
চঞ্চল, স্টাফ রিপোর্টার
জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মিশনমোড় চত্বরে হঠাৎ দেখা গেলো দুদকের অভিযোগ গ্রহণ বুথ।
জেলা শহর ও অন্যান্য উপজেলা থেকে শহরে আসা মানুষরা বুথটির কাছে গিয়ে জানার চেষ্টা করেন যে, অভিযোগ গ্রহণের এই বুথটি কেন স্থাপন করা হয়েছে বা এর কাজটাই বা কি?
একই প্রশ্ন নিয়ে সরেজমিন বুথের সামনে গিয়ে এর বাইরে ও ভিতরে লাগানো ব্যানার দেখে জানা গেলো, আগামী ২১ এপ্রিল সকাল ৯ টা থেকে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে একটি গণশুনানি হবে। সেই গণশুনানির জন্যই এই বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
‘আসুন দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সর্ব সাধারণের উদ্দেশ্যে লালমনিরহাট জেলা শহরে অবস্থিত যেকোনো সরকারি, আধা -সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার হলে দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ তুলে ধরতে বলা হয়।
কথা হয় বুথে দায়িত্বরত দুদকের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক মো. আলম মিয়া। তিনি বলেন, “ লালমনিরহাট সদরে অবস্থিত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত অফিস, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ জনগণ গিয়ে যে হয়রানির শিকার হন। কিংবা তাদের কাছে যে ঘুষ দাবি করা হয়। অথবা কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে। এই বিষয়গুলো নিয়ে গণশুনানি হবে যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। ওই শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যার। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন কমিশনার অনুসন্ধান এবং কমিশনার তদন্ত স্যার। এখানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে তারা যেমন উপস্থিত থাকবেন তেমনি যিনি অভিযোগ দায়ের করবেন তিনিও উপস্থিত থাকবেন। উভয়ের উপস্থিতিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার ও কমিশনার স্যাররা তাৎক্ষণিক একটি সিদ্ধান্ত দিবেন। এটা লালমনিরহাট জেলা বাসীর জন্য একটি সুযোগ। তারা বিভিন্ন অফিসে গিয়ে সেবা নিতে যে হয়রানির শিকার হন। আমাদের কাছে অভিযোগটা করলে আমরা লিখিতভাবে নিচ্ছি এবং এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক যে সমাধান তা তারা ২১ এপ্রিল তারিখে পাবেন।”
এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতার জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা এক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যেমন- আমাদের মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, অমরা লিফলেট বিতরণ করছি, আমাদের বিভিন্ন টিম জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলোতে যাচ্ছেন, এছাড়াও ডোর টু ডোর ভিজিট করে আমরা অভিযোগ কালেক্ট করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও আমাদের এই বুথে আমরা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান করছি। এখানে কেউ আসলে সরাসরি আমরা অভিযোগগুলো গ্রহণ করছি।”
তিনি জানান, এই বুথ আগামী ১৯ তারিখ পর্যন্ত খোলা থাকবে। এরপর যাচাইবাছাই করে সিডিউলভুক্ত অভিযোগগুলো গণশুনানিতে উত্থাপন করার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ এখানে জেলা প্রশাসনে যারা কর্মরত রয়েছেন। সরকারি কিংবা আধা- সরকারি কিংবা যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলেছি সেগুলোর যেকোনো স্তরের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সেবাগ্রহীতা বলেন, “আমি একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। বুথে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ব্যবহার খুব ভাল লেগেছে। যে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা শহরের অন্য একজন বাসিন্দা বলেন, “সরকারি বিভিন্ন অফিসে এখনও ঘুষ বাণিজ্য চলছে। উনারা বলছেন উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি করবেন। সেই শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি আমাদের চিনে রাখবেন। পরে দুদকের কর্মকর্তারা চলে গেলে তিনি যে আমাদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র বা আমাদের কোন ক্ষতি করবেন না এর নিশ্চয়তা কে দেবে?”
সাধারণ জনগণের দাবি, শুনানির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রেখে তদন্তের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। অথবা তারা কোন প্রতিহিংসার শিকার হবেন না এমন আশ্বাস দিতে হবে।
এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেহেতু এটি গণশুনানি তাই এক্ষেত্রে নাম পরিচয় গোপন রাখার কোন সুযোগ নেই। তবে অভিযোগকারী ব্যক্তি কোন প্রতিহিংসার শিকার হলে দুদককে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।