
অরবিন্দ রায়
স্টাফ রিপোর্টার।।
গোলয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী ১৬১ তম পাগল
নাথের মেলা সম্প্রীতির বন্ধন। শত শত মানুষের আগমনে পাগল নাথের মেলা হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর। আজ থেকে দেড়শত বছর আগে চিকিৎসা ব্যবস্হা উন্নত ছিল না।
কার্তিক মাস থেকে শুরু করে শীতের দিনে মানুষ মারা যেত বেশি। তাই এ গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতো বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাগল নাথের মেলা শুরু করে।
প্রতি বছর কার্তিক মাসে ১ তারিখ থেকে ৭ দিন গোলয়া গ্রামের মানুষ নিরামিষ খেয়ে প্রতিরাতে কীর্তন করে। সপ্তম দিন সারাদিন কীর্তন ও মেলায় আগত সকল মানুষকে পেট ভর্তি খিচুড়ি খাওয়ানো হয়।
ডক্টর চিওরঞন রায় জানান, এক সময় গোলয়া গ্রামের প্রধান উৎসব ছিল পাগল নাথের মেলা। এ মেলা সম্প্রীতির এক বন্ধন। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য আমরা আজও রক্ষা করে চলছি। গ্রামে এখন দুর্গাপূজা, অষ্টপ্রহর, স্বরসতী পূজা সহ বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়। আধুনিকতার ছোঁয়া এ গ্রামেও লেগেছে। তারপরও পূর্ব পুরুষদের বিশ্বাস কে ধরে রেখে আজও আমরা বিশ্বাসে প্রতি বছর পাগল নাথে উৎসব পালন করে আসছি।
গোলয়া গ্রামের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় পাগল নাথের মেলা। বোয়ালী, শ্রীপুর, রঘুনাথপুর, সিকদার চালা, বেড়া চালা, সোনাতলা, তালতলী, বাঁশতলী,গাছবাড়ী সহ আশে পাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এ মেলায় আসে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা মেলাশ এসে সনাতন ধর্মী মানুষ সাথে মতবিনিময় করেন।
প্রকৌশলী কৃষ্ণ দয়াল রায় জানান, পাগল নাথ আমাকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। তাই তো আমি ও আমার পরিবার পাগল নাথের ভক্ত।
শিক্ষক খুশীমোহন রায় জানান,গোলয়া গ্রামের মানুষ ৭ দিন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে নিরামিষ খেয়ে থাকে ।পাগল নাথ আমাদের সকল দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। তাই আমাদের মনের গভীরে বিশ্বাসে পাগল নাথ আছে।
কালের বিবর্তনে সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। আধুনিক যুগে ওয়ানটাইম প্লেট, সহ বিভিন্ন প্লেট বের হয়েছে। তারপরও কলাপাতায় খাবার বিতরণ করে ঐতিহ্য রক্ষা করা হয়েছে।
শহর থেকে গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্হার ভালো হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্হা উন্নত হয়েছে। সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিয়েছে। সে সময় মানুষের সাথে যোগাযোগ প্রধান মাধ্যম ছিল পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি আদান প্রদান করা। এখন মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন। কৃষকদের ফসল বন্যা কিংবা খড়ায় নষ্ট হয়ে গেলে এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। সরকার এখন কৃষকদের জন্য কৃষি ঋনের ব্যবস্হা, কৃষকদের জন্য কৃষি উপ সহকারী গ্রামের গিয়ে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়েছে। সরকার কৃষিতে ভর্তকি দিচ্ছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। এখন মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটায় না। মানুষের জীবন যাএার মান উন্নত হয়েছে।
দেড়শত বছর আগে মেলার দিন রাতে নাটক, যাএা অনুষ্ঠিত হতো। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর নাটক যাএা গান অনুষ্ঠিত হয় না। তবে পাগল নাথের অন্যান্য অনুষ্ঠান যথাযথ পালন করা হয়।
বোয়ালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, বোয়ালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ, বোয়ালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ মেলায় এসে পাগলনাথের ভক্তদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
গোলয়া গ্রামে বিরাজ করছে আনন্দমুখর পরিবেশ।