প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২৯, ২০২৫, ১:০৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৫, ২০২৫, ১:৫৪ পি.এম
হরিপুর রাজবাড়ি ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির কাজ চলমান

নয়ন হোসেন,
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা, যা হরিপুর থানা হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ঠাকুরগাঁও জেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। যা হরিপুর রাজবাড়ী নামে পরিচিত।
হরিপুর রাজবাড়ি ছিল একটি প্রাসাদোপম অট্টালিকা, যা ১৮৯৩ সালে নির্মিত হয়। দ্বিতল ভবনের লতাপাতার নকশা ও পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি ছিল। রাজবাড়িতে একটি বড় পাঠাগার, শিব মন্দির ও নাট মন্দির ছিল। বর্তমানে রাজবাড়িটির অধিকাংশ অংশ অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়রা রাজবাড়ির সংরক্ষণে উদ্যোগী হলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহায়তা প্রয়োজন।
হরিপুর উপজেলা প্রশাসনিকভাবে ঠাকুরগাঁও জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে হরিপুর উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অবস্থিত। স্থানীয়রা শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী, যা রাজবাড়ির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
শিব মন্দির ও নাট মন্দির: ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থান। স্থানীয় গ্রাম ও বাজার: গ্রামীণ জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির পরিচায়ক।
প্রাচীন ইতিহাস।
হরিপুরের ইতিহাস প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুণ্ডু নামে এক ব্যবসায়ী হরিপুরে এণ্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম নারী এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তার জমিদারির কিছু অংশ খাজনা অনাদায়ে নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুণ্ডু তা কিনে নেন।
ঘনশ্যামের বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হরিপুর রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক 'রাজর্ষি' উপাধিতে ভূষিত হন। রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি ছিল।
রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, যা শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তার অনুরাগের পরিচায়ক। ভবনটির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির ছিল। রাজবাড়িতে ছিল একটি বড় পাঠাগার, যার অস্তিত্ব এখন নেই। রাজবাড়িটির যে সিংহদরজা ছিল তাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
হরিপুর থানা বা উপজেলা ঠাকুরগাঁও জেলার একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। হরিপুর রাজবাড়ি, শিব মন্দির, নাট মন্দির ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন এই অঞ্চলের গৌরবময় অতীতের সাক্ষী। যদি এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২