প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ৭:১২ পি.এম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামে পাহাড়খেকো ইয়াছিনের দৌরাত্ম্য, দোকান বাড়ি ভাঙচুরে ব্যবসায়ীর কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুর আলী নগরের ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াছিন এবং তার সহযোগীদের হামলায় এক ব্যবসায়ীর দুটি দোকান ও বসতবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, এতে তার প্রায় ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বাস্তহারা দলের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রাজু।
তিনি সন্ত্রাসী ইয়াছিনকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
রাজু অভিযোগ করেন, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ইয়াছিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার ছিন্নমূল গোলাপের দোকানের মোড়স্থ প্রথম দোকানে হামলা চালায়। তারা ভাঙচুর করে, নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং দোকানের সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরদিন (৩১ আগস্ট) দুপুরে তার বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়, আলমারিতে রাখা তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করা হয়। একই রাত ১টা ৪০ মিনিটে তার দ্বিতীয় দোকানে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করা হয়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় তার স্ত্রী রুনা আক্তার বাদী হয়ে ইয়াছিনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে সীতাকুন্ড মডেল থানায় মামলা করেছেন। কিন্তু মামলা হলেও ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়নি। এতে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে প্রায় দুই দশক আগে ইয়াছিন ও তার সহযোগী ফারুক চট্টগ্রামে আসেন। শুরুতে অটোরিকশা চালালেও পরে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় ভাড়া বাড়ি নিয়ে বসতি গড়েন। এরপর পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, অবৈধ প্লট বানানো ও বিদ্যুৎ সংযোগে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অল্প সময়েই বিপুল অর্থসম্পদ অর্জন করেন। রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন এবং নাম দেন ‘আলী নগর’।
অভিযোগ রয়েছে, আলী নগরে প্রবেশ ও বের হতে হতো তার অনুমতি নিয়ে। বাইরের কেউ এলে ভোটার আইডি ও মোবাইল ফোন জমা দিতে হতো নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ছিল বিশেষ পাসকার্ড, যা ইয়াছিনের স্বাক্ষর ছাড়া অকার্যকর। থানায় মামলা করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সব বিচার চলত ইয়াছিন ও ফারুকের আদালতে।
তিনি আরও বলেন, ইয়াছিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে—
২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা ৭-৮টি মামলা, সীতাকুণ্ড, বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় ভুক্তভোগীদের দায়ের করা ৮টি মামলা, ২০২২ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মমিনুল রহমানের নেতৃত্বে অবৈধ পাহাড় উচ্ছেদ অভিযানে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া ৭টি মামলা এবং ২০২৫ সালে র্যাবের ওপর ইয়াছিন বাহিনীর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা। এছাড়া ২০১৭ সালে দায়ের হওয়া একাধিক হত্যা মামলা।
নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী রাজু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ইয়াছিনকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সার্ভেয়ার মুজিবুর রহমান, ব্যবসায়ী রাজুর স্ত্রী রুনা আকতার, জামাল উদ্দিন, মাইমা, রাশেদা আকতার, আবদুল হালিম, পান্না মল্লিক, আবদুল শুক্কুর।