প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ৯:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ১২:৫০ পি.এম
মেহেরপুরে ১২ কোটি টাকার ওয়াকওয়ে ১ বছরের ব্যবধানে ভেঙ্গে নদী গর্ভে।।
স্টাফ রিপোর্টার- মেহেরপুর।।
মেহেরপুরের ভৈরব নদের দু'পাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের ১ বছর পার হতেই ওয়াকওয়েতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ না করেই জোর পূর্বক দু'ফসলী জমি দখল করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করেছে ওয়াকওয়ে। ইতোমধ্যে সেটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামত করা হবে।
জানা গেছে- ২০২৩ সালে জানুয়ারি মাসে মেহেরপুরের ভৈরব নদের দু'পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১৮ কি.মি. নির্মান কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করেন ওয়াকওয়ে। ওয়াক ওয়েতে ঠিক মতো বালি ও ১নং ইট দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
ওয়াকওয়ের দু’পাশে মাটি ভরাট না করায় কিছুদিন পরই হালকা বৃষ্টিতে ওয়াকওয়ের বিভিন্ন স্থান দেবে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পাইপ ও পাড়ের মাটি রক্ষায় কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় কোথাও কোথাও শখের ওয়াকওয়ে বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ফলে একদিকে যেমন সরকারের উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা গেছে অন্যদিকে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন এলাকাবাসী। মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনীর সবজি ব্যবসায়ি মহিবুল জানান- তিনি নদীর পাড়ের ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করে থাকেন। ইতিপূর্বে কাঁচা রাস্তায় যাওয়া গেলেও এখন পাকা হেরিংবন্ড করায় মনে আশা জাগলেও সেটি হচ্ছে না। রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে চলাচলে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেহেরপুর শহরের শ্মশান ঘাট এলাকার কৃষ্ণ নারায়ণ চক্রবর্তী জানান- আমাদের শ্মশান ঘাট এলাকার একটি স্থানে একখানি ভেঙ্গে গেছে। ফলে মরদেহ শ্মশানে আনতে অনেক কষ্ট হয়। তবে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পূর্বে কোন সমস্যাই ছিলনা। বর্তমানে ওয়াকওয়ে আমাদের কোন কাজে আসছে না বরং ওয়াকওয়ে আমাদের মত সাধারন মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সকল কর্মকর্তারা এর দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি সঠিকভাবে কাজটি সম্পাদন করতো তাহলে ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে হতো না ওয়াকওয়েকে। তবে দ্রুত মেরামতের দাবীও জানান তিনি।
মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি জাহিদুল ইসলাম জানান- ভৈরব পাড়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে মেহেরপুর শহরে কাজ করতে যেতাম। ফলে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হতো অন্যদিকে মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ কম লাগতো। বর্তমানে অনেক জায়গা ভেঙ্গে যাওয়াতে ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে এখন মেহেরপুরবাসীর কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মেহেরপুর শহরের ১নং ওয়ার্ড নতুন পাড়া ভৈরব নদীর পাড় দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ কিছু প্রভাবশালী ভূমি জবর দখলকারীদের ইশারায় নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে নদীর একেবারেই ধার দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলে ২০২৩ সালের মার্চে অভিযোগ এনেছিলেন ওয়ার্ডবাসী। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হলেও টনক নড়েনি কারো।
এব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে অবগত করেও প্রতিকার পায়নি ওয়ার্ডবাসীরা।
মাহাবুবুল হক পোলেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একরকম জোর করেই দু'ফসলী জমি দখল করে তৈরি করেছে ওয়াকওয়ে। সরকারি ভাবে কারো কাছ থেকে জমি অধিগ্রহন করেনি। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার পেশী শক্তির বলে ওই জমি জবর দখল করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। কিছু বলতে গেলেই নানা ধরনের হুমকী দেওয়া হতো। শুধু পোলেন নয়, স্থানীয়দের অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে জমি জবর দখলের অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জমির মালিক জানান, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ও সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভৈরব নদের পাড়ে সাধারণ অসহায় কৃষকের জমি জোরপূর্বক দখল করে নির্মাণ করেন ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়ে কাজে বাঁধা দিতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী তার লোকজন দিয়ে জমির মালিকদের উপর নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা আরো জানান, কোটি টাকা মূল্যের জমি প্রকাশ্য দিবালোকে দখল করে নেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হান্নান জানান, ওয়াকওয়ে নির্মাণে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। বৃষ্টির কারণে কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামত করা হবে। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো জমি দখল করা হয়নি। ২০১৩ সালের নদী সংরক্ষণ আইন মেনেই ভৈরব নদীর দু'পাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২