মামুন মিঞা
চারদিকে গাঢ় সবুজ প্রকৃতি- খোলামেলা মাঠ- এর মধ্যে ফসলি জমি ঘেঁষে তৈরি করা খোলামেলা চারপাশ,নেই চিমনি, অর্ধগোলাকার বড় বড় ১৭ টি চুল্লি থেকে বের হচ্ছে "কালো ধোঁয়া । এই ধোঁয়া থেকে পাওয়া যাচ্ছে অসহনীয় দুর্গন্ধ। চুলার পাশে পোড়ানোর অপেক্ষায় স্তূপ করে রাখা কয়েক হাজার-হাজার মণ কাঠ। সম্প্রতি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের দরি সহস্রাইল গ্রামে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বোয়ালমারী দরি সহস্রাইল অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা।
বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ কেটে এসব চুল্লিতে কয়লা তৈরির জন্য কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য। একইসঙ্গে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থায় অবৈধ এসব চুল্লি উচ্ছেদের দাবি স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্টদের দাবি-প্রশাসনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে । অথচ এসব কয়লা কারখানা পরিচালনায় প্রশাসনের কোনো অনুমোদন নেই।
জনবসতি এলাকায় জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করায়-পাশ থাকা উর্বর জমিতে ফসল উৎপাদনে ব্যহত হচ্ছে।অনেক প্রতিকূল পরিবেশে ফসল উৎপাদন করতে হয় কৃষকদের।
স্থানীয়রা জানানঃ-যখন কয়লা তৈরি শুরু হয়,চিমনি না-থাকার কারণে এবং চারপাশে খোলামেলা হওয়ায় কারখানার সৃষ্টি ধোঁয়ায় চারপাশে অন্ধকার হয়ে যায়।দম নেওয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না।বিশেষ করে শিশু বাচ্চা ও যাদের শ্বাসকষ্ট অর্থাৎ হাঁপানি রোগ রয়েছে,তাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
এছাড়াও কারখানা কেন্দ্রীক এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তারা কিছু বলতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশও হয়েছে। অনেকে সরেজমিনে দর্শনও করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।
তারপরও এলাকাবাসী চায় প্রশাসন এসব চুল্লি উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে এলাকায় বসবাসরত সাধারন মানুষের জন্য স্বস্তির ব্যবস্থা হবে বলে জানায় একজন শিক্ষক ।
স্থানীয় আরও এক ব্যক্তি বলেন- চুল্লি মালিকরা কারও কথার তোয়াক্কা করে না। রাস্তার পাশে কয়লা তৈরির কারখানা স্থাপন করে সারাদিন খোলা জায়গায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন।
বিভিন্ন গাছপালার মড়ক দেখা দিয়েছে এবং গাছের ফল-মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন- হাজার হাজার টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা না ভাবছে পরিবেশের কথা, না জনস্বাস্থ্যের কথা।
একই গ্রামের আরও এক ব্যক্তি বলেন- এসব চুল্লিতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির ব্যবসা এর আগে আর কোথাও দেখেননি । তাই এটা বৈধ নাকি অবৈধ, তাঁরা জানেন না। এতে পরিবেশের ও মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
কারখানা দেখভালের দায়িত্বে থাকা মিলন বলেন,কারখানাটি খুলনা এলাকার সানাল নামে এক ব্যক্তির,কিন্তু জায়গার মালিক আমি।আমি জায়গা ভাড়া দিয়েছি।
উপজেলা বন কর্মকর্তা-দ্বীন মোহাম্মদ ইসলাম বলেন,আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি।এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ,বিষয়টি নির্বাহী কর্মকর্তা বোয়ালমারীকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর উপপরিচাকে বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও-বোয়ালমারী বলেন-আমাকে বন কর্মকর্তা বোয়ালমারী- আমাকে জানিয়েছেন।আমি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮