মো.ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর সহ সর্বত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। জরুরি পণ্যগুলোরই দাম দিন দিন বেড়েই চলছে । এর মাঝে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বাজারে যেন লেগেছে আগুন। এ নিয়ে সপ্তাহ জুড়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষরা আজ অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছে। সব স্তরের মানুষ নিত্যপণ্যের দামের বর্তমান লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে ভোগান্তিতে পড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গরিবরা আছে মহাসঙ্কটে , আর মধ্যবিত্তরা দিশেহারা।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে জানা যায়, মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কমার কথা কিন্তু কমেনি। মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। ঘরে ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বস্তা। তবুও কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। সর্বশেষ এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে তিন-পাঁচ টাকা বেড়ে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেল, আটা-ময়দা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ডিমের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন-টিসিবি পণ্যের নায্যমূল্যের বাজার সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি সরু ৯ এরপর চাল গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দারিদ্র্যের এই হার করোনাপূর্ব ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪১ শতাংশ হয়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভোজ্য তেল হিসাবে সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১০৪ টাকা। সেই সয়াবিন তেল আজ কিনতে হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির এ হার প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি। আরেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হলো মসুর ডাল। এর দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে বাজারে আটার দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
রমজান শুরুর আরো দেড় মাস বাকি। অথচ এখনই প্রতিটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে চাল, ডাল, তেল, মাছ, গোশত, সবজিসহ প্রতিটি পণ্যমূল্য। বর্তমান-বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে বাজার সিন্ডিকেট। কখনো কখনো মুনাফাখোর চক্র পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রমজান সামনে রেখে গত বছরের মতো এবারও বাজারে বিভিন্ন পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। লক্ষণীয়, রমজানের আগে পণ্যের দাম বাড়ানো হলে পরে তা আর কমানো হয় না। কাজেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ যাতে দুষ্টচক্রের হাতে চলে না যায়, সেজন্য কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশে পড়বে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে এবং পণ্যমূল্য নাগালের মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের আরো নিষ্ঠার সাথে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ অতীব জরুরী ।