প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ৯:১১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ৭:০৮ পি.এম

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে কঠোর নির্যাতন, নিঃসঙ্গতা ও নানা ধরনের অত্যাচারের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করা হলেও তিনি পিছু হটেননি। বরং দেশের গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর অবিচল থেকেছেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজাপুর সদর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, আজ তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেশের মানুষ তাঁর জন্য দোয়া করছে, আমরাও আজ দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছি। সকলে তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন—তিনি যেনো আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি—আমাদের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন—এই দোয়াই আমরা করি।
তিনি বলেন, এদেশে এখনো খালেদা জিয়াকে দরকার, এদেশে এখনো তারেক রহমানকে দরকার। দেশের মানুষ তাদের প্রতি এতটাই আস্থাশীল যে গণতন্ত্রের জন্য তারা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। এটাই প্রকৃত দেশপ্রেম—আর আমরা সেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন আরও সুস্থ থাকেন, আরও দিন বেঁচে থাকেন, এবং তারেক রহমানকে দেশের ভবিষ্যৎ পরিচালনার দিকনির্দেশনা দিয়ে যেতে পারেন—এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। দেশের মানুষ যাতে আর নির্যাতনের শিকার না হয়, দেশের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হয়—এই মহান লক্ষ্য নিয়েই খালেদা জিয়া সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন জামাল।
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ কোটি মানুষ আজ আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছি। আমরা দোয়া করি—আল্লাহ যাঁর দোয়া কবুল করেন তাঁর উছিলায় হলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্ণ সুস্থতা দান করুন এবং আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।”
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ তুলে রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতারা যখন বিভিন্ন জায়গায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন, তখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে—জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা না গেলে তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে আটক করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার পরিকল্পনা হয়।
তিনি জানান, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই সন্তানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানকে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে লেখা ছিল—“আপনি যদি আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে আপনার স্ত্রী-সন্তানকে ফেরত পাবেন।” জিয়াউর রহমান দৃঢ় ভাষায় জবাব দেন—“আমরা যে যুদ্ধে নেমেছি, সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো। আমার স্ত্রী-সন্তানের কোনো ক্ষতি হলে পাকিস্তানের ১৬ লাখ সেনার কেউই সুস্থভাবে ফিরতে পারবে না।”
জামাল বলেন, এরপর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে এক-এগারোর যে অধ্যায়—আমরা তা ভুলে যাইনি। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন সরকারের সময়েও একই পদ্ধতিতে বেগম খালেদা জিয়ার দুই সন্তানকে জিম্মি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখনকার সেনাবাহিনী প্রধান পর্যন্ত বলেছিলেন—“আপনি দুই সন্তানকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করুন, তাহলেই আপনাদের ভালো থাকবে।” কিন্তু খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের মতোই দৃঢ় অবস্থানে বলেছিলেন—“দেশের মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকারের জন্য আমি সন্তানদের কষ্ট মেনে নিলাম, কিন্তু দেশ ছেড়ে যাব না।”
তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জিয়া পরিবার নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস আমাদের ওপর দায়িত্ব দেয়—গণতন্ত্র রক্ষার পথকে আরও শক্তিশালী করার, এবং জাতীয় নেতৃত্বকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিকে আরও জোরালো করার। তারেক রহমান যেন নিরাপদে দেশে ফিরে এসে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন—এই আমাদের সবার প্রত্যাশা। দোয়া মাহফিলে রাজাপুর উপজেলার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।