
এম. শাহাবুদ্দিন, রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমের অচল অবস্থা নিরসনে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহী সচেতন নাগরিক সমাজ ও রাসিক ঠিকাদারবৃন্দ।
রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় শাহ্ ডাইন কমিউনিটি সেন্টার কনফারেন্স রুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়,
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দেশের অন্যতম নাগরিক সেবামুলক একটি প্রতিষ্ঠান। দেশ-বিদেশে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সুনাম আছে এটা আপনারা সবাই জানেন। অথচ এই সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুন্ন ও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিছু কারণে। যা আমরা প্রতিকার এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের মাধ্যমে বর্তমান সদাসয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই।
আমাদের অভিযোগসমূহ :
জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক ও মৃত্যু সনদপত্র পেতে ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নতুন হোল্ডিং খোলার জন্যও কোন সেবাগ্রহীতা এলে তারা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ছেন। ভবন নির্মাণে এনওসি পেতে রাসিক থেকেও পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। একটি এনওসি পেতে যেখানে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারদিন, সেখানে এই এনওসি পেতে সময় লাগছে প্রায় আড়াই মাস। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন করে খুলতে গেলেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন সেবা গ্রহীতারা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওলিগলিতে বৈদ্যুতিক ল্যাম্পপোস্টগুলোতে মাসের পর মাস লাইট না থাকলেও সে বিষয়ে নেই কোন ভ্রুক্ষেপ। বিভিন্ন ধরনের ভাতা পেতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর। শহরের চলমান ফ্লাইওভারের কাজে ধীরগতির কারণে জনসাধারণের কষ্টের অন্ত নেই। রাসিক কর্তৃক শহরে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প কাজের বিপরীতে ঠিকাদারদের বিল সংক্রান্ত ফাইল মাসের পর মাস কোন কারণ ছাড়াই আটকে রাখা হচ্ছে। ঠিকাদারগণ বিলের জন্য সচিবের কক্ষে গেলে তিনি তাদের সাথেও অসদাচরণ করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলা যথাসময়ে বিল না পাওয়ার কারণে শহরজুড়ে চলছে উন্নয়নমুলক কাজের ধীরগতি। কোন কোন স্থানে চলমান কাজ একেবারেই থমকে গেছে। কাজের ধীরগতি ও বন্ধ থাকার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে লম্বা ট্রাফিক জ্যাম। আমাদের ধারণা বর্তমান সরকার ও সিটি কর্পোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ অভিপ্রায় নিয়ে এই ধরণের কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন উচ্চপদস্থ দু’একজন কর্মকর্তা। আমরা তথ্য পেয়েছি এইসব কর্মকর্তার অবহেলা আর খামখেয়ালীপনার কারণে বিদ্যুৎ বিল দিতে অত্যাধিক সময়ক্ষেপন করায় রাসিককে গুণতে হয়েছে আড়াই লাখ টাকার মতো জরিমানা। জনগণের অর্থ অপচয় কেনো করা হলো সেটিও আমরা জানতে চাই। যেটি সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব কর্তাব্যক্তিরা সময় মতো অফিসে আসেন না। বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা কোন সমস্যা নিয়ে গেলেও তারা কথা বলতে চান না। যে ফাইলগুলোর কাজ সম্পন্ন হতে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারদিন সময় লাগার কথা, সেগুলো মাসের পর মাস আটকে থাকে। এই ধরনের ভোগান্তি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই। যথাসময়ে যেনো ফাইলগুলো সচিবের টেবিল থেকে ছাড়া হয় সেটির প্রতি সুদৃষ্টি দেবার আহবান জানাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি শাখা, পরিবহন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগসহ অন্যান্য শাখায় কর্মরতদের পক্ষ থেকে সচিবের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। চাকরি করার কারণে কর্মরতরা সচিবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। এছাড়াও যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও তিনি স্বাক্ষর করতে চাননা বলেও অভিযোগ অনেক। আমরা অবগত হয়েছি যে, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের বিলগুলোও কোন কারণ ছাড়াই মাসের পর মাস আটকে রাখা হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভোগান্তি কমিয়ে সেবার মানে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার জনাব খোন্দকার আজিম আহমেদ (এনডিসি) সাহেব রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আছেন। তিনি গোটা বিভাগের কর্তা। এর সাথে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মতো আরো একটি বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্ব তার উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, সিটি কর্পোরেশনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী প্রশাসকের পরিবর্তে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেয়া অতিব জরুরি। স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কাজে গতিশীলতা ফিরবে। রাজশাহীবাসির ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ’র বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে হলে স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। আমরা বলতে চাই, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মতো একটি বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজের গতি ফেরাতে নির্বাচিত মেয়র না আসা পর্যন্ত স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হোক।
বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ রেজাউল করিম ও সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভোগান্তি বাড়িয়ে সেবাগ্রহিতাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তারা রাসিকের দায়িত্ব নেবার পর থেকে আজ অবদি অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজ এর আগে যেখানে কর্মরত ছিলেন সেখানেও তিনি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট ধাঁচের আচরণ করা এই সচিবের বিরুদ্ধে উত্থাপতি নানা অভিযোগ ও জনভোগান্তির হাত থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়মের কারণে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসনে মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ এর যুগ্ম-সচিব আবুল হায়াত মোঃ রফিক স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে রুমানা আফরোজকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সচিব পদে যোগদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়। তিনি রাসিকে যোগদান করেন এবং সকল পর্যায়ের সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি শুরু করেন। স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া এবং সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজ-এর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি আর হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনারা আমাদের পাশে থেকে আপনাদের লেখনি ও সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাজে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা করুন। বর্তমান সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজকে তার দ্বায়িত্ব থেকে হটিয়ে একজন সৎ ও সেবামুখী সচিব নিয়োগ দেওয়া হোক।
আমি-আপনি আমরা সবাই রাজশাহীর মানুষ। আমাদের এই প্রাণপ্রিয় রাজশাহীকে রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। রাজশাহীর সাধারণ মানুষ হিসাবে আপনাদের মাধ্যমে সদাসয় সরকারের নিকট রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অচলাবস্থা নিরসনে আবেদন করছি। আমাদের বিশ্বাস বর্তমান সরকার বাহাদুর এই জনগ্রুত্বপূর্ণ বিষয়টি নজর দিবেন। আর দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা না হলে রাজশাহীর সাধারণ ভূক্তভোগী মানুষদের নিয়ে আমরা ঠিকাদারগণ একযোগে রাসিকের চলমান সকল উন্নয়ন কাজ আগামী ২৩ জুলাই-২০২৫ রোজ বুধবার থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছি। এছাড়া আগামী ২৭ জুলাই-২০২৫ রোজ রোববার সিটি কর্পোরেশনের সামনে মানববন্ধন করা হবে বলে অমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের রাজপথে নামতে হবে। পরিশেষে আপনারা ধর্য্যসহকারে আমাদের দাবীগুলো শুনলেন এবং আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন এ জন্য আবারো আপনাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।