Dhaka , Thursday, 3 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
দুর্গাপুর মটরযান ক’র্মচা’রী শ্র’মিক ইউনিয়ন নি’র্বাচ’নে সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রমিকদের পছন্দের প্রার্থী আলিউল আজিম সাবেক মেয়র মাহবুব খান ও তার ছেলে সিয়ামের ৩২৯ কোটি টাকা আ’ত্মসা’ৎ, দেশ ত্যা’গে নি’ষেধা’জ্ঞা রূপগঞ্জে ট্রা’ক চা’পা’য় অ’জ্ঞা’তনা’মা ব্যক্তির মৃ’ত্যু হাটহাজারীতে কৃষক সমা’বে’শ ন্য’য্য মূল্যে সা’র,বী’জ,কী’টনা’শক ও বিনা সু’দে ঋ’নে’র জো’র দা’বি হাসিনাকে ভারত থেকে ধ’রে এনে বি’চার করতে হবে— নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী অ’গ্নিকা’ণ্ডে পু’ড়ে যায় বাড়িসহ নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং প’শুপা’খি  রামগঞ্জে ই’য়া’বা’স’হ যুবদল ক’র্মী আ’টক লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিট’র নতুন কমিটি গঠন কাজল প্রেসিডেন্ট ও উজ্জল সেক্রেটারী কউকের নী’রবতা’য় কক্সবাজার হোটেল জোনে প্র’ভাবশা’লী সি’ন্ডিকে’টের অ’বৈ’ধ ব’হুত’ল নি’র্মা’ণ জো’রাল! নরসিংদী প্রকল্প জা’লিয়া’তির ৫২ লাখ টা’কা উ’দ্ধা’র, ২ ক’র্মচা’রী গ্রে’প্তার হালিশহরে কোটি টাকার ম’দ উ’দ্ধা’র, কিন্তু চো’রাচা’লানী রয়ে গেছে ব’হাল ত’বিয়’তে আগামী ৬ মাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌ’বাহি’নীকে সু’পারি’শ করেছে সরকার নৌ’পরি’বহন উপদেষ্ট রূপগঞ্জে প্রে’মিকা ও স্বা’মীর ছু’রিকা’ঘা’তে প্রে’মিক নি’হত গাকৃবিতে উচ্চফলনশীল অধিক লবণ সহিষ্ণু গমের নতুন জা’ত ‘জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবন    রাজাপুরে সরকারি ৫টি গাছ বি’ক্রির অ’ভিযো’গ স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তার বি’রু’দ্ধে নোয়াখালীতে ক’রো’নায় বৃ’দ্ধে’র মৃ’ত্যু নতুন অর্থবছরের প্রথমদিনেই ব’ন্দর জে’টিতে চার বিদেশি জাহাজ নোয়াখালীতে সা’পের কা’ম’ড়ে শি’শু’র মৃ’ত্যু সিলেট এমএজি ওসমানী মে’ডিকে’ল কলেজ ও হা’সপাতা’লে শি’শু বিভাগে বিশেষায়িত ক্লি’নিক চালু লালমনিরহাটে বিভিন্ন মা’মলা’র উনিশ আ’সা’মি গ্রে’প্তার  লালমনিরহাটের হ’ত্যা মা’মলা’র দুই আ’সামী’কে বগুড়া থেকে গ্রে’প্তার করেছে র‍্যাব মফস্বল সাংবাদিকতায় অনন্য অবদান সাংবাদিক নোমানীকে বার্তা প্রবাহ সম্মাননা কালিয়াকৈরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার গাছের চা’রা বিত’রণ শৌলজালিয়ায় আও’য়ামী লী’গ নে’তা চেয়ারম্যান রিপন ও প্যানেল চেয়ারম্যানকে মা’রধ’র নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ক’মরে’ড অনিমা সিং’হে’র প্র’য়াণ দিবস উপলক্ষে স্মর’ন স’ভা পদ্মা সেতু দক্ষিণে প্রায় দেড় লাখ টাকার গাঁ’জাস’হ না’রী ও পু’রুষ আ’টক আদিতমারীতে পানিতে ডু’বে ১৮ মাস বয়সী শি’শুর মৃ’ত্যু  র‍্যাবের হাতে আ’ন্তঃজে’লা ডা’কা’ত দলের স’র্দার গ্রে’প্তার সীমান্ত এলাকায় ১৫ বিজিবির অ’ভিযা’নে বি’পুল প’রিমা’ণ অ্যা’ন্ড্রয়ে’ড মোবাইল ফোনের ডি’সপ্লে উদ্ধা’র ডাক বিভাগের কো’ষাগা’র ব্য’বস্থা’প’না ডিজিটাল রূ’পা’ন্তরে’র উদ্বোধন

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 10:31:41 am, Sunday, 7 July 2024
  • 88 বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

অরবিন্দ রায়

স্টাফ রিপোর্টার।।

   

   

গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি  গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত ৬  জুন শিশুটির জন্ম হয়।

শনিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জনরা শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করে একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন দীর্ঘ দুই ঘন্টা চেষ্টা করে শিশু দুইটিকে আলাদা করেছেন। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মত এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু  শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি ৫ লক্ষ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এরকম ঘটনা ঘটেছে দুই শতেরও কম।

একটি শিশুর শরীরের ভেতর আরেকটি শিশুর অবস্থান এটা কিভাবে সম্ভব – এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশু কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিদ্ধ হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোন এক পর্যায়ে যদি কোষগুলি সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তবে দুইটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলি অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষ যুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়।   কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।
চিকিৎসকরা   জানান- এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের হাড় তৈরি হয়, ক্ষুদ্র আকারে হাত পা তৈরি হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো জানান- শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভিতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভিতর- তলপেটে- মাথার ভিতর- মুখের ভিতর- অন্ডকোষের ঝুলির ভিতর অথবা পায়ুপথের পিছনে।
একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন  বলা হয়। এদের মধ্যে  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে।
শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত
শিশুটির  পিতা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়- গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে  পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয়  ক্লিনিকে গিয়ে  আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু  স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা  হাসপাতালে  সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা  এ  ঘটনাটি দেখতে পান । দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ওই ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  কিন্তু গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও  তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান।  ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস  শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্যান্য সার্জনদের  সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি হাসপাতালে  অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান ও অবজারভেশন রাখা হয়।  শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে। সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ অন্যান্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল  সাড়ে ৯ টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়।  সাড়ে ১১টায় অস্ত্রোপচার  সফলভাবে শেষ হয়। অস্ত্রোপচারে ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা- সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরী সহ ১০- ১২ জন ডাক্তার- নার্স এবং ওটি বয়  অংশ নেন।

   

অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন- এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিলনা এবং মেরুদন্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস জানান- আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি  একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সিলেট মেডিকেল কলেজে হয়েছিল।  তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে  আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।
শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ টাকা পয়সা তেমন নেই। তাই আমার দ্বারা এ ধরনের অপারেশন ঢাকায় কোন হসপিটালে করানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তার শংকর স্যার যদি নিজে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা হতো। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

দুর্গাপুর মটরযান ক’র্মচা’রী শ্র’মিক ইউনিয়ন নি’র্বাচ’নে সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রমিকদের পছন্দের প্রার্থী আলিউল আজিম

গাজীপুরে এক শিশুর ভিতর আরেক শিশু- অস্ত্রোপচার করে আলাদা।।

আপডেট সময় : 10:31:41 am, Sunday, 7 July 2024

অরবিন্দ রায়

স্টাফ রিপোর্টার।।

   

   

গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি  গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত ৬  জুন শিশুটির জন্ম হয়।

শনিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জনরা শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করে একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন দীর্ঘ দুই ঘন্টা চেষ্টা করে শিশু দুইটিকে আলাদা করেছেন। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মত এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু  শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি ৫ লক্ষ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এরকম ঘটনা ঘটেছে দুই শতেরও কম।

একটি শিশুর শরীরের ভেতর আরেকটি শিশুর অবস্থান এটা কিভাবে সম্ভব – এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশু কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিদ্ধ হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোন এক পর্যায়ে যদি কোষগুলি সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তবে দুইটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলি অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষ যুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়।   কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।
চিকিৎসকরা   জানান- এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের হাড় তৈরি হয়, ক্ষুদ্র আকারে হাত পা তৈরি হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো জানান- শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভিতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভিতর- তলপেটে- মাথার ভিতর- মুখের ভিতর- অন্ডকোষের ঝুলির ভিতর অথবা পায়ুপথের পিছনে।
একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন  বলা হয়। এদের মধ্যে  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে।
শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত
শিশুটির  পিতা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়- গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে  পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয়  ক্লিনিকে গিয়ে  আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু  স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা  হাসপাতালে  সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা  এ  ঘটনাটি দেখতে পান । দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ওই ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  কিন্তু গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও  তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান।  ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস  শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্যান্য সার্জনদের  সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি হাসপাতালে  অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান ও অবজারভেশন রাখা হয়।  শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে। সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ অন্যান্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল  সাড়ে ৯ টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়।  সাড়ে ১১টায় অস্ত্রোপচার  সফলভাবে শেষ হয়। অস্ত্রোপচারে ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা- সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরী সহ ১০- ১২ জন ডাক্তার- নার্স এবং ওটি বয়  অংশ নেন।

   

অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস  ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন- এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিলনা এবং মেরুদন্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।
ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস জানান- আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি  একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সিলেট মেডিকেল কলেজে হয়েছিল।  তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে  আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।
শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ টাকা পয়সা তেমন নেই। তাই আমার দ্বারা এ ধরনের অপারেশন ঢাকায় কোন হসপিটালে করানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তার শংকর স্যার যদি নিজে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা হতো। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।