Dhaka , Wednesday, 2 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
কালিয়াকৈরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার গাছের চা’রা বিত’রণ শৌলজালিয়ায় আও’য়ামী লী’গ নে’তা চেয়ারম্যান রিপন ও প্যানেল চেয়ারম্যানকে মা’রধ’র নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ক’মরে’ড অনিমা সিং’হে’র প্র’য়াণ দিবস উপলক্ষে স্মর’ন স’ভা পদ্মা সেতু দক্ষিণে প্রায় দেড় লাখ টাকার গাঁ’জাস’হ না’রী ও পু’রুষ আ’টক আদিতমারীতে পানিতে ডু’বে ১৮ মাস বয়সী শি’শুর মৃ’ত্যু  র‍্যাবের হাতে আ’ন্তঃজে’লা ডা’কা’ত দলের স’র্দার গ্রে’প্তার সীমান্ত এলাকায় ১৫ বিজিবির অ’ভিযা’নে বি’পুল প’রিমা’ণ অ্যা’ন্ড্রয়ে’ড মোবাইল ফোনের ডি’সপ্লে উদ্ধা’র ডাক বিভাগের কো’ষাগা’র ব্য’বস্থা’প’না ডিজিটাল রূ’পা’ন্তরে’র উদ্বোধন জুলাই বি’প্লবে’র শহি’দরা দেশ ও জা’তিকে মু’ক্তি’র পথ দেখিয়েছে-ধর্ম উপদেষ্টা ঢাকার বা’য়ুদূষ’ণ রো’ধে ‘ডি’গ্রেডে’ড এ’য়ারশে’ড’ চি’হ্নিত করা হবে। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নারায়ণগঞ্জ জেলা ও রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের পরিচিতি ও সংবর্ধনা স’ভা অনুষ্ঠিত পূর্বাচলে জ’বাইকৃ’ত ৫টি ঘো’ড়া উ’দ্ধার, একজন আ’টক বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যে’ষ্ঠতা যো’গদানে’র দিন থেকে শুরু করতে রু’ল বীরগঞ্জে কা’লের ক’ণ্ঠ মাল্টিমিডিয়ার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ:লীগ নে’তা র’ঞ্জু গ্রে’প্তার শরীয়তপুরে শা’রী’রিক প্র’তিব’ন্ধক’তা জয় করে প্র’শা’সন ক্যা’ডারে উল্লা’স পান আজ থেকে নগর স্বা’স্থ্যসে’বা কা’র্যক্র’ম পরিচালনা করবে ডিএনসিসি “জুলাই গণঅ’ভ্যুত্থা’ন ছিল বাংলাদেশের মানুষের গ’ণত’ন্ত্র প্রতিষ্ঠার সং’গ্রামে’র মাইলফলক”-পার্বত্য উপদেষ্টা জলবায়ু অ’ভিযো’জ’নে ত’রুণ’দের স’ম্পৃ’ক্ত করতে একস’ঙ্গে কাজ করবে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ নতুন প্র’জ’ন্মের ভা’বনা’য় ক’মরে’ড অণিমা সিং’হ — প্রা’সঙ্গি’ক এক বিপ্ল’বী আদ’র্শ” হাতিয়াতে যৌ’থবাহি’নীর অ’ভিযা’নে না’রীসহ আ’টক-৪, আ’গ্নেয়া’স্ত্র-স্ব’র্ণ উ’দ্ধা’র নোয়াখালীতে ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির প্র’তিবা’দে বি’ক্ষো’ভ চিকিৎসার্থে ঢাকায় গিয়ে নি’হত ৩ জনের জা’না’যা সম্পন্ন, বি’চা’রের, দা’বী’তে এলা’কাবা’সীর মানব ব’ন্ধন চাচাকে আ’টক করেছে পু’লিশ  হাতিয়াতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক-৪, আগ্নেয়াস্ত্র-স্বর্ণ উদ্ধার আশুলিয়ায় এম এ মতিন ও তার স্ত্রী’র গ্রে’প্তারে’র দা’বি’তে মা’নবব’ন্ধন রাজাপুরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের উপহার সামগ্রী বিতরণ সরাইলে বা’ল্যবি’বাহ প্র’তিরো’ধ বিষয়ক আলোচনা সভা ইবি লালমনিরহাট ছাত্রক’ল্যাণ সমিতির নেতৃ’ত্বে মাহিউল-রবি দুর্গাপুরে ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধন মেডিঃ কলেজ ও হাস’পাতা’লের ই’ন্টার্নী চি’কিৎস’ক প’রিষ’দের আ’হবা’য়ক কমিটি গঠিত

আমুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 11:41:08 am, Wednesday, 16 October 2024
  • 72 বার পড়া হয়েছে

আমুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক।।

মো. নাঈম হাসান ঈমন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।

 টাকার জাজিমে -তোশক- না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। তিনি ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক। নতুন টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রথম পছন্দ। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো ‘নতুন টাকার বান্ডিল’। নতুন টাকার বান্ডিল দিয়ে জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন তিনি।আমির হোসেন আমুর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন তার ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব -এপিএস- ফখরুল মজিদ কিরন। তিনি আবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের ভাই। তারও এপিএস ছিলেন কিরন। আমুর শ্যালিকা মেরী আক্তার ও কিরন দম্পতির কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক নিয়েছিলেন নিঃসন্তান আমু। এই সুমাইয়া ও কিরনের কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত রাখা। সুমাইয়া বর্তমানে স্বামীসহ দুবাইপ্রবাসী। সেখানে হুন্ডিসহ নানা উপায়ে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন আমু। এমন তথ্য জানান তারই ঘনিষ্ঠজন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে তিনি এই অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক- আমুর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী- নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এ ছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা-প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ থেকে অনৈতিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি। 

 

দুদক জানায়- আমু ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে ৭২৭-এ নম্বর প্লটে অবস্থিত কেয়ারী প্লাজায় দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার টাকায় অকৃষি জমি এবং রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে এক কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে তার। আমুর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকার। তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকার। এসব সম্পদের বাইরেও তার নামে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। তিনি নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএ ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ২.৯৪৫ একর -২৯৫ শতাংশ- জমিতে কালেক্টরেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। অভিযোগ রয়েছে- আমির হোসেন আমু পরে এই জমি দখল করে ফিরোজা আমু টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ এবং ফিরোজা-আমির হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সরেজমিন দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানের স্থানে একটি ভবন পাওয়া গেলেও প্রথমটির কোনো অস্তিত্ব নেই; শুধু একটি নামফলক রয়েছে। কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ দুর্বৃত্তরা সীমানাপ্রাচীরসহ স্কুল ভবনের অর্ধেক ভেঙে ফেলে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্কুলের নতুন ভবনের ওয়ার্ক অর্ডার হলেও ঠিকাদারকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমুর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে জমি দখলের পাশাপাশি টেন্ডার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের কিছু পদধারীকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। আমুর সংস্পর্শে থেকে ওই ঠিকাদাররা অনেকে বিদেশে বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, টিআর- কাবিখার বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও আমুকে চাঁদা দিতে হতো। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে স্থানীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত তাঁর সিন্ডিকেট। সরকারি কোনো কর্মকর্তা কথা না শুনলে তাঁকে বদলি করা হতো। শারীরিকভাবেও অনেকে লাঞ্ছিত হন। সড়ক বিভাগ- এলজিইডি -শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর- গণপূর্ত- থানা প্রকৌশল- প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সবখানে ছিল তাঁর সিন্ডিকেট।

 

এলাকাবাসী জানান- অবৈধ টাকা লেনদেনে আমুর বিশ্বস্ত ছিলেন তাঁর ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরণ। তিনিও এখন আত্মগোপনে। আমু শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে কিরণ ছিলেন তাঁর এপিএস। রোনালস রোডের বাসভবন ছাড়াও বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে রয়েছে আমুর আলিশান বাড়ি। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান আমু তাঁর শ্যালিকা মেরী আক্তারের এক মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমির হোসেন আমু প্রথমে খাদ্য ও পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। আমু ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আর নিজ দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

 

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন-এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না আমু। সব টাকাই নগদে পৌঁছাত তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরন। আমুর নাম ভাঙিয়ে কিরন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন কিরন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনেরও এপিএস ছিলেন এই কিরন। তিনি আমু ও হুমায়ুনের হয়ে সব তদবির নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিরনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের আপন ছোট ভাই কিরন তার নিজের এলাকা ছেড়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠিতে। কেবল সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়- নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি।

 

নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন- আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নেওয়া লাগত কিরনের। উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি। তার কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না আমু। পরিস্থিতি এমন ছিল—কিরন যেন ছিলেন ছায়া আমু। এই কিরনের মাধ্যমেই বিভিন্ন সেক্টর থেকে শতশত কোটি টাকা কামিয়েছেন আমু- যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইয়ে কিরনের মেয়ে সুমাইয়ার কাছে আছে বলে ধারণা সবার। নতুন টাকা ছাড়া আমুর আরেকটি শখ ছিল স্বর্ণের নৌকা। যে কোনো অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করলে স্বর্ণের নৌকা উপহার দিতে হতো। তিনি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকে আমু স্বর্ণের নৌকা নেওয়া বন্ধ করেন।

 

প্রসঙ্গত- গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকা ও ডলার-ইউরো। আংশিক পোড়া অবস্থায় ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও লাগেজ ভর্তি ডলার এবং ইউরো উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে পাওয়া যায় টাকা ও বিদেশি মুদ্রা মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা। আমুর মগবাজার ও বরিশাল শহরের বাড়ি থেকেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। এরপর ১৮ আগস্ট তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট -বিএফআইইউ-। একই সঙ্গে তার পালিত সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

কালিয়াকৈরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার গাছের চা’রা বিত’রণ

আমুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক।।

আপডেট সময় : 11:41:08 am, Wednesday, 16 October 2024

মো. নাঈম হাসান ঈমন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।

 টাকার জাজিমে -তোশক- না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। তিনি ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক। নতুন টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রথম পছন্দ। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো ‘নতুন টাকার বান্ডিল’। নতুন টাকার বান্ডিল দিয়ে জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন তিনি।আমির হোসেন আমুর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন তার ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব -এপিএস- ফখরুল মজিদ কিরন। তিনি আবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের ভাই। তারও এপিএস ছিলেন কিরন। আমুর শ্যালিকা মেরী আক্তার ও কিরন দম্পতির কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক নিয়েছিলেন নিঃসন্তান আমু। এই সুমাইয়া ও কিরনের কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত রাখা। সুমাইয়া বর্তমানে স্বামীসহ দুবাইপ্রবাসী। সেখানে হুন্ডিসহ নানা উপায়ে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন আমু। এমন তথ্য জানান তারই ঘনিষ্ঠজন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে তিনি এই অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক- আমুর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী- নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এ ছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা-প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ থেকে অনৈতিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি। 

 

দুদক জানায়- আমু ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে ৭২৭-এ নম্বর প্লটে অবস্থিত কেয়ারী প্লাজায় দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার টাকায় অকৃষি জমি এবং রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে এক কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে তার। আমুর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকার। তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকার। এসব সম্পদের বাইরেও তার নামে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। তিনি নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএ ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ২.৯৪৫ একর -২৯৫ শতাংশ- জমিতে কালেক্টরেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। অভিযোগ রয়েছে- আমির হোসেন আমু পরে এই জমি দখল করে ফিরোজা আমু টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ এবং ফিরোজা-আমির হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সরেজমিন দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানের স্থানে একটি ভবন পাওয়া গেলেও প্রথমটির কোনো অস্তিত্ব নেই; শুধু একটি নামফলক রয়েছে। কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ দুর্বৃত্তরা সীমানাপ্রাচীরসহ স্কুল ভবনের অর্ধেক ভেঙে ফেলে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্কুলের নতুন ভবনের ওয়ার্ক অর্ডার হলেও ঠিকাদারকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমুর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে জমি দখলের পাশাপাশি টেন্ডার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের কিছু পদধারীকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। আমুর সংস্পর্শে থেকে ওই ঠিকাদাররা অনেকে বিদেশে বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, টিআর- কাবিখার বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও আমুকে চাঁদা দিতে হতো। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে স্থানীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত তাঁর সিন্ডিকেট। সরকারি কোনো কর্মকর্তা কথা না শুনলে তাঁকে বদলি করা হতো। শারীরিকভাবেও অনেকে লাঞ্ছিত হন। সড়ক বিভাগ- এলজিইডি -শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর- গণপূর্ত- থানা প্রকৌশল- প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সবখানে ছিল তাঁর সিন্ডিকেট।

 

এলাকাবাসী জানান- অবৈধ টাকা লেনদেনে আমুর বিশ্বস্ত ছিলেন তাঁর ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরণ। তিনিও এখন আত্মগোপনে। আমু শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে কিরণ ছিলেন তাঁর এপিএস। রোনালস রোডের বাসভবন ছাড়াও বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে রয়েছে আমুর আলিশান বাড়ি। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান আমু তাঁর শ্যালিকা মেরী আক্তারের এক মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমির হোসেন আমু প্রথমে খাদ্য ও পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। আমু ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আর নিজ দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

 

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন-এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না আমু। সব টাকাই নগদে পৌঁছাত তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরন। আমুর নাম ভাঙিয়ে কিরন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন কিরন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনেরও এপিএস ছিলেন এই কিরন। তিনি আমু ও হুমায়ুনের হয়ে সব তদবির নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিরনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের আপন ছোট ভাই কিরন তার নিজের এলাকা ছেড়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠিতে। কেবল সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়- নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি।

 

নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন- আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নেওয়া লাগত কিরনের। উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি। তার কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না আমু। পরিস্থিতি এমন ছিল—কিরন যেন ছিলেন ছায়া আমু। এই কিরনের মাধ্যমেই বিভিন্ন সেক্টর থেকে শতশত কোটি টাকা কামিয়েছেন আমু- যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইয়ে কিরনের মেয়ে সুমাইয়ার কাছে আছে বলে ধারণা সবার। নতুন টাকা ছাড়া আমুর আরেকটি শখ ছিল স্বর্ণের নৌকা। যে কোনো অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করলে স্বর্ণের নৌকা উপহার দিতে হতো। তিনি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকে আমু স্বর্ণের নৌকা নেওয়া বন্ধ করেন।

 

প্রসঙ্গত- গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকা ও ডলার-ইউরো। আংশিক পোড়া অবস্থায় ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও লাগেজ ভর্তি ডলার এবং ইউরো উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে পাওয়া যায় টাকা ও বিদেশি মুদ্রা মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা। আমুর মগবাজার ও বরিশাল শহরের বাড়ি থেকেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। এরপর ১৮ আগস্ট তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট -বিএফআইইউ-। একই সঙ্গে তার পালিত সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।