প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৩১, ২০২৫, ৩:১৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ২:৪৫ পি.এম
রামগঞ্জে গ্রাহকের ১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ডিপিও উদ্যোক্তা আনোয়ার।।

মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি।।
মেয়াদকালীন অর্থ সঞ্চয় করতে গিয়ে ভূয়া সঞ্চয়পত্র, ভূয়া চেক ও জাল স্বাক্ষরের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সহস্ত্রাধিক গ্রাহক। ফলে গত ৪ বছরে গ্রাহকদের ১০কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। সৃষ্ট ঘটনায় আনোয়ার হোসেনকে আসামী করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে প্রতারণা, চেক ডিজঅনার সহ ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ১২৬-২৪- ১৪৪-২৪- ১৯৫-২৪ইং। যা বর্তমানে পিবিআই এবং জেলা ডিবি অফিস কতৃক তদন্তাধীন রয়েছে।
রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস সূত্র জানায়, রামগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের নরিমপুর গ্রামের বাঁশওয়ালা বাড়ির মৃত আবু সাইদের ছেলে আনোয়ার হোসেন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের কাজ শুরু করে। এর কয়েকদিন পর আনোয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এশিয়ার অনুমতিক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক একাউন্ট খোলার নামে সহস্ত্রাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে। এ সুযোগে আনোয়ার হোসেন গ্রাহকদের ডাকঘর অফিস থেকে মেয়াদকালীন সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ এবং ডিপোজিট খোলার জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এতে প্রায় সকল গ্রাহক তার লোভনীয় প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে আনোয়ারের কাছে লাখ লাখ টাকা গচ্ছা রেখে সঞ্চয়পত্র চাইলে আনোয়ার লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র এবং চেকের ফটোকপি এনে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেয়। এর পর দু’এক মাস গ্রাহকের মোবাইলে লভ্যাংশের ম্যাসেজ গেলে পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এমনটাই অভিযোগ রামগঞ্জের ফাতেমা আক্তারের। তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিলো ৫ লাখ টাকা এবং তার স্বামী কামাল উদ্দিন আহম্মদের কাছ থেকে ১০লাখ টাকা। এছাড়াও ইয়াছমিন আক্তারের কাছ থেকে ৪লাখ, রাবেয়া বেগম নামের গৃহবধুর কাছ খেকে নেওয়া হয়েছে ৫লাখ টাকা। এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন পোষ্ট অফিসসহ ব্যাংক এশিয়া, রামগঞ্জ শাখায় ছুটে এসে গ্রাহকরা জানতে পারেন তাদের একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। আনোয়ারের দেওয়া সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি, চেকের ফটোকপি কোনটাই আসল নয়। গ্রাহকদের ধারনা রামগঞ্জ এবং লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিসের পোষ্ট মাষ্টারসহ অসাধু ব্যক্তিবর্গ জড়িত রয়েছে আনোয়ারের এহেন কর্মকান্ডে।
চলতি মাসে আনোয়ার নিরুদ্দেশ হলে বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সঞ্চয়পত্রের টাকা গ্রহণকালে প্রিন্ট ভাউচার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও আনোয়ার দিয়েছেন হাতে লেখা কাগজের টুকরো।
এব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস মাষ্টার মোঃ সিরাজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রতিদিন গ্রাহকগণ পোষ্ট অফিসে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানান। এসময় তিনি বলেন ২০২৩ইং সনে রামগঞ্জে যোগদান করেছেন তিনি। তাই আনোয়ারের কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনি তেমন অবগত নন। আমার পূর্বে রামগঞ্জের দায়িত্বে ছিলেন জসিম উদ্দিন। তার সময়ে আনোয়ার লক্ষ্মীপুর জেলা পোষ্ট মাষ্টারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি এনে দিতেন গ্রাহকদের হাতে যা বিধি সম্মত ছিলোনা। রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস পরিদর্শক ইমাম মেহেদী বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ২০২৩ইং রামগঞ্জে যোগদান করেছেন বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা জানান, উপজেলা ডাকঘর অফিস থেকে যারা সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করবে মাস শেষে লভ্যাংশের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক -বাংলাদেশ ব্যাংক- থেকে সরাসরি গ্রাহকের একাউন্টে এসে জমা হবে। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু যখন দেখলাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দু’এক মাস গ্রাহকের মোবাইলে ম্যাসেজ যাচ্ছে তখনি নজরে আসে বিষয়টি। পরে ক্ষতিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের একউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। সাথে সাথে রামগঞ্জ ব্যাংক কতৃপক্ষ কৌশলে আনোয়ারের পাসপোর্ট জব্দ করে। এতে আনোয়ার পালিয়ে যায়। পরে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা গুলোর ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।
এব্যাপারে রামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, সৃষ্ট ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় কোন প্রকার অভিযোগ হয়নি। আদালতের মামলার প্রেক্ষিতে থানায় এখন পর্যন্ত কোন ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাইনি। কোন গ্রাহক বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ কিংবা আদালতের ওয়ারেন্টের কপি থানায় আসা মাত্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২