে সৌদি প্রবাসী মনির ও তার তত্ত্বাবধায়ক চাচা রফিক হোটেলে আসেন রুম ভাড়া নিতে। রুম ভাড়া করে চলে যান তারা।
১৫ মিনিট পর মনির হোসেন ও তার স্ত্রী সপ্না আক্তার, প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমুল হোসেনকে সাথে নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন। পরেই রফিক আবাসিক হোটেল এর
পাশে একটি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে মনির হোসেনের রুমে নিয়ে আসেন।
পরদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রফিক অসুস্থ অবস্থায় মনিরের স্ত্রীকে হোটেলের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যান হাসপাতালে।
এরপর সাড়ে ১১টার দিকে রফিক তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে আবারো হোটেলে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর মনিরকেও নেয়া হয় হাসপাতালে।
ঘণ্টাখানেক পর মনির হোসেন এর সন্তানকে নেন হাসপাতালে।
এত কিছুর পরেও রফিক একবার জানায়নি হোটেল কর্তৃপক্ষকে। তিনজন মারা যাওয়ার পর জানতে পারে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
ডিএমপির রমনা বিভাগ উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, অসুস্থ তিনজনকে হাসপাতালে নিতে রফিকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বও।
পুলিশের সুরতাহাল রিপোর্টে বিষক্রিয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ময়নাতদন্তেও চিকিৎসকরা বিষক্রিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছেন। পুরোপুরি নিশ্চিতে সংগ্রহ করা হয়েছে ভিসেরা ও রক্ত।প্রবাসী মনির সৌদিতে থাকলেও ঢাকায় তার বাড়ি ছিল। লক্ষ্মীপুরে ছিল বাসের ব্যবসাও। সব কিছুই খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। এদিকে মনিরের দুই ভাই দেশের বাইরে থেকে ফিরলেই এ ঘটনায় মামলা দায়ের হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা।