মোঃ মিজানুর রহমান পাটোয়ারী,
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ॥
বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে গিয়ে সে দিন পুলিশের অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জেলে যেতে হয়েছিল ২২ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীকে। তাদের অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে মৃত্যু বার্ষিকী পালন করার।
সেদিন ১৯৭৬ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণ করে আয়োজন করা হয়েছিল মিলাদ ও কোরআন তালাওয়াতের। আয়োজক ছিলেন তৎকালীন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল আলম আক্কাছ। সেদিন পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেই মৌলানাদের কোরআন খতম বন্ধ করে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে সবাইকে। আয়োজকরা ছিলেন সবাই আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকজন সাহসী নেতাকর্মী।
তৎকালীন হাজি আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে ( বর্তমানে শৈবাল হোটেল) বিভিন্ন মসজিদের ১২ জন ইমামগণ কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। ঐ সময় হঠাৎ ছাত্রাবাসটি ঘিরে ফেলে তৎকালিন ভৈরব থানার পুলিশ সদস্যরা। ছাত্রাবাসে ঢুকেই ২২ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে সাবাইকে লাঠিপেটা করে। এসময় ফখরুল আলম আক্কাছ পুলিশের উপস্থিতির কারন জানতে চাইলে তাকে বেধরক পেটানো হয়। পরে তাদেরকে কোমড়ে রশি দিয়ে বেধে থানায় নিয়ে গিয়ে চালায় অমানুষিক নির্যাতন।
পরদিন ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কিশোরগঞ্জ মহকুমা আদালতে প্রেরন করে। সেখান থেকে বিভিন্ন মেয়াদে করাভোগ করে সবাই মুক্তি পেলেও মুক্তি পাননি সেদিনের নেতৃত্ব প্রদানকারী যুবনেতা ফখরুল আলম আক্কাছ। পরে তাকে ময়মনসিংহ জেলহাজতে প্রেরন করে। সেখান থেকে ১বছর পরে তিনি মুক্তি পান।
সেদিনের নেতৃত্ব প্রদানকারী যুবনেতা এডভোকেট ফখরুল আল আক্কাস বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। যে কারনে ঔদিন এই কর্মসূচী নিয়েছিলাম। যদি দেশের সবখানে ভৈরবের মতো কর্মসূচী নিতো তাহলে হয়তো অনেক আগেই পরিস্থিতির পরির্বতন হতো। সেই সাহসীদের কথা ভৈরবে এখন আর কেউ স্মরণ করেনা। ২২ জনের মধ্যে অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুঃখে কষ্টে মারা গেছে।
সেদিনের গ্রেফতারকৃত ছাত্রলীগ কর্মী ( বর্তমান ভৈরবের সিনিয়র সাংবাদিক ) আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৬ সালে সামরিক সরকারের ভয়ে তখন এদেশের কেউ বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারন করতনা। সেসময় আমরা ২২ জন প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। এখন আওয়ামী লীগের নেতারাসহ কেউ আমাদের কথা মনে করেনা।
সেদিনে হোস্টেলে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী রসরাজ সাহ বলেনে, ঘটনার দিন পুলিশের নির্যাতনের কথা আজও ভুলতে পারিনা। তখন সামরিক সরকারের এতটা ভয় ছিল এদেশে বঙ্গবন্ধুর কোন অনুসারী বা ভক্ত রাখা যাবেনা। তৎসময়ে আ,লীগের বড় বড় নেতারা সামরিক সরকারের ভয়ে পালিয়ে ছিল। আর আমরা সাহসীকতার সাথে সেদিন আয়োজনটি করেছিলাম।
সে দিনের ঘটনায় জেলে যাওয়া ( বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা ) বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন জানান,বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে মিলাদ পড়াতে গিয়ে আমরা জেলে খেটেছি,অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি মনে হলে এখনো আনন্দ লাগে ।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮