মো.ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।
গাজীপুর জেলার সর্বত্র নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে রড, সিমেন্ট ও টাইলস সহ অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য দিন দিন বেড়েই চলছে।
আবাসন নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে অপরিহার্য উপকরণ রডের মূল্য বৃদ্ধিতে এযাবতকালের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। গত দুই সপ্তাহে প্রতিটন রডে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা বেড়েছে। খুচড়া বাজারে প্রতিটন রডের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার টাকার উপরে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিমেন্ট, ইট, খোয়া আর বালিও।
নতুন ভবন নির্মাণে কাঁচামালের দামে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় গতি হারিয়েছে নির্মাণকাজ। সিমেন্টের আকাশছোঁয়া দামের প্রভাবে বহু প্রকল্পের কাজ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে বলে জানান নির্মাণশিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের শঙ্কা, লাফিয়ে লাফিয়ে নির্মাণ খরচ বাড়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নেও ব্যয় বেড়েছে। এতে ফ্লাট বা অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি বর্গ ফিটে ন্যূনতম চার থেকে পাঁচশ টাকা বাড়তে পারে। পাশাপাশি আবাসনের সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি খাতের প্রায় ৩৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান নিয়েও বাড়ছে অনিশ্চয়তা।
আন্তর্জাতিক ভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সরাসরি কোনো প্রভাব না পড়লেও নিত্যপণ্যের দামের পাশাপাশি দেশের বাজারে রাতারাতি বাড়তে শুরু করে নির্মাণসামগ্রীর দাম। এতে দ্রুত স্থবিরতা নামে প্রকৌশল, স্থাপতা, সিমেন্ট শিল্প, রি-রোলিং মিলস, ইটভাটা, বালি, টাইলস-সিরামিক, পাথর, পরিবহন, পাইপ ফিটিংস, কাঁচ ও অ্যালুমিনিয়াম ফিটিংসসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
দেশে প্রথমবারের মতো প্রতি টন রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে বিএসআরএম’র ৬০ গ্রেড এক টন রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার ৫০০ থেকে ৯১ হাজার টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮৮ হাজার টাকা। মাসখানেক আগে এ দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার টাকা। বাজারে প্রতি টন একেএস রড ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার টাকা কেএসআরএম ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, জিপিএইচ ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, বন্দর ৮৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮৯ হাজার এবং কেএসএমএল প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকায়। পাশাপাশি আনোয়ার, রহিমসহ কয়েকটি কোম্পানির রড পাওয়া যাচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার ঢাকায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ার অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে রড, মোটা-পাতলা প্লেনশিট ও অ্যাঙ্গেলের দাম। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রডের ক্রয়াদেশ থাকলেও সময়মতো সরবরাহ নেই। বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকটের কারণেই দেশেও নির্মাণসামগ্রীর নাম ঊর্ধ্বমুখী।
নির্মাণসামগ্রীর অস্থিতিশীল বাজারে নতুন করে কাজ শুরুর সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে কী হবে বলা মুশকিল। দেশের নির্মাণশিল্পের আরেক অন্যতম উপকরণ সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিনির্ভর। এগুলোর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই ক্লিংকার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি টন ক্লিংকারের নাম ৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৭৫-৭৯ ডলারে উঠেছে।
বর্তমানে দেশের বাজারে প্রায় সব কোম্পানির সিমেন্টে বস্তাপ্রতি ৩০ ৬০ টাকা বেড়েছে। ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকার সিমেন্ট প্রতি বস্তা থেকে ৫০০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন সিমেন্টের বাজারে শাহ স্পেশাল ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬০-৪৭০ টাকা, সুপারটি ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৭০-৪৭৫, ম্যান সিমেন্ট ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৮০-৪৮৫, বেঙ্গল সিমেন্ট ৪১০ থেকে বেড়ে ৪৮০-৪৭ থেকে বেড়ে ৪৫০-৪৫৫ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। দোকানিদের আশঙ্কা, আগামী দিনে নাম আরও বেড়ে বস্তাপ্রতি ৫০০ টাকা ছাড়াতে পারে।