মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাসেল রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিষিদ্ধ গাইড বই না নিয়ে বিদ্যালয়ে কোচিং করতে যাওয়ায় এসএসসি পরিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) উপজেলা সদর ইউনিয়ন জাঙ্গির উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীর নাম মেহেদি হাসান।
শিক্ষার্থীর বাবা হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন আমার ছেলে এবার এসএসসি পরিক্ষা দিবে। সে স্কুল ড্রেস, আইডি কার্ড, বই খাতাসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিয়ে নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতো। বর্তমানে সে স্কুলেই কোচিং করছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিদিনের মতো স্কুলে কোচিং করার জন্য যায়। প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে আমি লোকের মাধ্যমে সংবাদ পাই আমার ছেলে স্কুলে অসুস্থ হয়ে গেছে। আমি দ্রুত স্কুলে এসে জানতে পারি একটি বই তার সাথে না থাকায় স্কুলের শিক্ষক একরামুর রহমান তাকে পিটিয়ে আহত করে। আমি আমার ছেলের পিঠে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই এবং এ ঘটনার বিষয়ে একরামুর শিক্ষকের কাছথেকে জানতে তাকে খোঁজ করেও স্কুলের কোথাও পাইনি। পরে আমি আমার মেয়ের জামাই এবং ছেলেকে সাথে নিয়ে স্কুলের প্রধাণ শিক্ষক ফরিদ হোসেন মোল্লা সাহেবের কাছে বিচার চাইতে যাই। তিনি এ ঘটনায় একরাম শিক্ষকের অপরাধ স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে পরে ব্যাবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি খেটে-খাওয়া মানুষ। শত কষ্টেও ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। স্কুলের শিক্ষকরা ছেলেকে যখন যে বই কেনার কথা বলেছে ধারকর্জ করে হলেও তা কিনে দিয়েছি। যে বইটির জন্য আমার ছেলেকে পিটালো আমি অনেক আগেই স্থানীয় বাজারের লাইব্রেরী থেকে তা কিনে দিয়েছি। ছেলে বাসাথেকে তার সাথে নিতে ভুলেগেছিলো। স্কুল থেকে ছেলেকে আনার পর স্থানীয় পল্লী চিকিৎসালয়ে ছেলের প্রাথমিক চিকিৎসা করান। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন আমার ছেলে কী এমন ভুল করেছে যে তাকে এমন অমানবিকভাবে মারতে হল। এ ঘটনায় ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিবেন বলেও জানান তিনি।
জানাযায় একরামুর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়, ২০২৩ সালে দশম শ্রেণীর শিক্ষকর্থী সামিয়া আক্তারকে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলা কালিন বেত্রাঘাতে আহত করার অভিযোগ আছে। তখন এই শিক্ষককে কারন দর্শিয়ে আইনগত ব্যবস্তা নিতে উদ্যোগি হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। বিষয়টি কয়েকটি গণমাধ্যমেও তুলেধরা হয়েছিলো। এরপরেও ক্লাস চলাকালে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, কারনে অকারনে বেত্রাঘাত, প্রাইভেট পরতে চাপ দেয়াসহ নানা বিষয়ে বেশ কয়েক বার স্কুল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা প্রধাণ শিক্ষক ফরিদ হোসেন মোল্লার কাছে অভিযোগ করলেও এসব বিষয়ে কোনো কর্নপাত না করে রহস্য জনক কারনে চুপ থেকেছেন তিনি।
সরকার থেকে প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হয়। এনসিটিবির অনুমোদন ব্যতীত পাঠ্যতালিকায় অন্য কোনো বই ব্যবহার না করতে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। তাছাড়া সৃজনশীল মেধা বিকাশ নিশ্চিতে বিগত ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট বই এবং গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। আর আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা স্বত্বেও এই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় প্রতিটা শ্রেণীকক্ষেই গাইড বই ব্যবহার করা এক প্রকার উপেন সিক্রেট।
জানাযায় প্রতি বছরই নির্দিষ্ট প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেন এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন মুনাফালোভি শিক্ষক। যার মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত একরাম। এতে বিক্রিত বই প্রতি ঐ প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান এবং বিক্রয় কেন্দ্র লাইব্রেরী থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন দিয়ে থাকেন। এ কমিশনের একটা বাগ নাকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ হোসেন মোল্লা নিযেও পান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক একরামুর রহমানকে বিদ্যালয়ে না পেয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ঘটনার সময় আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না, পরে এসে বিস্তারিত শুনেছি। এটি অত্যন্ত নেক্কার জনক একটি ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত। গাইড বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাইড বই দিয়ে ক্লাস করানো হয় বিষয়টি সঠিক নয়। পরিক্ষার্থীদের সহায়ক হিসেবে আমরা টেস্ট প্যাপার নিতে সাজেস্ট করি এটা দোষের কিছুনা। আমার অগোচরে কোনো শিক্ষক গাইড বই দিয়ে পড়ালে ঐটা একান্তই তার বিষয়। একরামুল ইসলাম কান্ডে তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়টি বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ঘটনার পরথেকে তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি, আমরা ধারোনা করছি তিনি তার স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী চলে গেছেন। তিনি আসলে তাকে রিজাইন দিতে বলাহবে বলেও জানান এই শিক্ষক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ইসমাইল বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই এবং এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আপনাদের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে ঐ শিক্ষক কাজটি ঠিক করেননি। এমনিতেই নোট বই এবং গাইড বই দিয়ে পড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ। অভিযোগ পেলে বিদ্যালয়ে গাইড বই দিয়ে ক্লাস করানোসহ এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮