
স্টাফ রিপোর্টার
কাউকে পরোয়া করছে না মাটি কাটা বাহিনী। অবাধে চলছে ফসলি জমির মাটি লুট। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও থামছে না তাদের তাণ্ডব।
নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে মির্জাপুর উপজেলার ফসলি জমি। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করিলেও পরের দিন থেকেই শুরু হয় মাটি কাটা বাহিনীর তাণ্ডব। স্থানীয়রা বলছেন, মাটি কাটা বাহিনীর আর শতাধিক লোক ধরাছোঁর য়ার বাইরে রয়েছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার জার্মুকি ইউনিয়নে গুলুটিয়া,সাটিয়াচুড়া,বানাইল ইউনিয়নে মাঝালিয়া,গল্লী চুকুরিয়া,চামারী,লতিফপুর ইউনিয়নে যোগীরকোফা,ভাদগ্রাম ইউনিয়ন গোড়াই, বহুরিয়া ইউনিয়নে বহুরিয়া,চান্দুলিয়া,গোড়াই ইউনিয়নে দেওহাটা,গ্রামে সহ বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে ভেকু -খননযন্ত্র- দিয়ে গভীর গর্ত করে নদী ও তিন ফসলের জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় পরিত্যক্ত ডোবায় পরিণত হচ্ছে উর্বর জমিগুলো। বছরের পর বছর মাটি কাটায় ও মাহিন্দ্রা গাড়ি দিয়ে মাটি ইটভাটায় নেওয়ার কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থাবেহাল হয়ে পড়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বহুরিয়া ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি জানান, মাটি কাটার প্রতিরোধ কর্মিটি করেছিলাম সহকারী কমিশনার ভূমি মাসুদুর রহমান বলেছিলেন এই চান্দুলিয়া বহুরিয়া গ্রামে আর কোন মাটি কাটা হবে না,এখন দেখি আরো বেশী হচ্ছে। এই এলাকায় অর্ধশতাধিক লোক মাটি কাটা পেশায় জড়িত।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবাধে মাটি কাটা পেশার সঙ্গে জড়িত শতাধিক মানুষ। তাদের বেশির ভাগ সমাজের উচ্চবিত্ত ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। অনেকে আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলে জানা গেছে। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলে না। তারা অনেক সময় কৃষকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট একটা টাকার বিনিময়ে জমি কিনে কিংবা জোর করে জমি দখল করে মাটি কেটে বিক্রি করেন ইটভাটায়। বহুরিয়া ইউনিয়নের চান্দুলিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইছামাথা -দশচাকার ডামট্রাক গাড়ি- দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। দেওহাটা-চান্দুলিয়া রাস্তা খানাখন্দে ভরপুর। ওই এলাকার গাছগাছালি, বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছে ধুলোর স্তর।
কথা হয় বহুরিয়া গ্রামের ছন্দু মিলন মিয়া ও মোরাদ মিয়ার সঙ্গে। তাদের দাবি, কিছু দিন মাটি কাটা বন্ধ ছিলো এলাকাবাসীর বাধার কারনে। আবার শুরু করেছে এখন আরো বেশী মাটি কাটছে অর্ধশতাধিক লোক। কীভাবে মাটি কাটে তারাই জানে।মাটিবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে ধুলাবালু ওড়ে। এ কারণে নাকে রুমাল চেপে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। ধুলার কারণে পোশাক নষ্ট হয়ে যায়, এমন দাবি স্কুল শিক্ষার্থী আমিনুল হকের।
বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামের ওয়াসিম বলেন, ৪-৫ বছর ধরে মাটি কাটছে চক্রটি। কাউকে মানে না তারা। মাটি কাটার কারণে বহুরিয়া, চান্দুলিয়া ও দেওহাটা গ্রাম একেবারে দূষিত হয়ে গেছে। ঠান্ডা-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া -সাদু মিয়া-বলেন আমরা এখন বিরক্ত হয়ে গেছি, কিছু দিন আগে আমরা চান্দুলিয়া গ্রাম থেকে ৪শত থেকে ৫০০জন লোক মির্জাপুর উপজেলায় গিয়ে সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে গিয়েছিলাম মাটি সহ গাড়ি ধরিয়ে দিয়েছিলাম,পরের দিনই গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে এখন আমারা বিচার দিবো কোন জায়গায়।
মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, মির্জাপুরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত, অনেকেই জেল জরিমানা করা হয়। আমাদের অভিযান চলমাল। উপজেলার কোথাও কোনো অনিয়ম হতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।