প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ৯:১১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ৬:০২ পি.এম
সংরক্ষণহীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজা গণেশের প্রাচীন নিদর্শন
নয়ন হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের গড়ভবানিপুর মৌজায় অবস্থিত চব্বিশ পরগনার ঐতিহাসিক ভাতুরিয়া রাজা গণেশের বসতভিটা, গড়, পুকুর ও দুইটি নদসহ সব নিদর্শনই এখন প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ ৬০০ বছরের ইতিহাস আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
হরিপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজা গণেশের এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। এখান থেকে ভারত সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ১-২ কিলোমিটার। ১৪১৪ থেকে ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজা গণেশ ভাতুরিয়া অঞ্চলের শাসনভার পরিচালনা করেন। পরে তার পুত্র যুদু মিঞা ওরফে জালালউদ্দিনের হাত ধরে ২৪ পরগনা অঞ্চলে ইসলাম প্রচার বিস্তার লাভ করে।
প্রায় ৫০ একর জমিজুড়ে ছিল রাজা গণেশের বসতি, নদ ও পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কালের বিবর্তনে বাড়ির ভিটের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। এলাকার একসময়ের বৃহৎ গড়টি আজও টিকে থাকলেও যথাযথ সংরক্ষণ না থাকায় তা দ্রুত ভেঙে পড়ছে। গড়ে রয়েছে বনজ, ফলজ ও নানা ঔষধি গাছসহ বহু প্রাচীন নিদর্শন।
রাজা গণেশের বসতভিটার দু’পাশে ছিল দুটি নদ, যেগুলোর উৎপত্তি কুলিক নদী থেকে। ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেসব নদ এখন চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট। স্থানীয়রা বলছেন, নদ দু’টি পুনঃখনন ও সংস্কার করা হলে কৃষিখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব।
গড়ের পাশে রয়েছে প্রায় ১০ একরজুড়ে তন্নীদিঘী নামে বিশাল পুকুর। একসময় পুকুরটি ৭৫ ফুট প্রস্তের মাটির প্রাচীর দ্বারা ঘেরা ছিল। এখানেই রাজার ঘোড়দৌড়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বলে মনে করা হয়। পুকুরের ভেতর এখনো একটি বিশাল শাল কাঠের খুঁটি দেখা যায়, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনি।
পুকুরের পূর্বপাড়ে রয়েছে শাহাজালাল কুতুবে আলম পীরের মাজার ও বিশাল কবরস্থান, যা স্থানীয়ভাবে ‘তন্নীদিঘী পারিবারিক কবরস্থান’ নামে পরিচিত। এলাকার একাধিক গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের পূর্বপুরুষদের কবর এখানে রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় প্রবীণদের। এর দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে শাহা তিসতিয়া পীরের মাজার ও দুইটি অজ্ঞাত প্রাচীন কবর।
১৯৯০ সালে পুকুরপাড়ে ৩৮টি পরিবারের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে সরকার। সেই সময় থেকে পুকুরটি তাদের দখলেই আছে। সংরক্ষণের অভাবে শুষ্ক মৌসুমে এখন পুকুরেও পানি থাকে না।
ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজান সরকার বলেন—
“রাজা গণেশের ইতিহাস আমরা পাঠ্যবইতে পড়েছি। কিন্তু তার প্রাচীন নিদর্শনগুলো আজ অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। এগুলো রক্ষা করা গেলে এখানে বড় ধরনের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব, যা সরকারকে রাজস্ব আয়েও সহায়তা করবে।”
স্থানীয়দের দাবি—
সরকারি উদ্যোগে দ্রুত রাজা গণেশের সকল নিদর্শন সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হলে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ফিরে পাবে নতুন প্রাণ।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২