
তৌহিদ বেলাল, কক্সবাজার অফিস
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান এখনো পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রয়েছেন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায়। মামলার খরচ চালাতে চালাতে তিনি এখন নিঃস্ব। রাষ্ট্রীয় আইনজীবী এবং মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া তো দূরের কথা তার মামলা নিষ্পত্তি, জানমালের নিরাপত্তা, আটকে রাখা পাসপোর্ট উদ্ধারে এই পর্যন্ত এগিয়ে আসেন নি কেউ। ৫ বছর আগে জামিনে কারামুক্তির পর এবং এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, কক্সবাজারের ডিসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আবেদন নিবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা ঝুলে আছে।
সর্বশেষ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, রাষ্ট্রপতি, তথ্য মন্ত্রনালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের আন্তরিক হস্তক্ষেপ এবং মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হলেও আবেদনের রিসিভ কপি ছাড়া নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা এই পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাননি। প্রত্যাহার হয়নি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অর্ধ ডজন মামলা।
‘বিচার বহির্ভুত মানুষ হত্যা, উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি মাদকের গডফাদর আবদু রহমান বদি, ওসি প্রদীপ ও তার লালিত মাদক-ঘুষ সিন্ডিকেটের মাদক নির্মুলের নামে নিজেদের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ’ শিরোনামে ২০১৯ সালে কয়েকটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। এছাড়া বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েন। ফলে সেই সময়ে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সেই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করে জীবনের নিরাপত্তা এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে আবেদন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য জুলুম নির্যাতন হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়াতো দুরের কথা ফরিদুল মোস্তফাকে ২০০৯ সালে বিনা ওয়ারেন্টে উল্টো ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে টেকনাফ থানার পুলিশ ঢাকা থেকে তুলে এনে কয়েকদিন পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির ৬ টি সাজানো মামলা দিয়ে চালান দেন আদালতে। আবেদন করেন রিমান্ডেরও।
ফরিদুল মোস্তফা ওইসব মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হোন। ওই সময় আদালতে মামলা ডিসচার্জের আবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারণে চার্জ গঠিত হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ইসমাইল বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার উপর ঘটে যাওয়া ওসি প্রদীপের জুলুমের কথা উল্লেখ করে সহমর্মিতা প্রকাশ, নিজের সীমাবদ্ধতা এবং তার মিথ্যা মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন।
এই অবস্থায় দায়েরকৃত ৬ টি মিথ্যা মামলা গত ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রত্যাহার হয়নি। সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে প্রদীপ গংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত তার ফৌজদারি মামলাটি রেকর্ড হয়নি আজও। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গত ৫ বছর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বারবার সময়ের দরখাস্ত দিয়ে সময়ক্ষেপন করায় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার আইনজীবীরা পুলিশের পরিবর্তে মামলাটি বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আমলে নেওয়ার আবেদন করলেও তা কার্যকর হয়নি।
একই সাথে ফরিদুল মোস্তফার সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা, সিডিএমএস সংশোধন ও জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত হাইকোর্টে রিট আবেদনটিও নিষ্পত্তি হয়নি গত ৬ বছরে। কেন তার জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া হবেনা মর্মে স্বরাষ্ট্র সচিব, কক্সবাজারের ডিসি, এসপিসহ বিবাদীদের রুলেই আটকে আছে রিট পিটিশন। পিবিআইকে এ ঘটনার ৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে গত ৬ বছর ধরে হাইকোর্টে উক্ত প্রতিবেদনটি জমা না দিয়ে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করা হয়।
ফরিদুল মোস্তফা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার নামে পূর্বের ইস্যুকৃত ডিজিটাল পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নবায়নের আবেদন করলেও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের অজুহাতে পাসপোর্টটি স্থগিত করে দেন পাসপোর্ট মহাপরিচালকের পক্ষে এক কর্মকর্তা।অথচ ডিজিটাল পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনের প্রয়োজন নেই মর্মে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে টানা ৫ বছর পাসপোর্ট নবায়ন করে না দেওয়া দুর্বলের উপর সবলের জুলুম বলে মনে করছেন ফরিদুল মোস্তফার স্বজনেরা। এই অবস্থায় নির্যাতিত এই সাংবাদিক ও তার পরিবার মামলা প্রত্যাহার, পাসপোর্ট ফিরিয়ে পাওয়া, থানার রেকর্ডপত্র সিডিএমএস সংশোধন, পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, পুলিশ সদর দপ্তর, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, উচ্চআদালত, সকল গোয়েন্দা সংস্থা, পাসপোর্ট সদর দপ্তর, মহাপরিচালক পাসপোর্ট অ্যান্ড
ইমিগ্রিশন, দেশী-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
ফরিদুল মোস্তফা কক্সবাজারের একজন পেশাদার কারা নির্যাতিত মজলুম সাংবাদিক। দুই যুগের অধিককাল ধরে তিনি বাংলাদেশ বেতারসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যামে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কক্সবাজারবাণী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।
পেশাগত রোষানলের শিকার ও লেখালেখির অপরাধে ফরিদুল মোস্তফা নিজের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এখনো।