রাবি প্রতিনিধি।।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ফোকলোর বিভাগের নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে আকস্মিক হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে ফোকলোর বিভাগ এক কর্মসূচীর মধ্যমে এ দাবি জানান তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী, বিভাগ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের সামনে ফোকলোর বিভাগ নবীন বরণ ও বিদায় শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় পেছনের দর্শকসারিতে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী সৌমিক ও আতিকের নেতৃত্বে কয়েকজন প্লাস্টিকের চেয়ার ভাংচুর শুরু করেন। পরে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করলে কয়েকজন পালিয়ে যায়। তবে সৌমিক ও আতিককে আটক করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে দুজনকে বিভাগের অফিসে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে যায় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি আটককৃতদের প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে বের করে আনেন। অভিযুক্ত সৌমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। এছাড়া আতিক একই সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
কর্মসূচিতে ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, গতকাল বিভাগের অনুষ্ঠানে যে হামলা হয়েছে সেখানে আমাদের দুইজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ফোকলোর বিভাগ বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা করে। গতকালকের এই আক্রমণ, বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ওপর আক্রমণ। এর সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। যদি কোনো অশুভ শক্তি সাংস্কৃতিক চর্চাকে ব্যাহত করতে চায় এবং এই ঘটনা যদি হয় তার বোনা বীজ। তবে এই বীজকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার দাবি জানাই।
অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী বলেন, আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে বলেই আমরা এখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কারা হামলা চালাতে পারে? পেশি শক্তি ছাড়া তারা কীভাবে এ কাজ করে? ঘটনার নেপথ্যে যারা আছে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা এই ঘটনা নিয়ে সংকিত। আজ ফোকলোর বিভাগের অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে কাল অন্য কোনো বিভাগে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগের উপর হামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্ক। যত শক্তিশালী পেশিদর ক্ষমতা হোক না কেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ক্যাম্পাস কোনো সংগঠনের না হয়ে ক্যাম্পাস হোক সকলের। অচিরেই কার্যকরী তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অপকর্মের বিচার হয় না। শুধু তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু তার কোনো ফল বের হয় না। আমরা চাই অন্তত এই ঘটনার বিচার হোক। যে দুজন সন্ত্রাসী ছাত্রকে আমরা ধরেছিলাম, একটা ছাত্র সংগঠন তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আমাদের দুইজন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো। একজন শিক্ষক কীভাবে আরেক শিক্ষককে হুমকি দেয়? বিশ্ববিদ্যালয় কি কাউকে জায়গা লিখে দিয়েছে? এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়া উচিত।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় বিভাগের অনুষ্ঠানে যে ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। কিন্তু বহিরাগত এবং ভেতরের কিছু সন্ত্রাসী পরিবেশ নষ্ট করে। আমরা কাউকে চিহ্নিত করতে বলি নাই, আমরা দুজনকে চিহ্নিত করেছি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সৌমিক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আতিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে যথোপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক আমিরুল ইসলাম। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল আহসান, অধ্যাপক আকতার হোসেন, অধ্যাপক রওশন জাহিদ, অধ্যাপক অনুপম হীরা মণ্ডল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আকরাম উল্লাহ প্রমুখ। এসময় বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮