দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক ।।
অনিয়ম যেখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ন্যায়-অন্যায় বলে কিছু নেই। অবৈধ আবাসন কোম্পানীর বালির চাপায় নিঃস্ব হচ্ছে গরিব অসহায় মানুষের মাথা গোজার শেষ ঠিকানা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। এমনই নৈরাজ্য চালাচ্ছে রূপগঞ্জে মেরিন সিটি নামক আবাসন কোম্পানী । উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের আটটি মৌজার শত শত বিঘা কৃষি জমি রাতের আধারে বালি ফেলছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভরাট করে দখলে নিচ্ছে কোম্পানীটি। ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা ভূক্তভোগী কৃষকরা, আতঙ্কে কাটছে তাদের জীবন। প্রতিবাদ করলেই চলে মামলা হামলা, এমনকি প্রান নাশের হুমকী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, টেকদাসেরদিয়া, তিনওলোপ, কালনী, বড়আমদিয়া, বৈলদা, হিরনাল মৌজার শতকরা ৮৫ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম কৃষি কাজ। একই জমিতে দুইবার ফসল হলে সারা বছরের ধানচালের জোগান হতো। বর্ষা এলে অনেক কৃষক কর্মহীন হলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। মেরিন সিটি নামক আবাসন কোম্পানীর বালি কেড়ে নিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের কর্মস্থলের শেষ ঠিকানা। এক দিকে যেমন জমি হারাচ্ছে, আবার কর্মহীন হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার হারাচ্ছে বাপ-দাদার ভিটে মাটি।
হাইকোর্টের আদেশকে অমান্য করে মেরিন সিটি নামক আবাসন প্রকল্প। কৃষকদের জমিতে জোড়পূর্বক বালি ভরাট করছে। কৃষি জমি, সরকারী খাল, অর্পিত ও খাস জমি এবং গ্রামীন রাস্তাঘাট। আবাসন প্রকল্পটি বালি ফেলে ভরাট করে ফেলছে। আবাসন প্রকল্পের বালি ভরাটের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলাসহ নানারকমভাবে কৃষকদের হয়রানী করা হচ্ছে। কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোন সুফল পাচ্ছেনা।
রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের ওই এলাকার বেশিরভাগ তিন ফসলি কৃষিজমি। কোন জমিতে শাকসবজি চাষ করা হয়েছে কোন জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে আাবার কোন জমিতে লাউ ও সিমের মাচা। ফলনও হয়েছে বেশ। এরই মধ্যে আবাসন প্রকল্পের বালু ভরাট কাজ চলছে। কৃষকরা জানিয়েছে, জমির নাম মাত্র ওয়ারিশ ক্রয় করে কিংবা কিছু অংশ জমি ক্রয় করে আশপাশের জমি রাতের আধারে অবৈধভাবে দিনেরাতে বালি ভরাট কাজ চলছে। প্রতিবাদ করার কারো সাহস নেই নিরবে নির্বৃত্তে কৃষকরা কাঁদছে।
এ ব্যাপারে কৃষকরা উপায়ন্ত না পেয়ে ২০২২ সালে ১২ জন কৃষক হাইকোর্টে রিট পিটিশন মাললা দায়ের করে। মামলা নং ৯৫৭৯/২০২২ইং। হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১২ই মার্চ মেরিন সিটির সকল কার্যক্রম স্থিতি অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মেরিন সিটি হাইকোর্টের দেয়া এই আদেশকে অমান্য করে কৃষকদের তিন ফসলি জমি জোড়পূর্বক ভরাট করছে। এছাড়া মেরিন সিটি কৃষকের জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে মেরিন সিটির প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বালি ভরাটের পাইপ বসানো হয়েছে। এক দিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে পাইপ থেকে লিকেজ হয়ে ফসলি জমিতে বালি পড়ে স্তুপে পরিণত হচ্ছে। তাতে কৃষকরা মারাত্বকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মূক্ষিন হচ্ছে।
দাউদপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক তমিজ উদ্দিন রাজ বলেন, জমি না কিনেই কৃষকদের জমি ভরাট করা হচ্ছে। মেরিন সিটি স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এখানে কৃষকরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে।
কালনী এলাকার কৃষক সামসুদ্দিন ওরফে সূরুজ মিয়া বলেন, হিরনাল মৌজার তার ২৮ শতাংশ কৃষি জমি মেরিন সিটি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বালি ভরাট করছে। বালির সঙ্গে আসা পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
টেকদাসেরদিয়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী ও লোকমান হোসেন বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও মেরিন সিটির নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা আবাসন প্রকল্পের পক্ষ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
মেরিন সিটির প্রকল্পপ রিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কেনা জমিতেই বালি ভরাট করছি।হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে ফোন কেটে দেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮