প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৭, ২০২৫, ৫:২৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৫, ২০২৫, ৪:৫৫ পি.এম
সৈকতে ২০০ কোটি টাকার জমি দখল করে দোকান নির্মাণ দুদক’র অভিযান

তৌহিদ বেলাল, কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। এখানে সড়কের দক্ষিণ পাশে দুই একরের বেশি সরকারি জমি দখল করে সেখানে তৈরি করা হচ্ছিলো ৯০টির বেশি পাকা দোকান। জায়গাটির বর্তমান বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি।
গত পক্ষকাল ধরে টিনের উঁচু ঘেরা দিয়ে ভেতরে রাতদিন নির্মাণ করা হচ্ছিলো দোকানপাট। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি জমি দখল করে ওবাইদুল নামের এক ব্যক্তি সেখানে দোকান নির্মাণ করছিলেন। ওবাইদুল আ'লীগের সহযোগী সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতা। জায়গাটি তিনি সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তবে সচ্চিদানন্দের নামে কোনো খতিয়ান খুঁজে পায়নি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন।
বহুল আলোচিত ঘটনাস্থলটি সোমবার (৪ মে) দুদকের একটি দল পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানতে চায় সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, টিনের ঘেরার সবুজ রঙ করা তালাবদ্ধ একটি ফটকে সাইনবোর্ড ঝুলছে। তাতে লেখা, ‘এই প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’ পাশে টাঙানো আরেকটি বিলবোর্ডে লেখা, ‘মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ দ্বারা নিষেধাজ্ঞা আছে। সংরক্ষিত এলাকা, উন্নয়নকাজ চলিতেছে। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেলো বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ নেতা ওবাইদুল হোছাইন লোকজন নিয়ে সরকারি ২ একর ৩০ শতকের জমিটি দখল করে নেন। এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দখলদারদের তাড়িয়ে দেওয়ায় কিছুদিন জায়গাটি খালি পড়ে ছিল। মাসখানেক আগে উচ্চ আদালতের একটি নোটিশ টাঙিয়ে জায়গাটি ফের দখল করে নেন ওই ব্যক্তি। এরপর টিনের ঘেরা দিয়ে ভেতরে দোকানপাটের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।
সম্প্রতি সুগন্ধা সড়কের সরকারি জমিতে গোপনে দোকানপাট নির্মাণের ছবি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- কউক কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারি জমিতে রাতের অন্ধকারে দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছিলো। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে নির্মিত দোকানপাট সরিয়ে না নিলে উচ্ছেদ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সৈকত এলাকায় যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে কউকের অনুমোদন লাগে। দোকানপাট নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি জানিয়ে কউকের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ তানভীর হাসান বলেন, অবৈধ স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ওবাইদুল হোছাইন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মামলায় কয়েক মাস করাভোগও করেন। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে সরকারি জায়গাটি ফের দখল করে দোকানপাট নির্মাণ শুরু করেন তিনি।
ওবাইদুল হোছাইন বলেন, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গাটি ভাড়া নিয়ে তিনি দোকান নির্মাণ করছেন। দোকান উচ্ছেদ না করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা ভূমি অফিসের সিল, সই জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি বিএস খতিয়ান সৃজন করে সরকারি খাস জমিটি দখলের জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, ভূমি অফিসের মূল রেকর্ডে সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার (৪ মে) দুদকের একটি দল সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এসময় দখলদারদের লোকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে প্রবেশে বাধা দেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২