শওকত আলম, কক্সবাজার
সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়মে পর্যুদস্ত কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের আওতাধীন চৌফলদন্ডী ইসলামিয়া তা’লিমুল কুরআন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও নিয়ম-নীতির কোন বালাই নেই। অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মাও: নুরুল হাকিমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও। তিনি দাখিল-এসএসসি পাশ না হলেও কিভাবে তিনি প্রধান শিক্ষক হয়েছেন এটা যেমন জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি সরকারী বিধিমালার কোন তোয়াক্কা না করে কিভাবে সবকিছুই তার মৌখিক স্বীকৃতিতে চলে এটা নিয়েও রয়েছে জনমনে নানান প্রতিক্রিয়া। প্রশাসনিক অননুমোদিত এই প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের নাকের ডগায় গত ২১বছর যাবৎ কিভাবে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
দেশব্যাপী সংস্কার চলছে- তবে এই প্রতিষ্ঠানটি এখনো কিছু অশিক্ষিত স্থানীয় প্রভাবশালী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরে ভরপুর কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক নুরুল হাকিম যেনো সব নিয়ম ভেঙ্গে অনিয়ম চালুর কারিগর! তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির চিহ্ন লুকাতে দীর্ঘ ২১বছর যাবৎ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক প্রায় সকল কাজ মৌখিক ভাবেই করে থাকেন তিনি। তার রয়েছে নিজস্ব প্রভাবশালী সিন্ডিকেট! তাদের মাধ্যমে সমস্ত অনিয়ম কে নিয়ম করে নেন তিনি।
২১শতকের এই শিল্প-বিপ্লবের যুগে এসেও দাখিল-এসএসসি পাশ না করা ব্যক্তি কিভাবে একটা দাখিল মাদ্রাসায় ২১ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে বহাল রয়েছে তা নিয়ে এলাকজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে নুরুল হাকিম সহ প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের যতসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছে না কেউ।
প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন না থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য সরকারীভাবে বই-পুস্তক বরাদ্দ না থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক প্রভাবশালী কর্মচারি কে ম্যানেজ করে প্রতিবছর বই সংগ্রহ করেন মাদ্রাসাটির প্রধান শিক্ষক মাওলানা নুরুল হাকিম। কিন্তু সরকারি এই পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও-টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পুস্তক সরবরাহ করেন বলে অভিভাবকসূত্রে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- আওয়ামী দোসরে পরিপূর্ণ মাদ্রাসাটির কমিটির লোকজন দিয়ে মাওলানা নুরুল হাকিম শিক্ষকদেরকে কথা শোনান ও লাঞ্ছিত করান। সরকারী কোনো বিধিমালার তোয়াক্কা না করে মৌখিকভাবে করা কমিটিতে কখন কে কোন পদে আসীন হয় তা প্রধান শিক্ষক ছাড়া কেউ জানে না বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
শুধু প্রধান শিক্ষক নুরুল হাকিম’ই নয় বরং উক্ত প্রতিষ্টানের পরিচালনা কমিটি নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। জানা যায়, সমসাময়িক বিষয়াদি বিবেচনা করে পরিচালনা কমিটিতে পছন্দ মতো সভাপতি/সেক্রেটারি নির্বাচিত করেন স্বয়ং প্রধান শিক্ষকই। এছাড়াও সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্টানের পরিচালনা কমিটিতে সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। তবে এই নিয়মটিও ডিঙ্গিয়ে নিজ পছন্দ মতো প্রভাবশালী লোকদের সাথে আতাত করে পরিচালনা কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি পুরো নিজের জিম্মায় রাখেন নুরুল হাকিম। এবং প্রতিষ্ঠানটির কোনো শিক্ষক নুরুল হাকিমের এমন অপব্যাবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালী পরিচালনা কমিটি দ্বারা তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্চিত করেন পরিশেষে চাকরিচ্যুত করেন।
তারই ন্যায় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোনধরনের পূর্বনোটিশ ছাড়া পর্যায়ক্রমে দুইজন শিক্ষককে বরখাস্ত করেন তা’লিমুল কুরআন বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রভাবশালী মৌখিক কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি ।
স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, সভাপতি বদরুল আলম (বদরু বহদ্দার) হঠাৎ এসে উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক মৌলভী নুরুল আবছারকে তার বেতনের হিসাব-নিকাশ করে চলে যেতে বলেন। কোনধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়া চলে যেতে বলায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান মৌলভী নুরুল আবছার। এমতবস্থায় আরো কয়েকজন উপস্থিত শিক্ষক সভাপতি বদরুল আলমের কাছ থেকে চলে যেতে বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন “আমাদের যখন ভালো লাগে আমরা রাখি আর ভালো না লাগলে তাড়িয়ে দিই”।
এর কয়েকদিন পর একই কায়দায় মাদ্রাসার সেক্রেটারী পদ দাবিদার ছৈয়দ আলম (মুন্সি) উক্ত মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মৌলানা এহসানুল হককে বরখাস্ত করেন। তখন তিনিও কারণ জানতে চাইলে সেক্রেটারি ছৈয়দ আলম মুন্সি বলেন “উপরের নির্দেশ আছে”।
এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, উনি প্রতিবেদককে শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধের দিনে অফিসে আমন্ত্রণ জানান। এবং চা নাস্তা ও যাতায়াতের খরচ বহন করবেন বলেও জানান।
এই বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দাবিদার বদরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও তার সৎউত্তর দিতে ব্যার্থ হন।
এবং সাধারণ সম্পাদক দাবিদার ছৈয়দ আলম মুন্সি বলেন, নুরানী প্রতিষ্টাকালীন সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নুরুল হাকিম। এবং প্রতিষ্ঠানটি এলাকাভিত্তিক হওয়ায় এলাকার ব্যাক্তিবর্গের পরামর্শে তারা পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের এসএসসি/দাখিল পাশ না করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার রাম মোহন সেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটি দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দাখিল এসএসসি পাশ না করার বিষয়টি অতীব গুরুতর। এবং এ বিষয়ে সঠিক অভিযোগ পেলে এর ব্যাবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
এ নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এরকম হ য ব র ল অবস্থায় প্রতিষ্টানটির পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে দাবি করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন অভিভাবক ও স্হানীয়রা।