প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ৮:২১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ৭:১৪ পি.এম
৮ লাখ মানুষের চারজন চিকিৎসক, বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
নানা সংকটে ধুঁকছে ৫০ শর্য্যার সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসক, কর্মচারী, এমনকি পরিছন্নতাকর্মীর প্রায় সবগুলো পদ শূন্য। অস্ত্রোপচার কক্ষ থাকলেও এর সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা। জরুরি প্রয়োজনে বেশি টাকা খরচ করে জেলা ও বিভাগী শহরের বেসরকারি হাসপাতালে বা ক্লিনিকে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে। একজন চালক চালাচ্ছেন দুইটি গাড়ি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ির চালক সময় পেলে চালান অ্যাম্বুলেন্স। চারজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৮ লাখ মানুসের চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, কর্মচারী ও পরিছন্নতাকর্মী বাদে পনেরটি ইউনিয়ন, সাতটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট মঞ্জুরীকৃত পদ আছে ৬১টি। এর মধ্যে শূন্য ৫১টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদ আছে ২৪টি। এর মধ্যে শূন্য ১৬টি। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে মেডিকেল অফিসার, উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে সহকারি সার্জনের পদ রয়েছে। সেখানে একজনও মেডিকেল অফিসার, সার্জন ও উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। অবসর, বদলিজনিত কারণে পদগুলো শূন্য রযেছে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। পিয়ন, স্বাস্থ্যকর্মী মাঝে মাঝে ওষুধ বিতরণ করেন। অস্ত্রোপচার না করায় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২২ জুলাই অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. আব্দুস সালেক মিয়াকে বদলী করা হয়। এর পর থেকে আর নতুন চালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে কম খরচে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো রোগী। অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারি মালিকা অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে করে গুরুতর রোগীদের অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। গড়ে প্রতিমাসে শতাধিক রোগী সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সচল ও একটি অচল অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সুন্দরগঞ্জ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাড়া দিতে হতো ১ হাজার ২০ টাকা। অথচ এখন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হচ্ছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. জোবাইদুর রহমানের বলছিলেন দীর্ঘ দুই বছর ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স দু’টি পড়ে রয়েছে, দেখার কেউ নেই। একটি মাঝে মাঝে চলে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হতে ৭ রোগী এখান থেকে রংপুরে স্থানান্তর করে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে রোগী রংপুরে নিয়ে যায় রোগীর স্বজনরা। এই যদি হয় একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে। ছাড়া তিনি আরও বলেন ৬ মাস না যেতেই বদলি হচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। বর্তমানে চার জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। এছাড়া খবার রবাদ্দসহ বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রোগী আনারুল ইসলাম বলেন, এখানকার ল্যাট্রিনগুলো ব্যবহার করা যায় না। পানিয় জলের অভাব, নলকুপগুলো নষ্ট, খাবার মান একবারেই খারাপ। প্রায় সব ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়। তিনি আরও বলেন দুইদিন চিকিৎসা করার পর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারি মালিকানা অ্যাম্বুলেন্সে করে তার ভাইকে রংপুরে পাঠিয়েছেন।
ছাপড়হাটী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় সুমন মিয়ার ভাষ্য, এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কোন দিন এখানে মেডিকেল অফিসারকে আসতে দেখি নাই। মাঝে মাঝে ওয়ার্ড বয়, কোন সময় পিয়ন ওষুধ বিতরণ করে থােকন। এলাকাবাসীর দাবি বরাদ্দকৃত ওষুধ সমুহ কোথায় যাচ্ছে।
কাপাসিয়ার দূর্গম চর কালাইসোতা গ্রামের আনছার আলীর ভাষ্য, শুধু শুনেছি গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য সহকারি রয়েছে। কিন্তু কোনদিন দেখি নাই। কমিউনিটি ক্লিনিকে মাঝে মাঝে ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া নদীতে ভাসামান হাসপাতাল এসে মাঝে মাঝে ওষুধ দিয়ে যায়।
স্বাস্থ্য পরিদর্শক আলমগীর সরকার জানান, অনেক স্বাস্থ্য সহকারি অবসর গ্রহন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন করে কোন প্রকার জনবল নিয়োগ হয়নি। সে কারণে অসংখ্য পদ শুন্য রয়েছে। যার জন্য স্বাস্থ্যসেবা একটু বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন করে জনবল নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না। এটি উপর মহলের ব্যাপার, এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করার কিছুই নাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার দিবাকর বসাক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারসহ বেশির ভাগ মেডিকেল অফিসার, সহকারি সার্জন, উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে তাঁর চালক মাঝে মাধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২