ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম।।
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পরিবেশ ধ্বংস করছে হালদা পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ দুইটি ইটভাটা। এই দু’টি ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে নদীর পাড়ে মাটি ও যান্ত্রিক নৌযানের আঘাতে মরছে মা মাছ- ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে- রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামিপাড়া এলাকার অংশে হালদা নদীর পাড় ঘেঁষে এ.আলী নামে একটি ইট ভাটায় ভেকু দিয়ে নদীর পাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। একিভাবে উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখীল গ্রামে শান্তি ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটায় হালদা নদীর জেগে উঠা চর কেটে নৌকায় পরিবহন করে ইট তৈরি জন্য মাটি স্তূপ করে রাখার দৃশ্যও চোখে পড়ে। এভাবে এই দুইটি অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করছে হালদার পরিবেশ।গত ২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর এ. আলী ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দেন। বছরপার হতে না হতেই পুনরায় এ. আলী ইটভাটা চালু করা হয়।এই দু’টি ইটভাটার মাটি জোগানের জন্য নদীর পাড় কাটা, বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি আনা এবং প্রস্তুতকৃত ইট সরবরাহ কাজে যান্ত্রিক নৌযানের ব্যবহার- ইটভাটা শ্রমিকদের জন্য নদীর পাড়ে স্থাপনকৃত খোলা শৌচাগারসহ নানান কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হালদা নদীর মা মাছ তথা জীববৈচিত্র্য। এ জন্য নদীপাড়ের ইটভাটা বন্ধে জোর দাবি জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।
এ. আলী ব্রিকস ও শান্তি ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটার মালিকরা রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গ্রামের অংশে হালদার চর, উরকিরচর ইউনিয়নের পশ্চিম আবুরখীল এলাকায় পুরাতন হালদা নদীর চর থেকে মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযানে পরিবহন করে ইট ভাটায় স্তুূপ করা হচ্ছে ইট তৈরির জন্য। এছাড়াও ভেকু দিয়েও কাটা হচ্ছে হালদার পাড়ের মাটি। মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও হালদার পাড়ে গড়ে উঠা ইটভাটা মালিকেরা তা অমান্য করে চরের মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযানে পরিবহন করছে প্রতিনিয়ত।ফলে হালদার মা মাছ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ- ইট ভাটার কারণে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিপন্ন হচ্ছে নদীর পরিবেশ। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংস করা হলেও দেখার কেউ নেই।
শান্তি ব্রিকসের অংশীজন প্রিয়তোষ বড়ুয়া বলেন- নদীর পাড় হলেও এটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। তবে ইটভাটার কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
এ.আলী ব্রিকস ইটভাটা মালিক রাশেদ বলেন- হালদা নদীর পাড় হলেও এসব জমি আমাদের নিজস্ব জায়গা। আমরা নদীর পাড়ে যে মাটি খনন করছি- তা পুনরায় ভরাট করে দেয়া হবে। তবে পরিবেশ দূষণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি তিনি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- হালদার পাড়ে গড়ে উঠা ইট ভাটাগুলো অবৈধ। এসব ইটভাটাগুলোর কারণে দূষিত হচ্ছে আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং হালদা নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এসব ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
এবিষয়ে রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন- হালদা নদীর মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অভিযান চালিয়ে নদী থেকে মাছ ধরার জাল উদ্বার করে ধ্বংস করা হয়েছে । ইটভাটা গুলোতে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমি বদলী হয়ে চলে যাব তাই সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি।